জুমবাংলা ডেস্ক : লৌকিক এবং অলৌকিক গল্পের রশদ নিয়ে প্রায় ৪৪০ বছর ধরে মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘খেরুয়া মসজিদ’। মসজিদটি বগুড়া শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলার খন্দকারটোলা গ্রামে অবস্থিত।
প্রাচীণ এই মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক গল্প। এক সময় স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের অনেকেই বলতেন এমনকি এখনো অনেককেই বলতে শোনা যায়, এই মসজিদটি নির্মাণ করেছে জ্বীনরা। তারাই মসজিদটি রাতারাতি তৈরি করেছে।
তবে আধুনিক মানুষজন এসব গল্প মানতে নারাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খেরুয়া মসজিদটি ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের ছেলে মির্জা মুরাদ খান কাকশাল নির্মাণ করেন। তবে মসজিদটির নামকরণ নিয়ে সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। খেরুয়া মসজিদের ইতিহাস এবং গল্প যেটাই হোক, মসজিদটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
জানা গেছে, মসজিদটি সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত। মসজিদর সামনে অংশে রয়েছে আয়তাকার মাঠ আর মসজিদের চতুর্দিকে রয়েছে তাল, নারকেল, আম এবং কদমগাছের সারি। প্রাচীণ এই মসজিদটি টিকে আছে চার কোণের প্রকাণ্ড আকারের মিনার আর চওড়া দেওয়ালে ভর করে। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা বিশিষ্ট মসজিদটির বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট এবং প্রস্থ ২৪ ফুট। ভেতরের দিকের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট ও প্রস্থ ১২ ফুট। আর মসজিদের চারিদিকের দেওয়ালের পুরুত্ব ৬ ফুট।
এই মসজিদ নির্মাণে ইট, চুন ও শুড়কি ছাড়াও বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের চারকোনায় চারটি মিনার ও পূর্ব দেওয়ালে তিনটিসহ উত্তর-দক্ষিণে আরও দুটি দরজা রয়েছে। আর পশ্চিম দেওয়ালে আছে তিনটি কারুকার্য করা মেহরাব। এছাড়া ধনুকের মতো বাঁকা কার্নিশের তলায় সারিবদ্ধ খিলান আকৃতির প্যানেলের আছে চমৎকার অলংকরণ।
ইটের বিন্যাস ও খাড়া প্যানেলের মাধ্যমে নান্দনিক বৈচিত্র্য তৈরি করা হয়েছে। মিনার, গম্বুজ ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনি এবং ফুল-লতা-পাতার নকশা পুরো মসজিদটিকে দিয়েছে বিশেষ স্বতন্ত্রতা। মসজিদের সামনের দেওয়ালে স্থাপিত ফার্সি শিলালিপি।
মসজিদ সম্পর্কে স্থানীয় এক প্রবীণ বলেন, তার যে বয়স তারও কয়েকগুণ বেশি বয়স মসজিদটির। বাদশা মুরাদ খানের আমলে আব্দুস সামাদ নামের এক ব্যক্তি ছিলেন। যিনি ধানের খড় বিক্রি করতেন। তিনি খড় বিক্রির টাকা দিয়ে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। আর এই জন্য মসজিদটির নাম ‘খেরুয়া মসজিদ’। সে সময় একটা যুগ ছিলো বলে জানি, যখন মানুষ জ্বীন-পরীদের দ্বারা কাজ করে নিতো। তো আব্দুস সামাদ ফকিরও হয়তো জ্বীন-পরীদের দিয়েই মসজিদটি তৈরি করে নিয়েছেন! যে কারণে রাতারাতি মসজিদটি তৈরি হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি হায়দার আলী খন্দকার বলেন, মসজিদের ইতিহাস এবং লোকমুখে আমরা যতটুকু জানি, জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশালের অর্থায়নে সূদুর আরব থেকে আসা আব্দুস সামাদ ফকির নামে এক ব্যক্তি মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আব্দুস সামাদ ফকির অনেক কামেল ব্যক্তি ছিলেন। তার সঙ্গে কবুতর কথা বলতো। মসজিদ বানানোর আগে দুটো কবুতর তাকে বলে, আপনি মসজিদ বানাচ্ছেন আমাদেরও ইবাদত করার জায়গা দেন। তখন তিনি বলেন, না তোমাদের জায়গা দিলে নানা অসুবিধা হবে। এরপরেও আলোচনার পর কবুতরদের মসজিদের দক্ষিণ উত্তর ও পশ্চিম এই তিন পাশে থাকার জায়গা করে দেন। এরপর সেখানে নামাজ আদায় হতো। তবে এক সময় মসজিদটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পরে ১৯৫৬ সালে মসজিদটি সরকারিভাবে পুরাকীর্তি হিসেবে মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে মসজিদ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে আওতায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরও বলেন, মসজিদের সামনে যে কবরটি রয়েছে সেই কবরটি আব্দুস সামাদের বলে ধারণা করা হয়। এখন মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়। ঈদের জামাতও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মসজিদে তিনটি কাতারে ৯০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে ৯০ জনের বেশি হলে নামাজ পড়তে অসুবিধা হয়। কারণ বাইরে বারান্দা বা নামাজের জায়গা নেই। তবে জুম্মার দিন এবং ঈদের জামাতে মাঠে চট বিছিয়ে নামাজের জায়গা তৈরি করা হয়। গত দু’বছর ধরে বৃষ্টি হলে মসজিদের ভেতর পানি পড়ে। এতে মসজিদটি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা দরকার।
মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন কেয়ারটেকার রয়েছেন। তিনি সরকারিভাবে বেতন পান। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুসাঙ্গিক খরচ আমরা কমিটির মাধ্যমে চালাই বলেও জানান মসজিদ কমিটির সভাপতি।
খেরুয়া মসজিদের অলৌকিকতার বিষয়টি স্বীকর করে মসজিদের কেয়ার টেকার আব্দুস সামাদ প্রামাণিক বলেন, তার বাড়ি শেরপুরেই। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও লোকমুখে এমন কথাই শুনে আসছেন। আর মসজিদে দিনে ২৫-৩০ জন দর্শনার্থী আসেন। ঈদের সময় সেটি ২ শতাধিক হয়ে যায়।
আম্রপালি ও নিরাহুয়ার বেডরুম ভিডিও দেখে নিয়ন্ত্রণ হারাবেন আপনিও
বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ড. আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, আমি মাত্র দেড় মাস হলো বগুড়ায় দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যেই ক’দিন আগে মসজিদটিতে আমি গিয়েছিলাম। বেশ কিছু সমস্যা চোখে পড়েছে। মসজিদটিকে সংস্কারের জন্য আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবনা দেবো।
সূত্র : রাইজিংবিডি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।