জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার ওপরে উঠলে আবার ভারত থেকে ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) অনুমোদন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আইপি বন্ধে পেঁয়াজের দামে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান এএইচএম সফিকুজ্জামান এ কথা জানান।
প্রসঙ্গত, দেশীয় কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ফলে সরবরাহ কমায় আবারো বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
জানা গেছে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) মেয়াদ ছিল ৫ মে পর্যন্ত। কিন্তু পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ছয়দিন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ ছিল। বন্দর দিয়ে সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল ৬৮টি ট্রাকে ১ হাজার ৯০২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এরপর ঈদের ছুটি শেষে ৭ মে বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে আমদানিকৃত পেঁয়াজের মজুদ কমেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। ঈদের আগে বন্দরে পেঁয়াজ ১৪-১৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসায় বাংলাদেশের কৃষকরা দাম পাচ্ছে না। এজন্য আমরা ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) একটু সময় বন্ধ রাখছি। যদি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার ওপরে ওঠে তাহলে আবার আমরা আইপি খুলে দেবো। এখনতো বাংলাদেশে পেঁয়াজের পিক সিজন। ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আসতেছে সেটা নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। পেঁয়াজের দাম অনেক কমে গেছে। এজন্য ভারতের পেঁয়াজ আনার আইপি বন্ধ রেখেছি। বাংলাদেশে আবার যদি দাম ৪০ টাকার একটু ওপরে যায় তাহলে আবার খুলে দেবো।
আইপি বন্ধ হওয়ায় দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইপি বন্ধে পেঁয়াজের দামে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ বছর আমাদের অনেক পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তারপরও ৫ থেকে ৬ লাখ টন আমদানি করতে হয়। আমাদের মূল ক্রাইসিস দেখা দেয় সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবর মাসে।
সামনে ঈদুল আযহা সে সময় তো অতিরিক্ত ২ থেকে ৩ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকে এ মুহূর্তে ভারতে থেকে আমদানি বন্ধ করলে দেশে তো ক্রাইসিস তৈরি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের আগে পেঁয়াজের কোনো ক্রাইসিস হবে না। আমাদের প্রচুর পেঁয়াজ হয়েছে। পেঁয়াজ লাগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। তখন যদি দেশে ক্রাইসিস হয়। তাহলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা নতুন করে ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) দেওয়া হবে।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত দেশের চাহিদা মেটাতে গড়ে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হতো। এর ৯০ শতাংশই আসত ভারত থেকে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে দাম হু-হু করে বাড়তে থাকে। ওই বছরের নভেম্বর নাগাদ পেঁয়াজের দাম ২৮০ টাকায় ওঠে। বাজার সামাল দিতে তাৎক্ষণিকভাবে আকাশপথে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে হয় সরকারকে। পরের বছর দাম কমলেও ৭০ টাকার নিচে নামেনি খুচরা বাজারে। এই বাড়তি দামের কিছুটা দেশের কৃষকরাও পান। গত দুই বছর কৃষক কেজিতে ৫০ টাকা দাম পেয়েছেন বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে। তাদের হিসাবে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ টাকা। তাই ২৫ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কৃষকের লাভ থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একইসঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ। কৃষক যাতে দাম ভালো পান, সেজন্য উৎপাদন মৌসুমে আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। দেখা গেছে, ভালো দাম পেয়ে কৃষক পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হওয়ায় গত অর্থবছরে এক লাফে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছিল ৮ লাখ টন। এর পাশা পাশি উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান কমাতে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। অনাবাদি ও চরের জমি পেঁয়াজ চাষে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভালো বীজ সহজলভ্য করতে হবে এবং উচ্চফলনশীল জাতগুলোর চাষ বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে। এর পরও বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছে। কৃষি বিপণন ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে আট থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হতো। কিন্তু গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৫.৫২ লাখ মেট্রিক টন। তার আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৫.৭১ টন। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বছরে পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করে। আর মালয়েশিয়া করে ৫.০৫ লাখ টন এবং যুক্তরাজ্য করে ৩.৫৯ লাখ টন। সে হিসাবে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানিতে এখন শীর্ষ দেশ।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২১ সালে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩৫ লাখ টন। চলতি ২০২১-২২ সালের জন্য চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টন। আগামী বছর এই চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৩৬ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে তিন লাখ টনের ওপরে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩৩.৬২ লাখ টন। তাদের হিসাবে, পেঁয়াজের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ২৫-৩০ শতাংশ। সে হিসাবে নিট উৎপাদন প্রায় ২৩.৫৩ লাখ টন। রান্নার সময় ফেলে দেওয়া অংশ ও নানাভাবে হওয়া অপচয় বাদ দিলে দেশে নিট চাহিদা ২৬ লাখ ৬১ হাজার টন। অর্থাৎ দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আড়াই থেকে তিন লাখ টন।
২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পেঁয়াজ চাষের জমির পরিমাণ ৪১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১-১২ সালে দেশে ১.৮০ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। সর্বশেষ গত অর্থবছর দেশে ২.৫৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন কৃষকরা।
এদিকে ২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করে। ২০২১-২৩ সালের এই রোডম্যাপে পেঁয়াজ ঘাটতি ১১ লাখ টন ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণ করে। তাতে পেঁয়াজ ঘাটতির জন্য মানসম্মত বীজের অভাবকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশে মোট এক হাজার ১০০ টন বীজের প্রয়োজন। সরকারি ভাবে পাঁচ-ছয় টন, বেসরকারি ভাবে ৫০-৬০ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা হয়। বাকিটা কৃষক উৎপাদন করেন, যা পুরোপুরি মানসম্মত নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।