জুমবাংলা ডেস্ক : শাহনেওয়াজ বিশ্বাস সেজান। রাজশাহীর একটি সরকারি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে আম বিক্রি করে আসছেন। এ মৌসুমেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের বাগানিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ‘ম্যাংগো ডটকম’ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে আম বিক্রি করছেন তিনি।
শুধু সেজান নন, রাজশাহীতে তার মতো অনেক নতুন উদ্যোক্তা অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি করছেন। গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অনেক ব্যবসায়ী এখন অনলাইনে ঝুঁকছেন। ফলে ভরা মৌসুমে জমে উঠেছে অনলাইন আমের বাজার।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন আম অনলাইন বাজারে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
বাকি আমের ৩০০ মেট্রিক টন চুক্তিবন্ধ চাষিরা রপ্তানি করবেন। ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আম গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমেই বিক্রি হবে। তবে প্রতিবছরই অনলাইন আম বাজার ব্যবস্থায় নতুন নতুন ক্রেতা ও বিক্রেতার আগমন ঘটছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
শাহনেওয়াজ বিশ্বাস সেজান জানান, তার অনলাইনে আম ব্যবসা বেশি দিনের না। দুবছর থেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। অনলাইন মার্কেটে আমের চাহিদা ভালো থাকে। গত কয়েক দিনে প্রায় এক হাজার ৩২৫ কেজি আম অনলাইনে বিক্রি করেছেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা, ২৮ মে থেকে হিমসাগর ও ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া আম নামানো শুরু করেন বাগানিরা। তবে ২৫ মে এর কিছুদিন আগে থেকেই অনলাইনে আমের অর্ডার নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন অনলাইন বাজার জমজমাট।
অনলাইন বাজারের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনলাইনে স্থানীয় গুটি জাতের আমের তেমন চাহিদা নেই। এখানে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরশাপাত বা হিমসাগর, লক্ষণভোগ, রানিভোগ, ফজলি এসব আমের অর্ডারই সাধারণ এসে থাকে।
‘ন্যাচারাল আম ও ফ্রেশ ফুড রাজশাহী’ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আম বিক্রি করছেন শাহিন আহমেদ। এ মৌসুমে তিনি ৬৪টি আম বাগান কিনেছেন। তিনি বিগত ৬-৭ বছর থেকে আমের গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থায় আম বিক্রি করে আসছিলেন। ২০২০ সালে প্রথম অনলাইন বাজারে প্রবেশ করেন তিনি। বর্তমানে অনলাইন-অফলাইন উভয় মাধ্যমে আম বিক্রি করছেন।
শাহিন আহমেদ বলেন, অনলাইনে আমের চাহিদা ব্যাপক। আর গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থার চেয়ে অনলাইন বাজারে লাভ বেশি। গ্রাহকরাও কম দামে ভালো আমের নিশ্চয়তা পান। কোনো গ্রাহক একসঙ্গে ১০ মণের অধিক আম নিলে পাইকারি দামে কিনতে পারেন।
শাহিন আহমেদ জানান, তিনি সোমবার ক্ষিরশাপাত আম ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। ল্যাংড়া ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা ও আম্রপালি ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন।
তবে খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বেশি। আর অনলাইন বাজারে পরিবহণ খরচটা অনেক বেশি। প্রতিকেজি আম পরিবহণে ঢাকার মধ্যে ১২ থেকে ১৪ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১৬ থেকে ১৮ টাকা কুরিয়ার চার্জ পড়ছে। এছাড়া প্যাকিং ও শ্রমিক খরচসহ প্রতিকেজি আমে প্রায় ২৫ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ছে বলে জানান এই অনলাইন বিক্রেতা।
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বোয়ালিয়া অফিসের ইনচার্জ মাসুদ শরীফ জানান, আম পরিবহণে প্রতি কেজিতে রাজশাহী থেকে ঢাকার মধ্যে ১২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১৬ টাকা করে নিচ্ছেন তারা। এবার তাদের কুরিয়ারে গত বছরের চেয়ে আম কম যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজশাহীর স্থানীয় বাজারে সোমবার ক্ষিরশাপাত আম ২ হাজার ৮০০ টাকা, রানিভোগ ২ হাজার ৪০০, হাড়িভাঙা ও আম্রপালি ২ হাজার ৮০০ এবং ল্যাংড়া ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া গোপালভোগ আম কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্ততরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) উত্তম কুমার কবিরাজ জানান, এখন অনলাইনের মাধ্যমে আমের বেচাকেনা বেশি। গতানুগতিক বাজার ব্যবস্থায় যুক্ত ব্যবসায়ীরাও এখন অনলাইনমুখী হচ্ছেন। নতুন নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছেন। করোনার মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী অনলাইনে আম বিক্রি করেছেন। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। সবমিলিয়ে অনলাইন আম বাজার এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনলাইনে আমের চাহিদা বেশি। এখন প্রায় ২০ শতাংশ আম অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে, আগামীতে আরও বাড়বে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।