জুমবাংলা ডেস্ক : আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের চিনির বাজার। সপ্তাহ ব্যবধান কেজিতে চিনির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে দৃষ্টি হয়েছে সংকট। আবার বাড়তি দাম দিয়েও ভোক্তারা খুচরা বাজার ঘুরে চিনি কিনতে পারছেন না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দামের কারণে তারা চিনি তুললে সাহস পাচ্ছেন না।
এদিকে হঠাৎ করে চিনির বাজারে অস্থিরতার কারণে ভোক্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
প্রতিবছর রমজান আসলে চিনির চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এবারো এর ব্যতিক্রম ছিল না। রমজানের শুরু থেকে চিনির দামও বাড়তে থাকে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার গত ৮ এপ্রিল চিনির দাম নির্ধারণ করে। শুধু তাই নয় ভোক্তা অধিকার বাজারে তদারকি শুরু করলেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১২০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
তবে ঈদ পরবর্তী চিনির দাম আরেক দফায় বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই সময় চিনির বাজার অস্থির হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিনি কিনতে এসে দাম শুনে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ি দোকানে নতুন করে চিনি তুলছেন না। আগের চিনি মজুদ থাকায় সেটাই বিক্রি করছেন। দামের কারণে বিক্রিও অনেক কমেছে বলেও জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে মিরপুরের গাউসে চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম শওকত বলেন, ঈদের আগে ১২০ ও ১৩০ টাকা দরে চিনি বিক্রি করেছি। ঈদের পর ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। চিনি ১৩২ টাকা করে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও ঘাটতি তো রয়েছে।
তিনি বলেন, চিনি বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। পাইকারি বাজারে দাম নাকি আরও বেড়েছে। মজুদ শেষ হয়ে গেলে আপাতত চিনি আনবো কিনা সেটা ভাবতে হবে।
বাজার সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছে। কোনো পণ্যের দাম কমছে নাম। নিজের চাহিদাগুলো দিনে দিনে সংকুচিত করছি বলে জানান শেওড়াপাড়া বাজারে বাজার করতে আসা নাসরিন বেগম।
তিনি বলেন, ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে চিনি ছিল। তখন পরিবারে ২ থেকে ৩ কেজি চিনি লাগতো। অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে আজ এক কেজি চিনি কিনলাম। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে।
দাম বাড়ার কারণে চিনি বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে জানিয়েছেন মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মো. সহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ৬ হাজার টাকার ৫০ কেজির বস্তা এখন ৬ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। ১৪০ টাকা দরে চিনি বিক্রি করছি। দাম বাড়ার কারণে চিনি বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। যারা আগে এক কেজি চিনি কিনতেন, তারা আধা কেজি কিনছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে তৈরি হওয়া ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে গত বছরের জুলাই–আগস্ট থেকে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দেয়। এরপর আরও দুই দফা দাম বাড়ায় সরকার। এরপরও বাজারে চিনির সংকট কাটেনি। বাজারে নতুন করে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি।
এদিকে চিনির দাম বাড়া নিয়ে গত ২ মে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বৃদ্ধির অনুপাতে দেশের খোলা বাজারে এর দাম বাড়েনি। তাই চিনি আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সংকট নিরসনে বেশি দামে চিনি আমদানি করা যাবে কি না জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি।
চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ মার্কিন ডলার। এই বাস্তবতায় সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চিনি আমদানিতে এলসি বা ঋণপত্র খুলতে ‘ভীতির সম্মুখীন’ হচ্ছে।
৬৭৫ ডলার দরে প্রতি মেট্রিক টন আমদানিতে চিনির মূল্য পড়ে প্রতি কেজি ১৩১ টাকা; যার মধ্যে রয়েছে সরকারের শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য কর বাবদ দাম কেজিতে ৩৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এ মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেও দেশের বাজারে খোলা চিনির দাম সে অনুপাতে না বাড়ায় অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চিনি আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিষয়টি সরকারের নজরে আনতে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই দামে চিনি আমদানি করলে বাজারে খুচরা মূল্য অনেক বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, উচ্চ দামে চিনি আমদানির পরে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পড়ে যায়, তখন ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা আছে। সরকারের হাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
অন্যদিকে দেশের এক কোটি নিম্নবিত্ত পরিবারের চিনির চাহিদা মেটাতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য তুরস্ক থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি কিনছে সরকার। গত বুধবার (৩ মে) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়।
তুরস্ক থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি আসলে দেশের চিনির চাহিদা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দামের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এই সংকট আগামীতে আরো বাড়বে। তাই সরকারকে এই বিষয়ে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মনে করেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।