জুম-বাংলা ডেস্ক : দেশে প্রতিদিন পাঁচ কোটি ডিমের চাহিদা থাকলেও বন্যার কারণে এখন উৎপাদন কমে চার কোটিতে নেমে এসেছে। অন্যদিকে বাজারে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় চাপ পড়েছে ডিমের ওপর। যে কারণে মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস-২০২৪। ‘ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগমুক্তি’ স্লোগান সামনে রেখে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আজ পালন করছেন দিবসটি। ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ডিম দিবস।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা রয়েছে পাঁচ কোটি পিস। বন্যার আগে এই উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ পিস। সেখান থেকে বন্যায় ৫০ লাখ পিস ডিমের উৎপাদন কম হলেও সেটা ৫ কোটি ৮০ লাখ, যা চাহিদার তুলনায় বেশি।
কিন্তু বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্র্জি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, বন্যার আগে ডিমের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৫০ লাখ পিস। অর্থাৎ স্বাভাবিক উৎপাদনই চাহিদার চেয়ে কম।
ডিএলএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, বাজারে মাছ সবজির সরবরাহ কম, দামও চড়া। এ কারণে ডিমের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে, বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমাদের ডিমের উৎপাদন এখনো চাহিদার চেয়ে বেশি, যে কারণে আমরা আমদানি না করার বিষয়ে মত দিয়েছিলাম। তবে আমাদের ডিমের উৎপাদন আরো এক কোটি পিস বাড়ানো দরকার।
এদিকে আমদানির খবরে বাজারে ডিমের দাম কমলেও এখনো প্রতি ডজন ডিম ১৬৫-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সরকার বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি।
ডিএলএস বলছে, অপ্রত্যাশিত বন্যায় এখনো সেভাবে শীতকালীন সবজি বাজারে আসেনি। এ ছাড়া মাছ-গোশতের দামও বেশি। এ কারণে ডিমের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। বৃষ্টি পরিস্থিতি কেটে গেলে যখন শীতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সরকার গত কয়েক বছর ধরেই ডিমের উৎপাদন বেশি বলে প্রচার করে আসছে তবুও মাঝে মধ্যেই এই নিত্যপণ্যটির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সরকারের হিসেবে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৮০ লাখ পিস বেশি উৎপাদন এবং বেসরকারি হিসেবে প্রতিদিনের চাহিদার তুলনায় অন্তত এক কোটি পিস কম ডিম উৎপাদন হচ্ছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক করার বিকল্প নেই বলেই জানান উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ হিসেব তৈরি করেছে গত ৭ অক্টোবর। সে হিসেবে উঠে এসেছে, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল ও ময়মনসিংহ বিভাগ (শেরপুরসহ কয়েকটি জেলা বন্যাসহ চলছে) মোট ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ১৯টি। এই ১৯ জেলায় ৫৯১৯টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখান থেকে প্রায় ৫০ লাখ পিস ডিমের উৎপাদন কমেছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: সুমন হাওলাদার জানান, বন্যায় কয়েক হাজার খামার একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ডিমের সরবরাহ কমেছে। কিন্তু এ সময় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ডিমের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করায় বাজারে অস্থিরতা চলছে।
তিনি বলেন, আমদানি না করে সরকারের উচিত করপোরেটগুলোকে ধরা এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আবার উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা।
বিপিআইসিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডিমের উৎপাদনের ১৩.৯৬ শতাংশ বা ৬০ লাখ পিস সরবরাহ করে বড় প্রতিষ্ঠান। বাকি ৮৬.০৪ শতাংশ সরবরাহ আসে ক্ষুদ্র খামারি থেকে। এই হিসেব করা হয়েছে বন্যার আগের প্রতিদিনের ৪.৫০ কোটি পিস উৎপাদনের তথ্য থেকে।
এদিকে কম উৎপাদনে ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে আয়ের মানুষ। কারণ ঢাকার বাজারে শুধুমাত্র আলুর দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। তাছাড়া সব সবজিই এখন ১০০ টাকার আশপাশে, যা সাধারণ মানুষকে বেকায়দায় ফেলেছে। এ অবস্থায় মানুষ যে ডিমের ওপর নির্ভর করবে সেটাও অনেকটা নাগালের বাইরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।