আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানে যৌন সমস্যার সমাধান হিসেবে একটি ভিন্নধর্মী এবং বিতর্কিত পণ্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে—সান্ডার তেল। সমাজের কঠোরতা, নিষিদ্ধ ভায়াগ্রা এবং যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা না থাকার ফলে অনেকেই বিকল্প পথ খুঁজছেন। এই প্রেক্ষাপটেই সান্ডার তেল ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
Table of Contents
সান্ডার তেল: কীভাবে তৈরি হয় এবং কোথা থেকে আসে?
সান্ডার তেল মূলত তৈরি হয় ভারতীয় প্রজাতির একটি বিপন্ন গিরগিটি (Saara hardwickii) থেকে। রাস্তার হকার এবং স্থানীয় কবিরাজরা এটি ফুটপাতেই প্রস্তুত করেন। জীবন্ত গিরগিটির চর্বি ভেজে তৈরি করা হয় এই তেল। এরপর এতে যোগ করা হয় বিভিন্ন ভেষজ উপাদান যেমন—জিনসেং, শুকনো আদা, জাফরান ও দারুচিনি। অনেক সময় কস্তুরি হরিণের কস্তুরি সুগন্ধিও ব্যবহার করা হয়, যা একে আরও বিতর্কিত করে তোলে।
সান্ডার তেলের চাহিদা ও ব্যবহারের পদ্ধতি
এই তেল পুরুষাঙ্গে মালিশ করে ব্যবহার করা হয়। দাবি করা হয়, এটি পুরুষাঙ্গকে লম্বা, মোটা এবং শক্ত করে তোলে এবং যৌনমিলনের সময় দীর্ঘস্থায়ী উত্থান বজায় রাখে। ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস, এটি দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা সমাধান করতে পারে।
এই চাহিদার পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে পাকিস্তানে ভায়াগ্রা নিষিদ্ধ। এর ফলে, যৌন দুর্বলতার চিকিৎসা পদ্ধতি খোঁজার জন্য জনগণ বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পন্থা। ইসলামাবাদের ইউরোলজিস্ট ডা. আসিম খান বলেন, তার রোগীদের ৬০ শতাংশই এই ধরনের ভেষজ তেল ব্যবহার করেছেন।
অবৈজ্ঞানিক দাবির বিপরীতে চিকিৎসা সমাজের উদ্বেগ
চিকিৎসকেরা মনে করেন, এই তেলের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই ধরনের পণ্য ব্যবহারের ফলে লিভার, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে তা নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই। ডা. খান বলেন, প্রমাণভিত্তিক ওষুধ ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
যৌন সমস্যার মূল কারণগুলো—হরমোনজনিত সমস্যা, মানসিক চাপ, হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা ইত্যাদি। এগুলোর কোনো পরীক্ষা না করে কেবল সান্ডার তেল ব্যবহার করে কোনো স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়।
বাজার ও দামের ভিন্নতা
সান্ডার তেলের দাম স্থানভেদে ভিন্ন হয়। ছোট শিশির দাম ৩০০ রুপি থেকে শুরু হয়ে বড় বোতলের দাম পৌঁছে যায় ১০ হাজার রুপিতে। বিশেষ করে আদিবাসী এলাকায়, যেখানে চিকিৎসার সুযোগ সীমিত, সেখানে এই তেলের দাম অনেক বেশি।
একটি প্রামাণিক প্রতিবেদন অনুসারে, পাঞ্জাব প্রদেশ এই তেলের বৃহত্তম উৎপাদন ও বিক্রয় কেন্দ্র।
চোরাশিকার ও প্রাণী নির্যাতনের উদ্বেগ
সান্ডার তেলের ব্যবসার পেছনে রয়েছে একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতা। গিরগিটি শিকারের জন্য প্রতিনিয়ত চোরাশিকারি সক্রিয় থাকে। এই গিরগিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অফ নেচার (IUCN)-এর লাল তালিকাভুক্ত।
সিন্ধ ওয়াইল্ডলাইফ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে হাজার হাজার গিরগিটি উদ্ধার করা হয়েছে শিকারিদের কাছ থেকে। বন্য প্রাণী কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউই এই বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী নয়।
সামাজিক মনস্তত্ত্ব ও সংস্কৃতির ভূমিকা
নৃতাত্ত্বিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘পুরুষত্ব প্রমাণ করার মানসিক চাপ এবং যৌন সক্ষমতার ধারণাই এই পণ্যের চাহিদাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।’ সেক্স থেরাপিস্ট তাহিরা রুবাব বলেন, সমাজের চাপ পুরুষদের মানসিকভাবে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যায়, যেখানে তারা বিকল্প চিকিৎসার খোঁজ করে।
প্রতারণার শিকার অসংখ্য ভোক্তা
অনেকে বিশ্বাস করে এই তেল তাদের যৌন সমস্যা সমাধান করেছে, কিন্তু অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। ইসলামাবাদের এক সিভিল অফিসার ৪৫ হাজার রুপি খরচ করে কোনো ফল পাননি। এমন অনেক কাহিনি প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে।
আন্তর্জাতিক সাড়া ও পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ
কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী পাকিস্তানিরা এই তেলের খোঁজ করেন। এটি পাকিস্তান সরকারের জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ। যদিও ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি নজরদারি করছে, কিন্তু বাজার এখনও অনিয়ন্ত্রিত।
সান্ডার তেল বিষয়টি শুধু একটি তেল নয়, এটি পাকিস্তানের যৌন চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি প্রতীক। এটি যৌন সমস্যা, সামাজিক চাপে এবং প্রতারকের বাণিজ্যিক কৌশলের সংমিশ্রণ। এই সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য প্রমাণভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।
FAQs
- সান্ডার তেল কী? সান্ডার তেল হলো একটি ভেষজ তেল, যা গিরগিটির চর্বি এবং বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্রি হয়।
- এই তেল কি নিরাপদ? কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা না থাকায় এই তেল ব্যবহার নিরাপদ কিনা তা নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না।
- পাকিস্তানে কেন এই তেলের চাহিদা বেশি? ভায়াগ্রা নিষিদ্ধ হওয়া, যৌনতা নিয়ে লজ্জা এবং চিকিৎসা সংকট এই তেলের জনপ্রিয়তার কারণ।
- এই তেল কি স্থায়ী সমাধান দেয়? চিকিৎসকরা বলছেন, এটি সাময়িকভাবে উপকার দিতে পারে, তবে স্থায়ী সমাধান নয়।
- এই তেল কোথায় পাওয়া যায়? রাস্তার হকার এবং হাকিমদের দোকানে এটি সহজলভ্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।