ধর্ম ডেস্ক : মহান আল্লাহ আপন কুদরতে এই নিখিল ধারা সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে কিছু জিনিসকে কিছু জিনিসের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। সাতটি দিবস সৃষ্টি করেছেন, এর মধ্যে জুমার দিনকে অন্যান্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
জুমার ফজিলত ও গুরুত্বের তালিকায় উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র জুমার নামেই কোরআনে কারিমে একটি সুরা নাজিল হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনাবেচা ত্যাগ কর, এ-ই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ সুরা জুমা, আয়াত : ৯।
দরুদ পাঠ জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল এটি। কারণ, দরুদ পাঠ আল্লাহতায়ালার রহমত প্রাপ্তির এক বিশাল মাধ্যম, প্রশান্তি লাভের সহজ উপায়।
এটি এমন আমল যা সর্বদা কবুল হয়। কোরআন তিলাওয়াত করলে আল্লাহতায়ালা তা কবুল করতে পারেন, আবার কবুল নাও করতে পারেন। কিন্তু দরুদ শরিফ এমন একটি সর্বদা গ্রহণীয় আমল, যা পাঠ করলেই আল্লাহতায়ালা তা কবুল করে নেন।
নবীজি সা.-এর ওপর দরুদ পড়ার গুরুত্ব এর দ্বারাই সহজে অনুমিত হয় যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর ওপর রহমত বর্ষণ করেন আর ফেরেশতাকুল দোয়া করেন। হে মুমিনরা, তোমরা তাঁর ওপর বেশি বেশি দুরুদ পড়ো ও খুব সালাম পাঠাও।’ সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৬।
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবুল আলিয়া রহ. বলেন, সালাতুল্লাহ তথা আল্লাহর রহমত বর্ষণের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের কাছে নবীর প্রশংসা করা। আর ‘সালাতুল মালাইকা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফেরেশতারা নবীর জন্য রহমতের দোয়া করা।’ বোখারি।
বহু হাদিসে জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করার তাকিদ এসছে। হজরত আওস ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের দিবস গণনার মধ্যে জুমার দিন হলো শ্রেষ্ঠ। কেননা সেদিন আল্লাহতায়ালা আদমকে সৃষ্টি করেছেন আর এদিনেই তার মৃত্যু হয়েছে। এদিনই হবে ফুৎকার ও পুনরুত্থান। তাই তোমরা জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর।
কেননা তোমাদের পঠিত দরুদ আমার নিকট পেশ করা হয়।’ ইবনে মাজাহ : ১৬৩৬। হজরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমার ওপর জুমার দিন অধিকহারে দুরুদ পাঠ কর, কেননা সেদিন হলো সাক্ষ্য দিবস। ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। যে ব্যক্তি আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে তার দরুদ আমার কাছে পেশ করা হবে, সে দরুদ হতে ফারেগ হওয়া পর্যন্ত।
তিনি বলেন, আমি বললাম, আপনার ইন্তেকালের পরও আপনার কাছে পেশ করা হবে? তখন তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা জমিনের জন্য নবীগণের শরীর মোবারক হারাম করে দিয়েছেন। তাই তো আল্লাহর নবী জীবিত; রিজিকপ্রাপ্ত।’ ইবনে মাজাহ। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নুরের জ্যাতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল! কানজুল উম্মাল।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার ওপর দরুদ পাঠ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলো হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পড়ে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ শায়েখ জাকারিয়া (রহ.) ফাজায়েলে দরুদ কিতাবে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার পূর্বে ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।’ ৮০ বার দরুদটি পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ৮০ বছরের সওয়াব দেওয়া হবে।’ ফাজায়েলে দরুদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।