জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলা বর্ষবরণ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এ উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। বছরের প্রথম দিনের প্রথম সকালে সারা বছরের মঙ্গল কামনায় এ শোভাযাত্রা বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। আর এ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সরেজমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে দেখা গেছে, প্রতিবছরের মতো এ বছরও মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিতে বাঙালিরা যেন মুখিয়ে থাকেন। পুরো চারুকলাতেই উৎসবের আমেজ।
চারুকলার এক প্রান্তে চলছে শিল্পকাঠামো নির্মাণের কাজ, অন্য প্রান্তে চলছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য জলরং, সরাচিত্র, মুখোশ, পুতুল তৈরি ও বিক্রির কাজ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন মুখোশ, পেঁচা, ঘোড়া, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি বানানো হচ্ছে। অবয়বের কাজ প্রায় শেষ। এখন বাইরের ডিজাইনের কাজটা শুধু বাকি।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে কথা হয় চারুকলা অনুষদের ছাত্র শিমুল কুম্ভকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আইনি যে নোটিশ দেয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। এমন নোটিশ আমিও আপনাকে দিতে পারি। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। নির্ধারিত দিনের আগেই শেষ হয়ে যাবে আমাদের কাজ।’
শোভাযাত্রা কখন শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখের (১৪ এপ্রিল) দিন সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রার র্যালি, যা শাহবাগ মোড় হয়ে ঘুরে টিএসসি ও পরে আবার চারুকলায় ফিরে আসবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রতিবারের মতো এবারও প্রায় ১৫ দিন আগে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন। পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করতে আর মাত্র তিনদিন বাকি। তাই ছবি আঁকা, শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত আয়োজকরা।
এ ছাড়াও নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেবারই এ উৎসব সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। এরপর থেকে বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে এটি।
১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম ধারণ করে। পরে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করে এ শোভাযাত্রা।
এদিকে রোববার (৯ এপ্রিল) মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাজার বছর ধরে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বাঙালি জনগণ একে অপরের ধর্মকে সম্মান করে এই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে একটি কৃত্রিম কার্যকলাপ বাঙালি সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। মূলত এই কৃত্রিম উদ্ভাবিত মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে পহেলা বৈশাখের কোনো সম্পর্ক নেই।
নোটিশে বলা হয়, ‘মঙ্গল’ শব্দটি একটি ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট শব্দ। সব ধর্মের লোকজন তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে ‘মঙ্গল’ প্রার্থনা করে থাকেন। এখন এই মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দৈত্যাকৃতির পাখি, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২-ক-এর সরাসরি লঙ্ঘন। এটা দণ্ডবিধির (Penal Code) ২৯৫-ক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধও।
তাই নোটিশ পাওয়ার পর ‘অসাংবিধানিক, বেআইনি ও কৃত্রিম উদ্ভাবিত’ মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।