সেই স্কুল-কলেজের ইউনিফর্মের দিন পেরিয়ে এসে কি নিজেকে একটু অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করতে ইচ্ছে করে? অফিসের প্রেজেন্টেশনে, বন্ধুদের আড্ডায়, কিংবা প্রিয়জনের সাথে রেস্তোরাঁয় – প্রতিটি মুহূর্তই কি আপনার ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করে না? ভাবছেন, “স্টাইলিশ” হওয়া তো শুধু শিল্পী বা মডেলদের জন্যই? ভুল ভাঙুন আজই! পুরুষদের ফ্যাশন টিপস মানে জটিল রানওয়ে ট্রেন্ড নয়, মানে আপনারই স্বাচ্ছন্দ্য ও আত্মবিশ্বাসকে উজ্জ্বল করে তোলা। ঢাকার গরমে শীতল, খুলনার বাতাসে স্বস্তিদায়ক, কিংবা সিলেটের পাহাড়ি আবহাওয়ায় উপযোগী – আপনার পোশাকই হতে পারে আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। সঠিক গাইডলাইন পেলে যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন নিজের জীবনের স্টাইল আইকন!
পুরুষদের ফ্যাশন টিপস: ভিত্তি গড়ে তোলা (মৌলিক নীতিসমূহ)
ফ্যাশনে জটিলতা নয়, ভিত্তি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভবন যেমন শক্ত ভিত ছাড়া দাঁড়ায় না, স্টাইলও তেমনি কিছু মৌলিক নীতি ছাড়া পূর্ণতা পায় না।
ফিটিং: আপনার পোশাকের আসল জাদু
আপনার দেহই হলো সেরা ক্যানভাস। পোশাকের ফিটিং সঠিক না হলে দামি ব্র্যান্ডও ফালতু দেখাবে।
- কাঁধ ও বুক: শার্ট বা জ্যাকেটের সিম ঠিক কাঁধের হাড়ের উপর পড়তে হবে। বুকের অংশে অতিরিক্ত টান বা ঢিলা হওয়া যাবে না। ঢাকার নিউমার্কেটের টেইলরদের কাছেও সেলাই করিয়ে নিতে পারেন পছন্দের শার্টটি পারফেক্ট ফিট করার জন্য।
- হাতা: শার্টের হাতা কব্জি পর্যন্ত পৌঁছাবে, কিন্তু হাত ঘড়ির উপরে চেপে বসবে না। টিশার্টের হাতা বাহুর মাঝামাঝি পর্যন্তই মানানসয়।
- প্যান্টের দৈর্ঘ্য: ফরমাল প্যান্ট সামান্য ভাজ রেখে জুতার উপর পড়বে। জিন্স বা ক্যাজুয়াল প্যান্ট হালকা ভাজ সহ বা ছেঁড়া স্টাইলে থাকলে পায়ের গোড়ালির কিছু অংশ দেখাতে পারে, তবে পূর্ণ গোড়ালি ঢাকা বাধ্যতামূলক নয়।
- স্লিম ফিট বনাম রেগুলার: দেহের গড়ন বিবেচনা করুন। একটু মেদবহুল দেহ হলে অতিরিক্ত টাইট পোশাক অস্বস্তি ও অস্বাস্থ্যকর ভাব দেবে। আবার খুব পাতলা হলে ঢিলেঢালা পোশাকে দেহ হারিয়ে যাবে। গোল্ডেন রুল: পোশাক শরীরের আকৃতি ফোলো করবে না, আঁকাবাঁকা ভাবও দেবে না।
রঙের খেলা: ম্যাচিংয়ে দক্ষতা
রঙের সমন্বয়ই আপনার পোশাকে প্রাণ সঞ্চার করে। বাংলাদেশের উজ্জ্বল প্রকৃতি ও উৎসবের রঙের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখুন।
- নিউট্রাল বেস (Neutral Base): সাদা, কালো, ধূসর, নেভি ব্লু, খাকি, বেইজ – এগুলো হলো আপনার ওয়ার্ড্রোবের ভিত্তিপ্রস্তর। এই রঙের শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট সহজেই একে অন্যের সাথে বা অন্য রঙের সাথে মেশানো যায়।
- রঙিন আইটেম যোগ করা: নিউট্রাল বেসের উপর একটি রঙিন আইটেম যোগ করুন। যেমন:
- নীল জিন্স + সাদা টি-শার্ট + লাল চেকার্ড শার্ট (খোলা)
- খাকি চিনো প্যান্ট + গাঢ় নীল পোলো শার্ট
- ধূসর স্যুট + বেগুনি টাই বা পকেট স্কয়ার
- কম্প্লিমেন্টারি রঙ (Complementary Colors): রং চক্রে বিপরীতে থাকা রঙ (যেমন: নীল-কমলা, লাল-সবুজ) একসাথে দৃশ্যত প্রাণবন্ত লাগে, তবে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
- টোন-অন-টোন (Tone-on-Tone): একই রঙের বিভিন্ন শেড ব্যবহার করা (যেমন: হালকা নীল শার্ট + গাঢ় নীল ব্লেজার + নেভি ব্লু প্যান্ট)।
- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে: উজ্জ্বল রঙ (লাল, হলুদ, কমলা) উৎসব বা আনুষ্ঠানিকতায় ভালো যায়। গরমে হালকা রঙ (পেস্টেল, সাদা, খাকি) স্বস্তিদায়ক।
ফেব্রিকের গুরুত্ব: আরাম ও শৈলীর সমন্বয়
বাংলাদেশের আর্দ্র ও গরম আবহাওয়ায় ফেব্রিকের পছন্দ গুরুত্বপূর্ণ।
- গ্রীষ্মকাল (মার্চ-সেপ্টেম্বর):
- কটন (সুতি): শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া যায়, ঘাম শোষণ করে। লিনেনের চেয়ে কম ভাঁজ হয়।
- লিনেন: হালকা, বাতাস চলাচল করে, দ্রুত শুকায়। তবে সহজে ভাঁজ হয় – যা ক্যাজুয়াল চার্ম হিসেবে নেওয়া যায়।
- সেলুলোজিক ফাইবার (রেয়ন, ভিসকোস, লায়োসেল): কটনের মতোই আরামদায়ক, চকচকে ভাব দেয়।
- শীতকাল (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি):
- উল (Wool): তাপ ধরে রাখে, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। মেরিনো উল নরম ও কম চুলকায়।
- ফ্ল্যানেল: আরামদায়ক ও উষ্ণ। শার্ট বা স্যুটের জন্য ভালো।
- কভার্ড কটন/কোরডরয়: তুলনামূলক ভারি কাপড়, বাতাস আটকে রাখে।
- সারা বছর:
- ডেনিম: টেকসই ও বহুমুখী।
- চিনো (Chino): সুতির মিশ্রণে হালকা ওয়েভড ফেব্রিক, প্যান্টের জন্য জনপ্রিয়।
পরামর্শ: ঢাকার বাজারে (বশুন্ধরা সিটি, আর্মানিটোলা, গুলশান মার্কেট) ভালো মানের সুতি ও লিনেনের শার্ট/প্যান্ট পাওয়া যায়। ব্র্যান্ডের দোকান (ওয়েস্টার্ন, আরবান, ইজি) বা স্থানীয় কারুশিল্পের দোকানও চেক করুন।
ওয়ার্ড্রোব এসেনশিয়ালস: প্রতিটি পুরুষের জন্য অবশ্য পোশাক
একটি কার্যকরী ওয়ার্ড্রোব মানে অসংখ্য আইটেম নয়, বরং সঠিক আইটেমের সমাহার যা বিভিন্ন কম্বিনেশনে ব্যবহার করা যায়।
শার্ট: আনুষ্ঠানিকতা থেকে আড্ডা পর্যন্ত
- সাদা ফরমাল শার্ট (Formal White Shirt): টাই-এর সাথে স্যুটের জন্য, অথবা টাই ছাড়া কালো প্যান্টের সাথে স্মার্ট ক্যাজুয়াল লুকের জন্য। ভালো মানের সুতি বেছে নিন।
- হালকা নীল ফরমাল শার্ট (Light Blue Formal Shirt): সাদার বিকল্প, একটু কম আনুষ্ঠানিক কিন্তু সমানভাবে বহুমুখী।
- অক্সফোর্ড ক্লথ বাটন-ডাউন শার্ট (Oxford Cloth Button-Down – OCBD): কলার বোতাম দেওয়া, মোটা সুতির কাপড়। ক্যাজুয়াল থেকে স্মার্ট ক্যাজুয়াল সব ক্ষেত্রে কাজে লাগে। সাদা, নীল, খাকি – ক্লাসিক পছন্দ।
- ডেনিম শার্ট: ক্যাজুয়াল ডে-আউটের জন্য পারফেক্ট। হালকা নীল বা কালো জনপ্রিয়।
- পোলো শার্ট (Polo Shirt): টি-শার্টের চেয়ে একধাপ ফরমাল, শার্টের চেয়ে একধাপ ক্যাজুয়াল। সুতি বা সুতি-মিশ্রণ ভালো। নিউট্রাল বা রঙিন – সবই যায়।
প্যান্ট: নীচের অংশের ভিত্তি
- ডার্ক ওয়াশড জিন্স (Dark Washed Jeans): কালো বা গাঢ় নীল। প্রায় সব কিছুর সাথে যায়। আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া সব অনুষ্ঠানে পরা যায়।
- খাকি/বেইজ চিনো প্যান্ট (Khaki/Beige Chinos): জিন্সের বিকল্প হিসেবে স্মার্ট ক্যাজুয়াল লুক। অফিস (কাজুয়াল ড্রেস কোডে), আউটিং, ডেট – সব জায়গায় মানাবে।
- কালো ফরমাল ট্রাউজার্স (Black Formal Trousers): স্যুটের অংশ বা আলাদা। সাদা/নীল শার্ট, ব্লেজারের সাথে পরুন।
- গ্রে বা নেভি উল ব্লেন্ড ট্রাউজার্স (Grey/Navy Wool Blend Trousers): শীতকালে উষ্ণতা ও ফরমালিটি দেবে।
উপরের পোশাক: স্তর ও আচ্ছাদন
- সাদা ও কালো সুতির টি-শার্ট (White & Black Cotton T-Shirts): ভি-নেক বা ক্রু-নেক। ফাউন্ডেশন পিস। একা পরা বা জ্যাকেটের নিচে পরা যায়।
- নিউট্রাল কালারের সুয়েটার (Neutral Colour Sweater): নেভি, ধূসর, বাদামি, কালো। শীতকালে শার্টের উপর পরার জন্য আদর্শ।
- আনস্ট্রাকচার্ড ব্লেজার (Unstructured Blazer): স্যুটের ব্লেজারের চেয়ে নরম, কোন প্যাডিং নেই। চিনো বা ডার্ক জিন্সের সাথে ম্যাচ করে স্মার্ট ক্যাজুয়াল লুক তৈরি করে। লিনেন বা সুতি মিশ্রণ বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য ভালো।
- ডেনিম জ্যাকেট (Denim Jacket): টিমলেস ক্লাসিক। সারা বছর ব্যবহার্য (শীতে হালকা সুয়েটার ভেতরে পরুন)।
জুতো: ভিত্তি মজবুত রাখুন
- সাদা ক্যানভাস স্নিকার্স (White Canvas Sneakers): সর্বাধিক বহুমুখী। জিন্স, চিনো, এমনকি শর্টসের সাথেও যায়।
- বাদামী লেদার শু (Brown Leather Shoes): অক্সফোর্ড, ডার্বি বা লোফার। ফরমাল ও স্মার্ট ক্যাজুয়ালের জন্য। কালো প্যান্ট বা চিনোর সাথে ভালো যায়।
- কালো ফরমাল শু (Black Formal Shoes): স্যুট বা কালো ফরমাল প্যান্টের জন্য অপরিহার্য।
- চপার্স বা বুটস (Chukkas/Boots): শীতকালে বা বর্ষায় স্টাইলিশ বিকল্প।
বাংলাদেশি টিপ: স্থানীয় ব্র্যান্ড (বাটা, আর্থ, অ্যাথলেটিক্স) বা কারিগরদের তৈরি চামড়ার জুতো (ঢাকার হাজারীবাগ, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা) মানসম্মত ও টেকসই বিকল্প হতে পারে।
অনুষ্ঠানভেদে স্টাইলিং: সঠিক সময়ে সঠিক পোশাক
অফিসিয়াল/ফরমাল ইভেন্ট (সাক্ষাৎকার, ব্যবসায়িক মিটিং, ওয়েডিং)
- ফুল স্যুট (Full Suit): নেভি ব্লু বা চারকোল গ্রে সর্বোত্তম শুরু। উলের মিশ্রণ বেছে নিন।
- শার্ট: সাদা বা হালকা নীল ফরমাল শার্ট।
- টাই: সলিড কালার (নেভি, বারগান্ডি, ফরেস্ট গ্রিন) বা সূক্ষ্ম প্যাটার্ন (ডটস, স্ট্রাইপস)।
- জুতো: পালিশ করা কালো বা বাদামী অক্সফোর্ড/ডার্বি। কালো মোজা (প্যান্টের রঙের সাথে ম্যাচ করে এমন)।
- বেল্ট: জুতোর রঙের সাথে মিলিয়ে বেল্ট পরুন।
স্মার্ট ক্যাজুয়াল (কাজের পরিবেশ, ডিনার ডেট, পার্টি)
- ব্লেজার + চিনো/ডার্ক জিন্স: আনস্ট্রাকচার্ড ব্লেজার খাকি বা নেভি চিনোর সাথে, বা ডার্ক জিন্সের সাথে।
- শার্ট: অক্সফোর্ড শার্ট, পোলো শার্ট বা ফরমাল শার্ট (টাই ছাড়া, কলার বোতাম খোলা)।
- জুতো: লেদার লোফার্স, চপার্স, বা পরিষ্কার স্নিকার্স।
- একসেসরিজ: সুন্দর ওয়াচ, মিনিমালিস্ট ব্রেসলেট।
ক্যাজুয়াল (আড্ডা, শপিং, ভ্রমণ)
- টি-শার্ট/পোলো শার্ট + জিন্স/চিনো/শর্টস: ফিটিং ঠিক থাকলে সহজেই স্টাইলিশ।
- জ্যাকেট (ঐচ্ছিক): ডেনিম জ্যাকেট, হালকা বোম্বার জ্যাকেট।
- জুতো: স্নিকার্স, স্যান্ডেল (পরিচ্ছন্ন), বা ক্যানভাস শু।
বাংলাদেশি উৎসব (ঈদ, পূজা, বিবাহ অনুষ্ঠান)
- পাঞ্জাবি/কুর্তা: সুতি বা লিনেনের হালকা রঙের পাঞ্জাবি (সাদা, ক্রিম, হালকা নীল) গরমে আরামদায়ক। নকশিকাঁথা বা ব্লক প্রিন্টের ডিজাইন ঐতিহ্যবাহী ভাব আনে।
- পায়জামা/চিনো: হালকা রঙের চিনো বা ফিটিং পায়জামা।
- জুতো: মোজারি, কোলাপুরি, বা পরিষ্কার স্যান্ডেল।
- স্মার্ট আপডেট: ওয়েস্টার্ন শার্টের সাথে নেভি ব্লু চিনো প্যান্ট, উপরেও খোলা পাঞ্জাবি – ফিউশন স্টাইল।
একসেসরিজ: ডিটেইলে জাদু লুকায়িত
স্টাইলিশ পুরুষরা জানেন, ডিটেইলই সবকিছু।
- বেল্ট (Belt): জুতোর রঙের সাথে অবশ্যই ম্যাচ করাতে হবে (কালো জুতো = কালো বেল্ট; বাদামী জুতো = বাদামী বেল্ট)। লেদার ভালো।
- মোজা (Socks):
- ফরমাল: প্যান্টের রঙের সাথে মিলিয়ে বা গাঢ় রঙের (কালো, নেভি, ধূসর)।
- ক্যাজুয়াল: প্যান্ট/জুতোর সাথে মিলিয়ে, বা ফান প্যাটার্ন/রঙিন (প্যান্ট হাঁটুর উপর উঠলে দেখাবে)।
- ওয়াচ (Watch): একটি ক্লাসিক ডায়াল ওয়াচ (অ্যানালগ) আপনার ব্যক্তিত্বের জানান দেয়। ধাতব ব্রেসলেট বা লেদার স্ট্র্যাপ – দুটোই ভালো।
- ব্যাগ (Bag):
- অফিস/ফরমাল: লেদার মেসেঞ্জার ব্যাগ বা ব্রিফকেস।
- ক্যাজুয়াল/ডেইলি: ব্যাকপ্যাক বা ক্যানভাস টোট ব্যাগ।
- সানগ্লাস (Sunglasses): মুখের গড়নের সাথে মানানসই ফ্রেম বেছে নিন। ওয়ে ফেরার্স, রাউন্ড, অ্যাভিয়েটর – ক্লাসিক স্টাইল চিরকালীন।
স্থানীয় ফ্লেয়ার: দেশীয় কারুশিল্পের তৈরি জুতি, বেল্ট বা ব্যাগ (জামদানি মোটিফ, নকশিকাঁথা ইন্সপায়ার্ড) ইউনিক টাচ দিতে পারে।
গরমে টিকে থাকা: বাংলাদেশের গ্রীষ্মকে মোকাবেলা
- ফেব্রিকই রাজা: হালকা সুতি, লিনেন, সেলুলোজিক ফাইবার (ভিসকোস/রেয়ন) বেছে নিন। পলিয়েস্টার এড়িয়ে চলুন।
- রঙ: সাদা, খাকি, হালকা নীল, পেস্টেল রং – সূর্যের তাপ প্রতিফলিত করে।
- ফিট: ঢিলেঢালা কিন্তু ঝুলে পড়া নয় (Relaxed Fit)। টাইট পোশাকে ঘাম জমে অস্বস্তি বাড়ে।
- শর্টস: নিতম্বের কাছে শেষ হওয়া নিচু ভাঁজের সুতি শর্টস (Chino Shorts) বা ডেনিম শর্টস ভালো। হাঁটু বা তার কিছুটা উপরে পর্যন্ত হওয়া উচিত।
- ফুটওয়্যার: ক্যানভাস স্নিকার্স, লিনেন শু, ওপেন স্যান্ডেল (পরিচ্ছন্ন)। সুতির মোজা।
- হাতা ছোট করুন: পোলো শার্ট, টি-শার্ট বা হাফ-হাতা শার্ট বেছে নিন।
সীমিত বাজেটে স্টাইলিশ: স্মার্ট শপিং
স্টাইল মানে প্রচুর টাকা খরচ নয়, বুদ্ধিমত্তা।
- ভিত্তি গড়ুন: প্রথমে মৌলিক, উচ্চ-মানের নিউট্রাল আইটেমে বিনিয়োগ করুন (সাদা শার্ট, ডার্ক জিন্স, নিউট্রাল ব্লেজার, সাদা স্নিকার্স, বাদামী লেদার শু)। এগুলো বারবার পরা যায়।
- কোয়ালিটি > কোয়ান্টিটি: একটি ভালো মানের শার্ট যা ২ বছর টিকবে, ৫টি নিম্নমানের শার্টের চেয়ে ভালো। কাপড়ের গুণমান, সেলাই, ফিটিং চেক করুন।
- থ্রিফটিং/সেকেন্ড হ্যান্ড: ঢাকার নিউমার্কেট, গুলশান স্টাড মার্কেট, বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে (বিক্রয়) ভালো ব্র্যান্ডের সামান্য ব্যবহৃত বা নতুন পোশাক পাওয়া যায়।
- সেল/ডিসকাউন্ট: ঋতু শেষে বা উৎসবের সময় ব্র্যান্ডগুলোর ডিসকাউন্ট সেল চেক করুন।
- টেইলরিং: বাজারে পাওয়া সস্তা পোশাকও একজন দক্ষ দর্জির হাতে পারফেক্ট ফিটিং পেলে দামি দেখাবে।
- কেয়ার: সঠিকভাবে ধোয়া, শুকানো ও সংরক্ষণ করলে পোশাকের আয়ু বাড়ে। নির্দেশনা মেনে চলুন।
পুরুষদের ফ্যাশন টিপস শুধু পোশাক পরার নিয়মকানুন নয়, এটি নিজের প্রতি সম্মান ও বিশ্বের কাছে নিজেকে উপস্থাপনের একটি শিল্প। আপনার পোশাকই প্রথমে কথা বলে। তাই পুরুষদের ফ্যাশন টিপস এর এই সহজ গাইডটি আপনার দৈনন্দিন স্টাইলের সহযোগী হোক। সঠিক ফিটিং, রঙের সমন্বয়, উপযুক্ত ফেব্রিক এবং প্রয়োজনীয় একসেসরিজের মাধ্যমে যে কেউ নিজস্ব, আত্মবিশ্বাসী ও আকর্ষণীয় ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারেন – তা সে ঢাকার ব্যস্ত অফিস হোক বা চট্টগ্রামের সৈকত। মনে রাখবেন, প্রকৃত স্টাইল আপনার স্বাচ্ছন্দ্য ও ব্যক্তিত্ব থেকে উৎসারিত হয়। আজই আপনার ওয়ার্ড্রোবটি একবার দেখুন, একটি ছোট্ট পরিবর্তনও আনতে পারেন। নিজের জন্য সময় নিন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন এবং দেখুন কীভাবে ছোট ছোট পুরুষদের ফ্যাশন টিপস বাস্তবায়নে আপনার আত্মবিশ্বাস নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়! আপনার স্টাইল, আপনার স্বাক্ষর – এটিকে অনন্য করে তুলুন।
জেনে রাখুন (FAQs)
প্র: বাংলাদেশের প্রচণ্ড গরমে আরামদায়ক ও স্টাইলিশ থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরুষদের ফ্যাশন টিপস কী?
উ: গরমে প্রথমে ফেব্রিকের দিকে নজর দিন। হালকা সুতি (কটন), লিনেন বা ভিসকোস/রেয়ন কাপড় বেছে নিন। পলিয়েস্টার এড়িয়ে চলুন। রঙ হালকা রাখুন (সাদা, খাকি, হালকা নীল, পেস্টেল)। পোশাকের ফিটিং যেন ঢিলেঢালা হয় (Relaxed Fit) কিন্তু ঝুলে না পড়ে। হাফ হাতা পোলো শার্ট বা সুতি শার্ট, চিনো প্যান্ট বা উপযুক্ত দৈর্ঘ্যের শর্টস, আর হালকা ফুটওয়্যার (ক্যানভাস শু বা স্যান্ডেল) বেছে নিন।
প্র: সীমিত বাজেটে স্টাইলিশ ওয়ার্ড্রোব গড়ে তুলতে কী করব? কোন পুরুষদের ফ্যাশন টিপস মেনে চলা উচিত?
উ: সীমিত বাজেটে মৌলিক, উচ্চ-মানের নিউট্রাল আইটেমে (সাদা/নীল শার্ট, ডার্ক জিন্স, নেভি ব্লেজার, সাদা স্নিকার্স, বাদামি লেদার শু) প্রাধান্য দিন। এগুলো বারবার কম্বিন করা যায়। থ্রিফট স্টোর বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ভালো ব্র্যান্ডের পোশাক খুঁজুন। ঋতু শেষে সেলের সময় কেনাকাটা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যেকোনো পোশাকের ফিটিং পারফেক্ট করতে একজন দর্জির সাহায্য নিন – এটিই সবচেয়ে কার্যকরী টিপস।
প্র: অফিসে স্মার্ট ক্যাজুয়াল ড্রেস কোড মানে কী পরব? সহজ কিছু পুরুষদের ফ্যাশন টিপস চাই।
উ: স্মার্ট ক্যাজুয়ালের জন্য চিনো প্যান্ট (খাকি, নেভি, গ্রে) বা ডার্ক ওয়াশড জিন্স নিন। সাথে অক্সফোর্ড ক্লথ বাটন-ডাউন শার্ট (OCBD) বা পোলো শার্ট পরুন। উপরে একটি আনস্ট্রাকচার্ড ব্লেজার (লিনেন বা সুতি) যোগ করুন। জুতো হিসেবে লেদার লোফার্স, চপার্স বা পরিষ্কার মিনিমালিস্ট স্নিকার্স ভালো হবে। বেল্ট ও জুতোর রঙ ম্যাচ করাতে ভুলবেন না।
প্র: বাংলাদেশি উৎসব যেমন ঈদ বা বিবাহে কি ধরনের পোশাক পরা যায়? ঐতিহ্যবাহী ছাড়াও কি অপশন আছে?
উ: অবশ্যই! ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জাবি-পায়জামা সর্বদাই ক্লাসিক। হালকা রঙের সুতি বা লিনেন পাঞ্জাবি আরামদায়ক। ফিউশন স্টাইলও জনপ্রিয়: সুতি কুর্তা বা এমব্রয়ডারি করা শার্টের সাথে ফিটিং চিনো প্যান্ট বা ডেনিম। ওয়েস্টার্ন শার্ট-প্যান্টের উপর খোলা পাঞ্জাবিও চমৎকার দেখায়। জুতোতে মোজারি, কোলাপুরি বা পরিষ্কার স্যান্ডেল বেছে নিন। রঙ ও ফেব্রিকে উৎসবের আমেজ আনুন।
প্র: পুরুষদের ফ্যাশনে একসেসরিজ (Accessories) কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কোনগুলো মৌলিক?
উ: একসেসরিজ ডিটেইল পূর্ণ করে, ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। মৌলিক একসেসরিজ:
- বেল্ট: জুতোর রঙের সাথে ম্যাচিং বেল্ট পরা বাধ্যতামূলক।
- ওয়াচ: একটি ক্লাসিক অ্যানালগ ওয়াচ স্টাইল বাড়ায়।
- মোজা: ফরমাল লুকের জন্য প্যান্টের রঙের সাথে মিলিয়ে, ক্যাজুয়ালে প্যাটার্ন দেখানো যায়।
- ব্যাগ: প্রয়োজন ও অনুষ্ঠান অনুযায়ী লেদার মেসেঞ্জার, ব্যাকপ্যাক বা টোট ব্যাগ।
- সানগ্লাস: মুখের গড়নের সাথে মানানসই ফ্রেম।
একটি-দুটি ভালো একসেসরিজ অনেক কিছু বলে দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।