জুমবাংলা ডেস্ক : পুরুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিরোধকের জন্য বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা অবশেষে সফলতার মুখ দেখছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় পানিতে দ্রবণীয় এক ধরনের হাইড্রোজেল আবিষ্কৃত হয়েছে, যা শুক্রাণু নালী ব্লক করে পুরুষের প্রজনন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। ফলে শুক্রাণু আর বীর্যের সঙ্গে মিশতে পারে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হাইড্রোজেলের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল হয়েছে এবং দেখা গেছে, এটি একবার প্রয়োগে দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে। এতে শরীরের হরমোনে কোনো পরিবর্তন হয় না, যা এটিকে আরও নিরাপদ করে তুলেছে।
‘অ্যাডাম’— কনডম ও ভ্যাসেকটমির বিকল্প
‘অ্যাডাম’ নামে তৈরি এই হাইড্রোজেল প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা কন্ট্রালাইন। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, নির্দিষ্ট সময় পর এই হাইড্রোজেল শরীরে মিশে যাবে এবং পুরুষের প্রজনন স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসবে। এতে স্থায়ী কোনো ক্ষতি হবে না।
কন্ট্রালাইন প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, হাইড্রোজেলটি ২৪ মাস পর্যন্ত সফলভাবে শুক্রাণুর পথ আটকে রাখতে সক্ষম। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া দুজন অংশগ্রহণকারীর বীর্যে কোনো শুক্রাণু পাওয়া যায়নি এবং তাঁদের শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
সহজ প্রক্রিয়ায় প্রয়োগযোগ্য
কন্ট্রালাইনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কেভিন আইজেনফ্র্যাটস জানিয়েছেন, ‘অ্যাডাম’ প্রয়োগের পদ্ধতি খুবই সহজ। মাত্র ১০ মিনিটের ছোট একটি প্রক্রিয়ায় অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে শুক্রাণু নালী বের করে সেখানে হাইড্রোজেল ইনজেক্ট করা হয়। এরপর নালী যথাস্থানে ফিরিয়ে এনে স্থানটি সেলাই করে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, আগের জন্মনিরোধক ইমপ্লান্টগুলোর তুলনায় ‘অ্যাডাম’ শরীরে ক্ষতি করে না এবং নির্দিষ্ট সময় পর প্রজনন ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসে। পূর্বের ইমপ্লান্টগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময় শুক্রাণু নালিতে ক্ষত তৈরি হতো এবং স্থায়ী বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি থাকত, যা এখানে নেই।
‘অ্যাডাম’ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তবে এখনো ‘অ্যাডাম’-এর ট্রায়ালের ফলাফল কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশ হয়নি। আইজেনফ্র্যাটস জানান, ‘অ্যাডাম’-কে অনেকটাই নারীদের আইইউডির (Intrauterine Device) মতো ভাবা যেতে পারে। চাইলে পুরুষেরা দুই বছর পর নতুন করে আরেকটি ইমপ্লান্ট নিতে পারবেন।
কন্ট্রালাইন জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু হবে, যেখানে ৩০ থেকে ৫০ জন অংশগ্রহণকারী থাকবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার অধ্যাপক রিচার্ড অ্যান্ডারসন ‘অ্যাডাম’-এর ফলাফলকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি এবং ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন ওটলি মনে করেন, ‘অ্যাডাম’-এর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ওটলি বলেন, ‘অ্যাডাম’ কার্যকর হলেও পিল বা প্যাচের মতো বিকল্প পদ্ধতির প্রতি পুরুষেরা বেশি আগ্রহী হতে পারেন। তবুও, এটি পুরুষ জন্মনিরোধকের ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।