লাইফস্টাইল ডেস্ক : পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর বাণী ও সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ। আল্লাহ কোরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষের জন্য হেদায়েতের উৎস ও জীবনবিধান ঘোষণা করেছেন। এতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানকে। এ জন্য কোরআন নিয়ে গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণা অপরিহার্য।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিতাবে কোনো কিছুই আমি বাদ দিইনি; অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরকে একত্র করা হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮৯)
কোরআনের ব্যাখ্যা জানার গুরুত্ব
মহান আল্লাহ চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে কোরআনের ব্যাখ্যা জানতে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বুদ্ধিমানরা যেন তা অনুধাবন করে।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৯)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কোরআনকে বোঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব কোনো চিন্তাশীল আছে কি?’ (সুরা : কামার, আয়াত : ২২)
সহায়ক জ্ঞানগুলো
মহাগ্রন্থ আল-কোরআন সম্পর্কিত জ্ঞানকে আরবি ভাষায় ‘উলুমুল কোরআন’ বা কোরআন বিজ্ঞান বলা হয়। এটি একটি বিস্তৃত জ্ঞান। যার মধ্যে বহু বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
যার কোনো কোনো স্বতন্ত্র শাস্ত্রের মর্যাদা রাখে। কোনো কোনো মনীষী উলুমুল কোরআনের জন্য সহায়ক জ্ঞানের সংখ্যা শতাধিক বলেছেন। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) তাঁর বিখ্যাত ‘আল ইতকান ফি উলুমিল কোরআন’ গ্রন্থে উলুমুল কোরআন বা কোরআন বিষয়ক জ্ঞানকে ৮০টি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত করেছেন। নিম্নে কোরআনের নির্ভুল ব্যাখ্যা জানতে অপরিহার্য কয়েকটি জ্ঞানের পরিচয় তুলে ধরা হলো।
১. আরবি ভাষাসংক্রান্ত জ্ঞান : আরবি ভাষাসংক্রান্ত জ্ঞানের তিন দিক রয়েছে।
তা হলো :
ক. ইলমুল লুগাত : যাতে কোরআনের একক শব্দগুলোর উৎপত্তি ও অর্থগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
খ. ইলমুস সরফ : যাতে শব্দের রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করে।
গ. ইলমুন নাহু : যাতে আরবি বাক্যের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।
২. ওহি পরিচয় ও প্রকার : ওহি হলো নবী-রাসুলদের প্রতি মহান আল্লাহর প্রত্যাদেশ। পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা জানতে ওহির পরিচয়, প্রকার, মর্যাদা ও নাজিলের পদ্ধতি ইত্যাদি জানা আবশ্যক।
৩. তারিখুল কোরআন : তারিখ অর্থ ইতিহাস। তারিখুল কোরআন অর্থ কোরআনের ইতিহাস। যার কোরআন নাজিলের সূচনা ও ধারাক্রমের ইতিহাস জানা, সুরা ও আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট (শানে নুজুল) জানা, কোন সুরা মক্কায় এবং কোন সুরা মদিনায় অবতীর্ণ তা জানা।
৪. ইলমুত তাফসির : তাফসির শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান রাখা। এর অধীনে তাফসির শাস্ত্রের সূচনা, বিকাশ, তাফসির গ্রন্থ রচনা ও সংকলনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৫. ইলমু উসুলুতিত তাফসির : অর্থ তাফসির শাস্ত্রের মূলনীতি। এর অধীনে আল্লাহর রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও তাঁদের পরবর্তী তাফসিরবিদদের প্রণীত তাফসিরের মূলনীতিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৬. ইজাজুল কোরআন : ইজাজুল কোরআন অর্থ কোরআনের অলৌকিকত্ব। কোরআনের অলৌকিকতা, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিভিন্ন আয়াত ও সুরার মর্যাদা ইত্যাদি জানা।
৭. আহকামুল কোরআন : আহকাম অর্থ বিধি-বিধান। আহকামুল কোরআন হলো কোরআনের বিধি-বিধান। কোরআন কোন আয়াতে আল্লাহ কোন বিধান বর্ণনা করেছেন, কোন আয়াত থেকে ফকিহরা কোন বিধান উদ্ভাবন করেছেন বিষয়ে জানা।
৮. তারিখু তাদভিনুল কোরআন : তাদভিন অর্থ সংকলন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কোরআন সংকলনের ইতিহাস এবং তা মুসহাফ প্রস্তুত করার বিস্তারিত বিবরণ।
৯. ইলমুল কিরাত : অর্থ কিরাত শাস্ত্র। কিরাত দ্বারা উদ্দেশ্য পবিত্র কোরআনের পাঠরীতি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নিয়মগুলো।
১০. ইলমুত তাজবিদ : তাজবিদ অর্থ উত্কর্ষসাধন। তাজবিদ মূলত কোরআনের উচ্চারণসংক্রান্ত জ্ঞানকে বলা হয়। বিশুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে শব্দ-বাক্যের অর্থের গভীর সম্পর্ক আছে।
১১. আদাদি আয়িল কোরআন : অর্থ হলো কোরআনের আয়াত সংখ্যা বিষয় জ্ঞান। এতে কোরআনের আয়াতগুলোর শুরু ও শেষ নিয়ে এবং আয়াত ও সুরার সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
১২. আলওয়াকফু ওয়াল ইবতিদা : শাব্দিক অর্থ বিরতি ও সূচনা। মূলত এতে আয়াত ও আয়াতাংশের কোথায় থামা যাবে, কোথায় থামা যাবে না এবং থামার পর কিভাবে শুরু করবে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
১৩. আল ইশকাল ওয়া জাওয়াবুহু : কোরআনুল কারিম ও কোরআন সংক্রান্ত জ্ঞানের কোনো বিষয়ে উত্থাপিত আপত্তি ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়।
১৪. তাবাকাতুল মুফাসসিরিন : সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত পূর্বসূরি আলেমদের মধ্যে যারা মুফাসসির ছিলেন গ্রহণযোগ্যতার জায়গা থেকে তাদের স্তরগুলো জানা। তাদের ব্যাখ্যা গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের কারণগুলো জানা।
১৫. ইলমুন নাসখ : নাসখ অর্থ রহিতকরণ। এই শাস্ত্রে কোরআনের আয়াতগুলোর ভেতর কোনটির তিলাওয়াত বা বিধান অথবা উভয়টি রহিত করা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
১৬. ইলমুল কাসাস : কাসাস অর্থ ঘটনাগুলো। কোরআনে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত ঘটনাগুলো নিয়ে যে শাস্ত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
১৭. ইলমু উসুলিদ দিন : দ্বিনের মূলনীতিসংক্রান্ত জ্ঞান। কোরআন ও হাদিসের আলোকে পূর্বসূরি আলেমরা যেসব বিষয়কে ইসলামের মূলনীতি ঘোষণা করেছেন তা সম্পর্কে জানা।
১৮. উসুলুল ফিকহ : ফিকহ হলো ইসলামী আইনশাস্ত্র। আর উসুলুল ফিকহ হলো ইসলামী আইনশাস্ত্রের মূলনীতিগুলো। এসব মূলনীতির আলোকেই ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধান প্রণীত।
১৯. ইলমুল হাদিস : হাদিস হলো কোরআনের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা। তাই হাদিস ও তার সংশ্লিষ্ট জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া তাফসির জানা ও করা সম্ভব নয়।
২০. অলংকার শাস্ত্র : কোরআনের শব্দ-বাক্য উচ্চতর অলংকারসমৃদ্ধ। তাই কোরআনের অর্থ ও মর্ম বুঝতে আরবি অলংকার শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক।
আলেমা হাবিবা আক্তার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।