মো. শাহজাহান কবীর : কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ ইবাদতটি শুধু উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে নয়, বরং পূর্ববর্তী সব উম্মতের মধ্যেও বিদ্যমান ছিল। কোরবানি শব্দটি ‘কোরবুন’ মূল ধাতু থেকে এসেছে। অর্থ হলো– নৈকট্য লাভ, সান্নিধ্য অর্জন, প্রিয় বস্তুকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য উৎসর্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহপাকের নামে জবেহ করাই হলো কোরবানি।
সুরা আল-মায়েদায় হজরত আদম (আ.)-এর দুই সন্তানের দেওয়া কোরবানির কথা বিবৃত হয়েছে। সে কোরবানির প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর একটি বর্ণনায়। মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর দুই ছেলে ছিল– হাবিল আর কাবিল। হজরত হাওয়া (আ.) প্রতিবার এক জোড়া সন্তান প্রসব করতেন। একটি ছেলে অন্যটি মেয়ে। এ যমজ ভাইবোনদের বিয়ে ছিল হারাম।
তাই তখন এক গর্ভে জন্মলাভ করা ছেলের সঙ্গে ভিন্ন গর্ভে জন্মলাভ করা মেয়ের বিয়ের নিয়মই প্রচলিত ছিল। কাবিলের যমজ বোনটি ছিল সুশ্রী। যমজ হওয়ার কারণে তাকে কাবিল বিয়ে করার নিয়ম না থাকলেও তার জেদ ও হঠকারিতা ছিল– সে তাকে বিয়ে করবেই। অন্যদিকে হকদার হওয়ার দাবি ছিল হাবিলের। এ দ্বন্দ্বের ফয়সালা হলো এভাবে, প্রত্যেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে কিছু কোরবানি করবে। যার কোরবানি কবুল হবে, তার দাবিই গ্রহণযোগ্য হবে।
হাবিল একটি দুম্বা ও কাবিল কিছু ফল কোরবানি পেশ করল। তখনকার দিনে কোরবানি কবুল হওয়ার নিদর্শন ছিল। আকাশ থেকে আগুন নেমে কবুলকৃত কোরবানি খেয়ে ফেলত। যথারীতি আগুন এসে হাবিলের দুম্বাটি খেয়ে ফেলল; কাবিলের কোরবানি রয়ে গেল মাটিতেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সে হত্যা করল তার ভাইকে। (তাফসিরে ইবনে কাসীর ২/৪৮)
রাসুলে পাক (সা.) মাদানি জীবনে প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। কখনও কোরবানি পরিত্যাগ করেননি, বরং কোরবানি পরিত্যাগকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলে পাক (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর চরম আত্মত্যাগ জড়িয়ে আছে কোরবানির সঙ্গে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে তিনি নিজের জীবন, পরিবার ও বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া প্রাণাধিক পুত্রকে কোরবানি করার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন।
জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই তিন দিন যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার যে কোনো একটির সমপরিমাণ সম্পত্তির মালিক থাকবে; তার জন্য গরু, মহিষ, উট এগুলোর একটা অংশ অথবা ছাগল, দুম্বা এসব পশুর একটি কোরবানি করা ওয়াজিব। হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খুশি মনে সওয়াবের নিয়তে কোরবানি করে, ওই কোরবানি তার জাহান্নামে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হবে।’ কোরবানি একান্তই কোনো উৎসব নয়। গোশত খাওয়ার নিয়তে হলে কিংবা মানুষ খারাপ বলবে– এটা মনে করে কোরবানি দেওয়া হলে এ কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। কেননা, আল্লাহর না গোশতের প্রয়োজন, না রক্তের। তিনি তো শুধু তাকওয়াই দেখেন। সুরা আল-হজের ৩৭ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে কখনও কোরবানির গোশত বা রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াটুকুই পৌঁছায়।’
পবিত্র কোরআন ও রাসুলে পাক (সা.)-এর হাদিসের বর্ণনা মোতাবেক আমাদের সবার দায়িত্ব হবে মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইসলামের যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী কোরবানি করা। মহান আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফার ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।