জুমবাংলা ডেস্ক : ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় রেমাল চলে গেলেও রেখে গেছে স্মৃতি, ক্ষতচিহ্ন। যা স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। রেমাল তাণ্ডবে বিশাল সুন্দরবনের প্রাণিসম্পদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে মায়াবী হরিণসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মৃতদেহ।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পর্যন্ত হরিণ, অজগর ও শূকরসহ একশ প্রাণির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এর সিংহভাগই হরিণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমালের কারণে নদ-নদীর পানি চার থেকে পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে সুন্দরবন প্লাবিত হয়।ফলে একদিকে পানিতে ডুবে, অন্যদিকে লবণ পানি পানের কারণে এসব বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু কতো প্রাণি মারা গেছে? বনের সকল গভীর অরণ্যে তল্লাশি সম্পন্ন করে আরও কয়েকদিন পরই হয়তো জানা যাবে মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান।
সুন্দরবন বন বিভাগের সূত্র জানান, রেমালের আঘাতে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর পাশাপাশি ফরেস্ট স্টেশন অফিস, ক্যাম্প ও ওয়াচ টাওয়ারেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনের ভেতরে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যোগাযোগের মাধ্যম ওয়্যারলেস টাওয়ারও। মিঠা পানির শতাধিক পুকুর নিমজ্জিত হয়েছে লোনা পানিতে।
খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৯৬টি হরিণ এবং চারটি শূকর মিলিয়ে সুন্দরবনের ১০০টি বণ্যপ্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত হরিণগুলো কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভেসে আসা ১৮টি জীবিত হরিণ ও একটি অজগর উদ্ধার করা করা হয়েছে। যা বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দফায় দফায় উচ্চ জোয়ারে সুন্দরবনের সব নদী-খাল উপচে বনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানি সুন্দরবনের গহীনে উঠে যাওয়ায় হরিণগুলো সাঁতরে কূলে উঠতে না পেরে মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হরিণের পাশাপাশি আরও বন্যপ্রাণী মারা যেতে পারে। সেসব মৃত প্রাণীর খোঁজে বনরক্ষীরা তৎপর রয়েছেন।
তিনি বলেন, বন বিভাগের টহল অফিসগুলোর টিনের চালা, জানালা-দরজা, সোলার প্যানেল, ওয়ারলেস সিস্টেম ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ঝড়ে। পূর্ব বন বিভাগের কটকা অভয়ারণ্যের অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কচিখালি, বগিসহ বিভিন্ন বন অফিসের ২৫টি টহল ফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অবকাঠামোর টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠাপানির উৎস পুকুরে ৮-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বনকর্মীদের পাশাপাশি প্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।
বনের অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়াসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিমাণ ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ওপরে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনের বন্যপ্রাণিরা জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে অভ্যস্ত। সাধারণত জলোচ্ছ্বাস হলে বন্যপ্রাণীরা উঁচু স্থান ও গাছে আশ্রয় নেয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বনের ভেতর অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। ফলে বনের উঁচু স্থান তলিয়ে যাওয়ায় প্রাণিরা আশ্রয় নিতে সমস্যায় পড়ে। অধিক জলোচ্ছ্বাসের কারণে নিরাপদ আশ্রয় নিতে না পেরে হরিণগুলোর মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচণ্ড বাতাসে বনের গাছ ও ডালপালা ভেঙে গেছে এবং বেশ কিছু বন্যপ্রাণিও মারা গেছে। বনের ভেতর প্রায় ছয় থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো। ফলে বন্যপ্রাণির মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে।
চরম সুখের খোঁজে পরপুরুষের কাছে শরীর সঁপে দিলেন ৪ বান্ধবী, একা দেখুন
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবন আমাদেরকে ঠিক মায়ের মতন বুকে আগলে রাখছে। ঝড়ের সময়ে সে নিজে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে, বন্যপ্রাণী মারা গেছে। কিন্তু উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।