ধর্ম ডেস্ক : ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে সমহিমায় হাজির হয়েছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। দেশের আকাশে দেখা মিলেছে মুমিনের হৃদয়ে প্রহর গোনা রমজানের একফালি চাঁদ। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়। নিঃসন্দেহে বছরের শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে মাহে রমজান। এ মাসটিতে আল্লাহ তার বান্দার আমল এবং দোয়ার মাধ্যমে তার ১১ মাসের সব ভুল-ত্রুটি তথা অপরাধ ক্ষমা করে দেন।
রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু সময় থাকলেও সারা মাসজুড়েই চলে ক্ষমা এবং অনুগ্রহ দানের এক মহোৎসব। পুরো রমজান দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে কাটানো উচিত। আসন্ন মাহে রমজানকে যথাযথভাবে দোয়া, ইস্তিগফার, কুরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন।
রমজান মাসে রয়েছে দোয়া কবুলের কয়েকটি বিশেষ সময়, সে সময়গুলোতে দোয়া করলে আল্লাহ বান্দান দোয়া ফেরত দেন না। এর মধ্যে অন্যতম সময় হলো রাতের শেষ প্রহর। প্রিয় নবীকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল— কোন সময়ের দোয়া আল্লাহ বেশি কবুল করেন? উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর যে দোয়া করা হয়। অর্থাৎ রমজানের সেহেরির সময়ের দোয়া বেশি কবুল করেন।
সুরা আল আহযানের ২১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’
অন্যদিকে, সহিহ হাদিস এর মাধ্যমে আমরা রাসুলের জীবনের আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারি। নগদ ইসলামিক অ্যাপে ‘ইসলামিক জীবন’ ফিচারে আসুন পড়ি সহিহ হাদিস এবং আমল করি রাসুলের দেখানো পথে।
অন্য এক হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছো, আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছো, আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। এভাবে তিনি ফজরের ওয়াক্ত স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। (বুখারি, মুসলিম)
রমজানের শেষ রাতগুলো আরও বেশি মর্যাদাপূর্ণ। এ সময়ের দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। সুতরাং আমাদের উচিত দোয়া কবুলের এই মোক্ষম দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে অতিবাহিত করা।
দ্বিতীয়ত দোয়া কবুলের বিশেষ সময়ের মধ্যে আরেকটি সময় হলো সারা দিন রোজা রেখে ইফতারি সামনে নিয়ে ইফতারির আগমুহূর্তে রোজাদার ব্যক্তি যে দোয়া করেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফেরত দেন না। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর দোয়া এবং জালিমের বিপক্ষে মাজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমদ)
এজন্য আমাদের উচিত ইফতারের আগমুহূর্তে সকল কাজ থেকে ফারেগ হয়ে গোনাহ মাফ এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়ায় মশগুল হওয়া। অনেক সময় দেখা যায়, ইফতারির আগমুহূর্তে হৈ-হুল্লোড়, কথা-বার্তা বলতে বলতে আজান হয়ে যায়। অথচ আমরা চাইলে এসময়ে আমাদের যাপিত জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারি। আমাদের উচিত বাহুল্য কথা ত্যাগ করে দোয়ার মধ্যে এ মূল্যবান সময় পার করা।
তৃতীয় রমজানে দোয়া কবুলের আরেকটি বিশেষ সময় হলো ফজরের পর। হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলকে (সা.) কোন সময় দ্রুত দোয়া কবুল হয় মর্মে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন, রাতের শেষ প্রহর এবং ফজরের পর। (সুনানে তিরমিযি: ৩৪৯৮ )
রমজানে অধিকাংশ মানুষ এই সময়টা ঘুমিয়ে থাকে, কিন্তু এ সময় দোয়া কবুল করানো, ক্ষমা ও আল্লাহর অনুগ্রহ লুফে নেওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ।
এছাড়াও দোয়া কবুলের জন্য অন্যতম সময় লাইলাতুল ক্বদর। শুধু রমজান নয়, বরং সারা বছরের মধ্যে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ রাত হলো লাইলাতুল ক্বদর। এ রাত দোয়া কবুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ রাতে মাগরিব থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত অসংখ্য মানুষকে ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়। অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।