জুমবাংলা ডেস্ক : ভোট চাইতে শ্বশুরবাড়ি রংপুরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপনেত্রীর আগমনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। পুত্রবধূকে বরণে নতুন রূপে সেজেছে পীরগঞ্জ। অধীর আগ্রহে রয়েছেন উপজেলাবাসী। প্রধানমন্ত্রী আসবেন, শ্বশুর বাড়ি যাবেন আর সেখানেই দুপুরের খাবার খাবেন। তাই আয়োজন করা হয়েছে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের।
সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাবারের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। তবে দুপুরের খাবার হিসেবে তিনি রুটির সাথে ছোট মুরগীর মাংস খাবেন। আর কী কী আছে খাবার তালিকায় তা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন দায়িত্বশীল সূত্রটি। প্রধানমন্ত্রী ও পীরগঞ্জের পুত্রবধূর আগমনে গোটা উপজেলায় সাজ সাজ রব, চলছে পোস্টারিং ও মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারণা।
শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে শনিবার রাত থেকে এসএসএফ, এনএসআই, ডিজিএফ, সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা কর্মীরা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে সড়কপথে সরাসরি তার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে আসবেন। সেখানে তার ছেলের অর্থায়নে নির্মিত ‘জয় সদন’ ভবনে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। প্রথমে তিনি তার প্রয়াত স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কে নাতনি সাবাবা হোসেন ওহি জানান, তার দাদি, রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্বশুরবাড়িতে আগমন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিলবিলাতি আলু, খটখটিয়ার বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, দেশি মাছ, পিঠাসহ ২০ ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি স্বজনদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিয়ের পর প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ যে ঘরটিতে থাকতেন, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে এলেই প্রধানমন্ত্রী এই ঘরটির নানান স্মৃতি রোমন্থন করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’ এবার সময় কিছুটা কম পেলেও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ড. ওয়াজেদ মিয়ার ভ্রাতুষ্পুত্র, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাদায়েত হোসেন বকুল জানান, তার বড় চাচা মরহুম ড. ওয়াজেদের পারিবারিক বসতভিটায় তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটি তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে জয় এলে সেখানেই অবস্থান করেন। এবারও প্রধানমন্ত্রী সেই বাড়িতেই অবস্থান করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক স্বজন আছেন, যাদের সঙ্গে সবসময় দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা সবাই আসবেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন।’ এছাড়াও পারিবারিক নানান বিষয়ে আলোচনাও হবে বলে জানান তিনি।
পৌর মেয়র এবং পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিবুল ইসলাম শামীম জানান, বেলা ৩টায় পীরগঞ্জ হাই স্কুল মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচনি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জনসভা সফল করার জন্য চলছে ব্যাপক মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণা। সভামঞ্চ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলছে পুরোদমে।
জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মকবুল হোসেন সরদার জানান, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উপদেশ মোতাবেক মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। নারীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া দুটি মেডিক্যাল টিম জনসভাস্থলের দুপাশে অবস্থান করবে। তারা জনসভায় আগত কেউ অসুস্থ হলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।
জনসভায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষের সমাগম হওয়ার আশা করছেন জানিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘পীরগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকেও মানুষের ঢল নামবে জনসভায়।’
প্রধানমন্ত্রীর আগমনে এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। এলাকার পুত্রবধূকে দীর্ঘদিন পর কাছ থেকে একনজর দেখার প্রত্যাশায় উন্মুখ আছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ভ্যানচালক মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘শেখ হাসিনা পীরগঞ্জের পুত্রবধূ। তার কাছে আমাদের চাওয়া-পাওয়া আছে। তিনি পীরগঞ্জকে আরও উন্নত সমৃদ্ধ করবেন, তবে এজন্য আমাদের দাবি করতে হয় না। উনি জানেন পীরগঞ্জের কী কী উন্নয়ন করা দরকার।’
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর পীরগঞ্জে একই মাঠে জনসভা করেছেন। তারও আগে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তরফমৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পথসভা ও লালদীঘির ফতেহপুরের জয়সদনে কর্মীসভা করেন তিনি। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।