স্পোর্টস ডেস্ক : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নওয়াব শাহী জামে মসজিদের অনেকবার সংস্কার হয়েছে। বদলেছে অনেক কিছুই। তবে ৯৫ বছরেও বদলায়নি একটি রীতি। তা হলো- নামাজের সময় ছাড়া এক মিনিটের জন্যও এ মসজিদে বন্ধ হয়নি কুরআন তেলাওয়াত। নিয়োগপ্রাপ্ত হাফেজরা পালাক্রমে এ মসজিদে কুরআনে কারিম তেলাওয়াত করে চলেছেন।
সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ নামে দুই ভাই ষোড়শ শতাব্দীতে এক কক্ষের এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৩৫ বছর আগে ধনবাড়ীর জমিদার নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী মসজিদটির সম্প্রসারণ করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী।
মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি মসজিদটির মেঝে ও দেয়াল কাঁচের টুকরো দিয়ে মোজাইক করা। মেঝেতে আছে মার্বেল পাথরের নিপুণ কারুকাজ। ভেতরের পুরোটাজুড়ে চীনামাটির মোজাইকে দেখা যাবে ফুলের মোটিফ।
মসজিদে ঢোকার জন্য পূর্বদিকে আছে বহু খাঁজে চিত্রিত খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ। উত্তর ও দক্ষিণে আরো তিনটি করে ৯টি প্রবেশপথ আছে।
প্রায় ১০ কাঠার ওপর সম্প্রসারিত মসজিদটিতে আছে ৯টি জানালা ও ৩৪টি ছোট-বড় গম্বুজ। বড় ১০টি মিনারের প্রতিটি ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। ৫ ফুট উঁচু ও ৩ ফুট চওড়া মেহরাবটিও বেশ দৃষ্টিনন্দন।
৩০ ফুট মিনারের মাথায় আছে ১০টি করে তামার চাঁদ। মসজিদে ১৮টি হাড়িবাতি সংরক্ষিত রয়েছে। আগে যেগুলো আলোর জন্য ব্যবহৃত হতো। মোগল আমলের তিনটি ঝাড়বাতিও আছে।
ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদে একসাথে ২০০ মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। পাশেই শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান।
পূর্বদিকের প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিমের দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। অষ্টভূজাকারের কেন্দ্রীয় মেহরাবের দুই পাশে রয়েছে বহু খাঁজওয়ালা খিলান। অন্য দুটি মেহরাবও বহু খাঁজবিশিষ্ট।
প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর বিশাল এক দীঘি মসজিদটির পাশে। মুসুল্লিরা অজু করেন সেখানে। আশপাশে সুপ্রশস্থ ও খোলামেলা জায়গাও অনেক। ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় এ মসজিদ, পার্শ্ববর্তী মাদরাসা ও ঈদগাহ। নওয়াব শাহী জামে মসজিদটি দেখতে ও চলমান কুরআন তেলাওয়াত শুনতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরা।
মসজিদটির ইমামের দায়িত্বে আছেন হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস হুসাইন। বর্তমানে কুরআন তেলাওয়াত ও খতিবের দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচ জন। তারা হলেন- হাফেজ মো: কামরুজ্জামান, হাফেজ আব্দুল ওয়ারেজ, হাফেজ আব্দুস সামাদ, হাফেজ মো: হেদায়েত ও হাফেজ আবু হানিফ।
মসজিদের খতিব হাফেজ মো: কামরুজ্জামান বলেন, ‘১৯২৭ সালে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এ মসজিদে সার্বক্ষণিক কুরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করেন। ১৯২৯ সালে তিনি মারা গেলেও চলমান রয়েছে তেলাওয়াত।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমরা পাঁচজন হাফেজ দায়িত্বে আছি। নামাজের সময় ছাড়া এক মিনিটের জন্যও বন্ধ হয় না কুরআন তেলাওয়াত। টানা প্রায় ৯৫ বছর ধরে এই ধারা চলছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।