জুমবাংলা ডেস্ক : প্রথমবারের মত বাংলাদেশে চালু হতে যাওয়া ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ ছিল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের খোলা ওয়েবপোর্টালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়।
“দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আজ সার্ভারের লক খোলা হয়। দেখা যায়, যৌথ ও এককভাবে মোট ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে।”
দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে একসঙ্গে এত বেশি আবেদন আর কখনো জমা পড়েনি।
আগ্রহীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর, তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী উদ্যোগ, এমনকি ওষুধ কোম্পানি ও ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও।
লাইসেন্সের জন্য যত আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে বিদেশি দুই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ফিনটেক (প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন) ব্যবসার দক্ষতা রয়েছে।
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত জুন থেকে। শুরুতে আবেদন করার শেষ সময় ছিল গত ১ অগাস্ট। সে সময়ের মধ্যে কোনো আবেদন জমা না পড়ায় পরে তা বাড়িয়ে ১৭ অগাস্ট করা হয়।
সবার আগে ‘ডিজি টেন পিএলসি’ নামে দশ ব্যাংকের জোট ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই ১০টি ব্যাংক মিলিয়ে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ব্যাংক ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), প্রাইম ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক রয়েছে এই উদ্যোগে।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের আবেদন করেছে।
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ইউসিবির মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে যে জোট আবেদন করেছে, তার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনাও।
আবেদনকারীদের মধ্যে আছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আরামিট, যারা মূলত ঢেউশিট উৎপাদন করে।
আরও আছে ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস, মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক।
‘সঞ্চয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংক। তাদের জোটেও বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ার পেতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে।
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-ও ডিজিটাল ব্যাংক পেতে আবেদন করেছে। তাদের প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম ‘পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক।’
নগদ ডিজিটাল ব্যাংক চেয়ে আবেদন করেছে ডিজিটাল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি নগদও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
প্রচলিত ধারার ব্যাংক পেতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বর্তমান সরকার।
রাজনৈতিক বিবেচনায় গত তিন মেয়াদে এ সরকার ১৩টি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। যার মধ্যে প্রথম মেয়াদে নয়টি, দ্বিতীয় মেয়াদে একটি এবং বর্তমান মেয়াদের শুরুতে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর বাইরে আরো একটি ব্যাংকের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন আগ্রহপত্র বা লেটার অব ইনটেন্ট জমা দেওয়া হয়েছিল, একাধিকবার সময় বাড়িয়েও শর্ত পূরণ করতে না পারায় তা বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা বর্তমানে ৬১টি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।