জুমবাংলা ডেস্ক : এবার ব্রিটিশ সরকারের প্রস্তুতকৃত ম্যাপ বা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) অনুযায়ী ৫০০ নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। সম্প্রতি নদী কমিশনের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী নদী দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করলে তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। পরে ওই তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে যে পদ্ধতিতে ওই সমীক্ষা করা হয়েছিল- তা ভুল ছিল বলে প্রতীয়মান হয় সমীক্ষা-পরবর্তী বিশ্লেষণে। একপর্যায়ে ব্যর্থ হয় ওই সমীক্ষা। এরপর ব্রিটিশ সিএস অনুযায়ী ৫০০ নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় সরকার। যদিও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) খসড়া তালিকায় দেশে নদ-নদী রয়েছে ৯০০-এরও বেশি। এদিকে নতুন করে নেওয়া ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় ১৮৮০ থেকে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সরকারের প্রস্তুতকৃত ম্যাপ (সিএস) অনুযায়ী ৫০০ নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিতের উদ্যোগ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আর এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ)। উদ্যোগটির প্রশংসা করে নদীসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরও আগেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল। পাশাপাশি সমীক্ষার কাজটি নির্ভুল ও দ্রুত সময়ে করারও আহ্বান তাদের।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৫০০ নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিত করার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দেশের নৌপথ সংরক্ষণের কাজ করে। আমার মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী নদী চিহ্নিত করাও আমাদের কাজ। সে অনুযায়ী দেশের ৫০০ নদ-নদী চিহ্নিত করার একটি প্রকল্প নিয়েছি।’
মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘সিএস ম্যাপ অনুযায়ী প্রত্যেক উপজেলার ম্যাপগুলো যুক্ত করে নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হবে। যদি নদীর জায়গায় কোনো বাড়িঘর থাকে তা ভেঙে দিয়ে খনন করা হবে। সে যা-ই থাকুক না কেন নদী খনন করতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের শরীরের শিরা-উপশিরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, দেশের জন্য নদীও সে রকম গুরুত্বপূর্ণ। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হলে যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি নদী ভরাট হয়ে গেলে দেশও মরুভূমি হয়ে যাবে।’
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। দেশের ৫০০ নদ-নদীর সীমানা চিহ্নিত করার প্রকল্প বিআইডব্লিউটিএকে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, যেখানে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারও ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে এ সময় সবাই নিজেদের মতামত দেন। নদীর সীমানা নির্ধারণে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, জরিপ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তর অল্পবিস্তর কাজ করেছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই বৈঠকে। তাই এ প্রকল্পের কাজে অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদনগুলো আমলে নেয়ার পরামর্শ দেন সভার সদস্যরা। কাজটি করতে গিয়ে কী কী জটিলতা তৈরি হতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
দেশের নদ-নদী দখলদারদের তালিকা তৈরিতে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সেই কাজ এখনো শেষ করা যায়নি। সিএস রেকর্ডে চিহ্নিত সব নদ-নদীর অবস্থান এখন আগের জায়গায় নেই জানিয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, পানি আইনে নদীর সীমানা ও ফোরশোরকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আবার আলোচিত প্রকল্পটিতে দখলদারদের চিহ্নিত করতে শুধু পানি আইন নয়, বন্দর আইন ও ভূমি আইনেরও সহায়তা নেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি দখলদার চিহ্নিত করতে জিপিএস ব্যবহার ও সরজমিন পরিদর্শনও করা হয়েছিল। সবশেষে ৩৭ হাজার ৩৯৬ নদ-নদী দখলদারকে চিহ্নিতও করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো যাচাই না করেই সে তালিকা ওয়েবসাইট থেকে মুছে দেয়া হয়। এমনকি প্রকল্পের প্রতিবেদনও গ্রহণ করেনি কমিশন।
অন্যদিকে দেশের সব নদ-নদীর তালিকা, বিভাগওয়ারি দখলদারদের তালিকা ও নদী দখলমুক্ত করতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের নদ-নদীর অভিভাবক নদী রক্ষা কমিশন- এনআরসিসি। উচ্চ আদালতের ঘোষণায়ও এ কথা বলা হয়েছে। নদ-নদীর দখলদারদের চিহ্নিত করে তাদের উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করাই এনআরসিসির প্রধান কাজ। যদিও দেশের নদ-নদীর দখল ও দূষণ রোধে সংস্থাটির সফলতা প্রায় শূন্যের কোটায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।