জুমবাংলা ডেস্ক : সেহরি, ইফতার, নামাজ ও পবিত্রতার মধ্য দিয়ে পার হয়ে যায় রোজার মাস। রোজা রাখার জন্য এ মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে। সেই নিয়মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।
সেহরিতে যা খাবেন
দিনের শুরু হয় সেহরি দিয়ে। সেহরির খাদ্য তালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ, আঁশযুক্ত, সুষম, দ্রুত হজম হয়ে যায় এমন খাবার রাখুন। একই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করা উচিত। সেহরিতে আদর্শ খাবার হচ্ছে-
আঁশযুক্ত খাবার গম বা গম থেকে তৈরি খাবার, রুটি, শাকসবজি, ফল, বাদাম ইত্যাদি। লক্ষ্য রাখতে হবে, সেহরির খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার যেন থাকে। যেমন- ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত মাংস বা মাছ, ভাত বা রুটি, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি।
সম্পূর্ণ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সেহরির খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন সিদ্ধ ডিম ১টি, কমলা বা কলা ১টি, রুটি ২টি বা ভাত ১ কাপের মতো, শাকসবজি এক বা একাধিক প্রকার, লো ফ্যাট মিল্ক ১ গ্লাস।
সেহরিতে যা এড়িয়ে চলা উচিত: সেহরিতে ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার, মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ ও অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া উচিত নয়। যারা ধূমপান করেন, তারা এ মাসে ত্যাগ করতে পারেন।
ইফতারে যা খাবেন
একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন ইফতারের টেবিল যা দিয়ে সাজাতে পারেন তা হলো- ইফতারে খেজুর একটি আদর্শ খাদ্য হতে পারে। সারা দিনের দুর্বলতা দূর করতে ও শরীর সুস্থ সবল রাখতে খেজুর উত্তম খাবার। খেজুর খেয়ে রোজা খুলে তারপর পরিমাণমতো পানি পান করে নিন। টাটকা সবজিতে ভরা এক বাটি উষ্ণ স্যুপ রাখুন ইফতার তালিকায়। স্যুপ একদিকে যেমন পানির অভাব পূরণ করবে, অন্যদিকে পাকস্থলী সুস্থ রাখবে ও খাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে। ইফতারে বেশি করে সালাদ খেতে পারেন।
যা এড়িয়ে চলবেন: ইফতারে হঠাৎ করে অনেক কিছু খাওয়া সমীচীন নয়। ইফতারের পর চা, কফি ও সোডাজাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার খাবেন না। এগুলো বুকজ্বালা ও বদহজমের কারণ হতে পারে। সেহরিতে অতিরিক্ত লবণজাতীয় খাবার, যেমন- আচার, সল্টেড বিস্কিট ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়। সেহরিতে অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার খেলে বেশি পিপাসা পায়। সেহরিতে অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
এবার কিছু শরীরচর্চা
সুস্থ দেহ ও প্রফুল্ল মনের জন্য শরীর চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার জন্য শরীরচর্চা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয়। রোজা ও শরীরচর্চা দুটোই একসঙ্গে চলতে পারে। তবে রোজা রেখে শরীরচর্চা করতে গেলে কতিপয় বিষয়ের ওপর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
সুফল: না খেয়ে হাঁটতে থাকলে শরীরের চর্বি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে যা প্রকারান্তরে ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীরের ওজনকে বাগে রাখার জন্য রোজা রেখে শরীরচর্চার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই সময়ে সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। শরীরচর্চার ফলে মস্তিষ্ক, স্নায়ু কোষ এবং পেশী কোষগুলো সতেজ থাকে। এ কারণে রোজা রেখে শরীরচর্চা করলে শরীরে বাড়তি কিছু ইতিবাচক সুফল পাওয়া যায়। যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করছেন নেহায়েৎ রোজার কারণে এটি ছেড়ে দেওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত হবে না।
কখন শরীরচর্চা করবেন: রোজার সময় তারাবি নামাজের পরে শরীরচর্চা সবচেয়ে উত্তম। এ ছাড়া ইফতারের পরে ও শরীরচর্চা করা যেতে পারে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিংবা ইনসুলিন গ্রহণ করছেন তাদের ক্ষেত্রে ইফতারের পূর্বে শরীরচর্চা না করাই উত্তম। সময়, সুযোগ ও পরিবেশ থাকলে সেহরির পূর্বেও শরীরচর্চা করা যেতে পারে।
রোজা রেখে হালকা ও মাঝারি মাত্রার শরীরচর্চা করা যেতে পারে। ধীর গতিতে হাঁটা, ওজন উত্তোলন করা, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং এর মতো মৃদু মাত্রার ব্যায়াম করতে কোনো বাধা নেই। যে সমস্ত শরীর চর্চায় হৃদস্পন্দনের গতি মিনিটে ১৫০ এর বেশি হয় সে ধরনের শরীরচর্চা রোজা রেখে করা অনুচিত। পেশী শক্তি বর্ধক ব্যায়াম রোজার সময় বেশি উপযোগী। রিচ আপ, পুশ আপ, ওজন উত্তোলন, জায়গায় দাঁড়িয়ে উঠ-বস করা এ সমস্ত ব্যায়ামের পর্যায়ে পড়ে।
লক্ষনীয় বিষয়
গরমের সময় শরীরচর্চা করলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি ও লবণ ঘাটতি হতে পারে। পানি শূন্যতা সৃষ্টি হলে শরীরের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেজন্য পানিশূন্যতা যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। পানির ঘাটতি পূরণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানির উৎস শুধুমাত্র ট্যাপের পানি নয়। ফলমূল পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কমলা, আঙ্গুর, মালটা, টমেটো, শশা ইত্যাদি পানির অন্যতম উৎস। খাদ্যতালিকায় এ সমস্ত ফলমূল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইফতারের পর থেকে সেহরির পূর্ব পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরে যথেষ্ট পানি ধরে রাখতে হবে। মিহি শর্করা জাতীয় খাদ্যের তুলনায় তন্তু জাতীয় শর্করা খাদ্য গ্রহণ করার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। আর খাদ্যতালিকায় অবশ্যই আমিষের যোগান থাকতে হবে।
জ.ই বুলবুল: স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও সিনিয়র সংবাদকর্মী। সূত্র : আমাদের সময় অনলাইন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।