জুমবাংলা ডেস্ক : ভিসা মিলছে তো ছাড়পত্র মিলছে না। ছাড়পত্রের জন্য চাওয়া হচ্ছে নিয়োগ কর্তৃপক্ষের সত্যায়ন। কিন্তু সেই কর্তৃপক্ষ এই সত্যায়নে রাজি নয়। এমন দোলাচলে থেকে চলে যাচ্ছে ভিসার মেয়াদ।
এভাবে বাংলাদেশি অনেক কর্মী হারাচ্ছেন রুমানিয়ার শ্রমবাজার।
এসব বিষয় তুলে ধরে রুমানিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশি কর্মীরা জানান, রুমানিয়ার নিয়োগ কর্তৃপক্ষের সত্যায়ন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এটি ছাড়া বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ছাড়পত্র দিচ্ছে না।
এই ছাড়পত্রের বিষয়ে বিএমইটি বলছে, রুমানিয়া শ্রমবাজার থেকে কর্মীদের ইতালিসহ অন্যান্য দেশে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
কারণ, কর্মীরা সেখানে কাজ পাচ্ছেন না। সত্যায়নের মাধ্যমে কর্মীর কাজের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
রুমানিয়ার মালিকপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে কর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে খুব অল্পসংখ্যক কর্মী তাদের শ্রমবাজারে যান। এ জন্য সত্যায়ন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এদিকে রোমানীয় কম্পানি সত্যায়ন দিলেও বিএমইটির বিরুদ্ধে কর্মীর ছাড়পত্র বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। কর্মীরা বলছেন, বিএমইটির ছাড়পত্র নিতে খরচ হয় চার হাজার ৮০০ টাকা। সেখানে এখন প্রতিটি ছাড়পত্র বাবদ খরচ করতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, যা অনেক কর্মীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভিসা পেয়েও বেশির ভাগ কর্মী রুমানিয়া যেতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে বিএমইটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনো জবাব দেননি।
প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে তদন্ত হবে।
ছয় মাসেও মিলছে না ছাড়পত্র
রুমানিয়া গমনেচ্ছু কর্মী এবং ভিসা প্রক্রিয়ায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত নভেম্বর থেকে প্রায় ছয় মাস ধরে ছয় শর বেশি কর্মী রুমানিয়া যাওয়ার ভিসা পেয়েছেন। কিন্তু খুব অল্পসংখ্যক কর্মী যেতে পেরেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মী বলেন, ‘আমি চার মাস ধরে ভিসা নিয়ে বসে আছি। কিন্তু কবে রুমানিয়া যেতে পারব জানি না। এই ভিসার জন্য তিন বছর ধরে অপেক্ষা করছি। এখন পড়েছি সত্যায়নের জটিলতায়। ভিসার মেয়াদ আছে মাত্র সাত মাস। বিএমইটি থেকে বলছে, কম্পানির সত্যায়ন ছাড়া আমাকে ছাড়পত্র দেবে না।’
দীর্ঘদিন ধরে রুমানিয়ার ভিসার কাজ করছে সিপিসি বাংলা নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোবারক বাপ্পি বলেন, ‘সরকারের নিয়ম বলে, কর্মীর চাহিদা অনুযায়ী বিএমইটির ছাড়পত্র হয়। তার মানে কর্মীর চাহিদার সত্যায়ন থাকলেই বিএমইটির ছাড়পত্র হওয়া উচিত। তারা বলছে, কম্পানির সত্যায়ন ছাড়া ছাড়পত্র দেবে না। এখন কম্পানির সত্যায়ন লাগলে মালিককে কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে সত্যায়ন করতে হবে। একজন কম্পানির মালিক একজন কর্মীর জন্য কনস্যুলেট সেকশনে গিয়ে এই সত্যায়নটি করতে চাইবেন না। এতে বিএমইটি তার সত্যায়ন দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএমইটির এই ছাড়পত্র নিতে সরকারি হিসাবে খরচ হয় চার হাজার ৮০০ টাকা। সে জায়গায় বিএমইটি কর্মকর্তারা এই ছাড়পত্র দিতে নেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তাহলে চার হাজার ৮০০ টাকা বাদে বাকি টাকাটা কোথায় যাচ্ছে? যাঁরা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিতে পারছেন, তাঁদেরটা হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা চার হাজার ৮০০ টাকাই দিতে চান, তাঁদেরটা হচ্ছে না। এভাবে ঝুলে যাচ্ছে কর্মীদের ছাড়পত্র।’
এ বিষয় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমরা এ বিষয় অবগত নই। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয়, আমরা সে বিষয়ে তদন্ত করব। তবে যেহেতু কথাটা উঠেছে, আমি নিজ থেকে তদন্ত করব।’
বিএমইটির তথ্য
বিএমইটি সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে রুমানিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী যাওয়া শুরু। সহজেই ভিসা প্রাপ্তি ও কাজের সুযোগ রয়েছে বলে বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দের বাজার হয়ে উঠেছে এই শ্রমবাজার। গত চার বছরে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি কর্মী রুমানিয়া গেছেন। তবে বাংলাদেশে রুমানিয়ার কোনো স্থায়ী ভিসাকেন্দ্র নেই। বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসাসংক্রান্ত সব কাজ সারতে হয় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে রুমানিয়ার দূতাবাসে।
অস্থায়ী ভিসাকেন্দ্র খুলতে না খুলতেই বন্ধ
বিএমইটির তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুমানিয়া থেকে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। তারা কাকরাইলে বিএমইটির কার্যালয়ের অষ্টম তলায় অস্থায়ী ভিসা কনস্যুলেট চালু করে। ওই সময় ছয় মাসের মধ্যে ১৫ হাজার কর্মীকে ভিসা দেবে বলে ঘোষণা দেয় প্রতিনিধিদল। কিন্তু আড়াই-তিন মাস যেতে না যেতে বিএমইটির কর্মকর্তা ও রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এমনকি রোমানীয় প্রতিনিধিদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে গত বছরের মে মাসে অফিস গুটিয়ে দিল্লির দূতাবাসে ফিরে যায় প্রতিনিধিদল।
রুমানিয়া থেকে ইতালি
অভিযোগ রয়েছে, রুমানিয়া থেকে বেশির ভাগ বাংলাদেশি কর্মী ইতালি পাড়ি জমান। এ ক্ষেত্রে এক শ্রেণির দালাল কাজ করে। তারা ছোট ছোট কম্পানির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের আবেদন জানায়। এরপর কর্মীরা রুমানিয়ায় পৌঁছালে তাদের সঙ্গে ইতালি পাঠানোর চুক্তি করা হয়। অনেকে আবার দেশ থেকেই চুক্তি করে নেয়।
দীর্ঘদিন ধরে রুমানিয়ায় আছেন বাংলাদেশি কর্মী রায়হান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রুমানিয়ায় যাওয়া বেশির ভাগ কর্মীর লক্ষ্য থাকে ইতালি। অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মীদের বেশি আয়ের লোভ দেখানোর ফলে এ অবস্থা। এসব দালালের মাধ্যমে কর্মীরা ইতালি ও আশপাশের দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। দালালরা দেশে থাকতেই ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় চুক্তি করে।’
বর্তমানে ইতালিতে প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে বলে জানান রুমানিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, বর্তমানে রুমানিয়া সরকার কর্মীদের পালানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এতে চাইলেও সহজে কেউ ইতালি যেতে পারছে না।
এদিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এগুলো যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা তাদের বুঝিয়ে বলি, তোমাদের যে দেশের অনুমোদন রয়েছে, সেই দেশেই থেকো। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে চলে যেও না। কিন্তু এর পরও চলে যায়। আমরা সব কর্মীকে বিদেশ যাওয়ার আগে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিই। সেই প্রশিক্ষণে এগুলো বুঝিয়ে বলা হয়।’
পুরোনো হিন্দি গানে উদ্দাম ড্যান্স দিয়ে ঝড় তুললেন সুন্দরী যুবতী
রুমানিয়ার সঙ্গে কোনো রকম চুক্তি বা সমাঝোতা স্মারক নেই বলে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে জানান অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির। তিনি বলেন, ‘রুমানিয়ার শ্রমবাজার আমাদের অন্যান্য শ্রমবাজারের চেয়ে একটু আলাদা। রুমানিয়ার সঙ্গে আমাদের শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে কোনো চুক্তি বা সমাঝোতা স্মারক নেই। এখানে সবারই একটা সচেতনতার জায়গা দরকার রয়েছে। রুমানিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা জায়গা তৈরি করতে হবে, যাতে আমাদের কর্মীরা নিয়মিত যেতে পারে।’ সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।