জুমবাংলা ডেস্ক : কুষ্টিয়ায় এ বছর বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে রঙিন ফুলকপির আবাদ। দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু এবং বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশ ভালো। জেলা জুড়ে কৃষকরা আবাদ করে থাকেন সাদা ফুলের ফুলকপি। তবে এবারে বাজারের দাম ভালো পাওয়ার আশায় কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় কৃষকরা চাষ করছেন রঙিন ফুলকপি। গাছ দেখতে সাদা ফুলকপির মতো হলেও ফুল বিভিন্ন রঙের। এর মধ্যে হলুদ ও পিংক রঙের ফুলকপির চাষ করছেন কৃষকরা।
বিগত বছরের মতো কৃষকরা যেমন ৬টি উপজেলাতেই ফুলকপির আবাদ করেছেন, তার পাশাপাশি এবার বেশি করছেন রঙিন ফুলকপির চাষ। আর কুষ্টিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এ রঙিন ফুলকপি চাষ ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীসহ উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রবি মৌসুমে ৭৬৭ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৯১ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২২ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৫১ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ২৩০ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে সাদা ফুলকপির চাষ হয়েছে।
এ ছড়া যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় এই মৌসুমে মোট ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রঙিন ফুলকপির বাণিজ্যিক চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
চাষ পদ্ধতি সাদা ফুলকপির মতো হলেও সাদা ফুলের তুলনায় বেশি লাভজনক বলে জানান কৃষকরা।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি সাদা ফুলকপির আবাদ করি। এবারে কৃষি অফিস থেকে আমাকে রঙিন ফুলকপির চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছিল। সেখানে থেকে উপকরণও দিয়েছিল। আমি ২০ শতাংশ জমিতে এ রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। গাছ বেশ ভালো হয়েছে, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই ফুল আসবে। আশা করছি, বেশ ভালো ফলন ও দাম পাব।’
ভেড়ামারা উপজেলার ফকিরাবাদ এলাকার কৃষক মারুফ হোসেন বলেন, ‘মরিচ, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুনের চাষ করি। এ বছর আমি রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। বাজারে এ রঙিন ফুলের দাম বেশি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, পরিচর্যার খরচও দিয়েছে। আগামীতে এই এলাকায় অনেকেই এ চাষ করবেন।’
মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার মাধবপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহেদ মিয়া বলেন, ‘আমি এই রঙিন ফুলকপির চাষ কোনো দিন করিনি। পেঁয়াজ ও বিভিন্ন সবজির আবাদ করি। কিছু দিন আগে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমি বিভিন্ন উচ্চমুল্যের সবজি চাষের উপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেখানে জানতে পারি, সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপি বেশি লাভজনক। তাই কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় আমি ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। আমি বিষমুক্তভাবে চাষ করছি। পোকা মারার জন্য হলুদ ফাঁদ এবং সেক্স ফেঁরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই এলাকার আমার আগে কেউ এ রঙিন ফুলকপি চাষ করেনি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ফুলকপির চারা, জৈবসার, রাসায়নিক সার, হলুদ ফাঁদ এবং ফেরোমন ফাঁদ এবং পরিচর্যার জন্য খরচও দিয়েছে। তাছাড়া সাদা ফুলকপির মতোই চাষাবাদ করতে হয়। আমার জমিতে এখনো ফুল আসা শুরু করেনি। ১০-১২ দিনের মধ্যে ফুল চলে আসবে। গাছগুলো খুবই ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সাদা ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। আর রঙিন ফুলকপি ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এখন সবজির দাম দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। আশা করছি, দাম ভালো থাকলে আমিও অনেক বেশি লাভবান হতে পারব।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পে আওতায় আমরা রঙিন ফুলকপি চাষে প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে এলাকায় চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু রঙিন ফুলকপি চাষ নতুন প্রযুক্তি তাই সার্বক্ষণিক আমরা মাঠ পর্যবেক্ষণ করে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।’
পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী সেলিম আহম্মেদ বলেন, ‘বাজারে ক্রেতারা যেটাতে আকৃষ্ট হয়, সেটার দাম ভালো পাওয়া যায়। আমরা পাইকারি সাদা ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি করি। রঙিন ফুলকপির দাম ৫০-৬০ টাকা, তবে খুরচা বাজারে এলাকাভিক্তিক এর দাম কম-বেশি হয়।’
কুষ্টিয়া পৌর মিনিসিপি বাজারের ব্যবসায়ী হরিপুর এলাকার তুহিন আলী জানান, শীতকালীন সবজি বাজারে পাওয়া গেলেও দাম ভালো রয়েছে। সাদা ফুলকপি এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর রঙিন ফুলকপি এখনও বাজারে খুব একটা বেশি উঠেনি। কুষ্টিয়ার বাইরে থেকে কিছু রঙিন ফুলকপি আসছে, সেগুলো ১০০ টাকার উপরে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। তবে সাদার তুলনায় রঙিন ফুলকপির দাম সবসময়ই বেশি থাকে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, পুষ্টিগুণ ও বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপি চাষ বেশি লাভজনক। আগামীতে রঙিন ফুলকপির আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলাসহ যশোর কৃষি অঞ্চলের ৩১টি উপজেলায় রঙির ফুলকপি চাষে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী এবং উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে কৃষকরা রঙিন ফুলকপি বাজারজাত করে বেশ ভালো লাভবান হচ্ছে। পুষ্টিগুণ এবং বাজারে দাম ভালো হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহী রঙিন ফুলকপি চাষে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।