আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি তেল আমদানি চলতি বছরের নভেম্বরে রেকর্ড ৫৫ শতাংশ কমে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ২০২২ সালের জুনের পর এটি সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রেকর্ড পরিমাণ হ্রাসের ফলে ভারতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনও ভারতের সর্ববৃহৎ তেল সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে রাশিয়া। রুশ তেল আমদানিকারক দেশের তালিকায় নভেম্বরে ভারত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। নভেম্বরে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির ৪৭ শতাংশ কিনেছে চীন, এর পরে ভারত (৩৭ শতাংশ), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (৬ শতাংশ) এবং তুরস্ক (৬ শতাংশ)। রাশিয়ার পর ইরাক ও সৌদি আরব হচ্ছে ভারতের জ্বালানি তেলের মূল উৎস।
এর আগে, শিখ নেতা হরদীপ সিং হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার চাপের মুখে পড়ে ভারত। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, ভারতের রাষ্ট্রীয় এজেন্টরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। যদিও মোদি সরকার এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন’ বলে নাকচ করে দিয়েছে। তবুও অটোয়া-নয়াদিল্লির কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। অটোয়া ইতোমধ্যে ভারতের একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতও একই পদক্ষেপ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও এই ইস্যুতে কড়া মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং বলেছে ওয়াশিংটন মানবাধিকার এবং মৌলিক নীতিমালা সুরক্ষিত রাখবে। এবং এসব লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কোনো দেশ ছাড় পাবে না।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কানাডার তদন্তকে সমর্থন করে এবং ভারতকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে আহ্বান জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সঙ্গে ভারতের এমন বৈরিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর চাপ তৈরি করেছে এবং ভারতকে কূটনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। কানাডায় অভিবাসী শিখ সম্প্রদায় এ ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে এবং বিষয়টি কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও গুরুত্ব পাচ্ছে।
রপ্তানি কমার নেতিবাচক প্রভাব: হঠাৎই ভারতে রাশিয়ার তেল রপ্তানি গত আড়াই বছরের মধ্যে তলানিতে পৌঁছানোর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে রুশ তেলের মূল্যছাড়ের পরিমাণ কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে লোহিত সাগরে চলমান নিরাপত্তা সংকটের কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার অভিযোগে রুশ জ্বালানি তেলের পরিবহন-বিক্রির ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার ফলে ট্যাঙ্কার বিমার খরচ এবং অন্যান্য শিপিং ব্যয় বেড়ে গেছে। পাশাপাশি, রুশ পতাকাবাহী তেলবাহী জাহাজের ওয়াশিংটনের সম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা এই জ্বালানি রপ্তানি ফের জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহকারীদের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অংশ হিসেবে আমদানি বেড়েছে। পাশাপাশি, ভেনিজুয়েলা তেল বাজারে ফিরে আসার ফলে ভারতের কিছু বেসরকারি পরিশোধনাগার তাদের উৎস পরিবর্তন করেছে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে অতিসূলভ মূল্যের রুশ পেট্রোলিয়ামের চাহিদা ভারতের জন্য অটুট থাকবে।ইউক্রেন আক্রমণের দায়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, যার ফলে দেশটি তেল বিক্রিতে বড় ছাড় দিতে বাধ্য হয়। ভারত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সস্তায় জ্বালানি তেল আমদানি করতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর একটি মূল্যসীমা নির্ধারণ করে (প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের নিচে)। ভারত এবং চীন এই মূল্যসীমার সুবিধা নিয়ে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করে। ভারত জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য-নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু রাশিয়া থেকে সস্তা তেল পাওয়ার কারণে তারা তাদের আমদানিতে নতুন মেরুকরণ করে। এটি ভারতের অর্থনৈতিক ব্যয় কমাতে সাহায্য করে।
সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।