জুমবাংলা ডেস্ক : ‘একজন চিকিৎসক ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা তাকে লাশ ধরতে দেননি। ওঝা নাকি বলে গেছেন, চিকিৎসা শেষ করার আগ পর্যন্ত এই লাশ ধরা যাবে না’ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় সাপের কামড়ে মৃত এক তরুণকে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে জীবিত করার কথা বলে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে এক কবিরাজ। কবিরাজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর গতকাল মধ্যরাতে মৃত যুবককে দাফন করা হয়েছে।
শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে মৃত যুবকের পরিবারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে কড়ি (ছোট শামুকের খোল, যা ওঝা–কবিরাজ ঝাড়ফুঁকে ব্যবহার করেন) আনার কথা বলে পালিয়ে যান ওই ব্যক্তি।
জানা গেছে, মৃত সাইফুল ইসলাম (৪০) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। শুক্রবার রাতে বিলের পানিতে মাছ ধরতে গেলে তাকে সাপে কামড় দেয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অন্য ব্যক্তি টেঁটা দিয়ে সাপটি মেরে ফেলেন।
সাইফুলকে প্রথমে স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে নেওয়া হয়। ঝাড়ফুঁক শেষে কবিরাজের বাড়ি থেকে রাতেই তাকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুরে সাইফুলের জানাজা হওয়ার কথা ছিল। দাফনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে কবিরাজ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির শরীর শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু তার (সাইফুল) শরীর শক্ত হয়নি। ঘুমন্ত মানুষের মতো নড়াচড়া করছে। কড়ি নিয়ে এসে ঝাড়ফুঁক করলে তাকে সুস্থ করা সম্ভব’। কবিরাজের এমন কথার পর লাশ দাফন বন্ধ করা হয়।”
সাইফুলের স্বজনরা জানান, কবিরাজের কথামতো খোলা মাঠের মধ্যে কলাগাছ, দুধ, মহিষের শিংসহ বিভিন্ন জিনিস আনা হয়। এ সময় কবিরাজ জানান, চিকিৎসার জন্য কড়ি প্রয়োজন। এটি সাভারে পাওয়া যায়। এজন্য কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। তখন তারা তাকে ১৫ হাজার টাকা দেন। কিন্তু রাত ১২টা বেজে গেলেও সেই কবিরাজ আর ফিরে আসেননি।
উৎসুক জনতা ও গ্রামবাসী বলেন, “দুপুরে জানাজা হওয়ার কথা ছিল। সাত দিন আগের সাপে কাটা ব্যক্তিকেও তারা (কবিরাজ) জীবিত করেছেন। তাদের এরকম কথায় বিশ্বাস করে মৃতের স্বজনেরা এই আয়োজন করে।”
সাইফুলের ভাই আলী হোসেন বলেন, “কলাগাছ, দুধ, নতুন সিলভারের কলসিসহ অনেক কিছু ব্যবস্থা করেছি। পরে ওঝা জানায়, চিকিৎসার জন্য কড়ি লাগবে। কড়ি আনতে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি।”
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো. নাসিম বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা তাকে লাশ ধরতে দেননি। ওঝা নাকি তাদের বলে গেছেন, চিকিৎসা শেষ করার আগ পর্যন্ত এই লাশ ধরা যাবে না। ওই ওঝা কড়ি আনার কথা বলে আর ফিরে আসেননি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।