জুমবাংলা ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবান্ধব দেশ সৌদি আরবে ধারাবাহিকভাবে শ্রমিক যাওয়ার হার কমছে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ৫ হাজার শ্রমিক কম গিয়েছে। দেশটিতে গিয়ে শ্রমিকরা ঠিকমতো বেতন, কাজ না পাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণেই মূলত বিদেশগামীরা এই দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন এ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা। তবে শ্রমবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি অ্যাম্বাসিতে এনজাজ বন্ধ থাকার কারণে সাময়িকভাবে লোক যাওয়া কিছুটা কমেছে। তবে এই বিষয়টি অ্যালার্মিং নয়।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে (জুন-মে) বাংলাদেশ থেকে মোট কর্মী বিদেশে গেছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৪০১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক পাড়ি দিয়েছে সৌদি আরবে। দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মোট শ্রমিক গিয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৯ জন।
এর মধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে গড়ে ৪২ হাজারের বেশি শ্রমিক গেলেও সেটি মার্চ মাসে কমে দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ২৫৩ জনে। পরের মাসে আরো কমে দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ৬৮০ জনে। এরই ধারাবাহিকতায় মে মাসে সেটি আরো কমে দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৬৬৭ জনে। যদিও ২০২২ সালের এই সময়ে শ্রমিক গিয়েছিল ৩ লাখ ১৫ হাজারের মতো। অর্থাৎ সোয়া লাখেরও বেশি কম শ্রমিক দেশটিতে গিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে জনশক্তি বিশ্লেষক শামীম আহমদ চৌধুরী নোমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সৌদি আরবে ধারাবাহিকভাবে শ্রমিক কম যাওয়ার বিষয়ে বলেন, আমাদের ১৭৩টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের কাজ বন্ধ রয়েছে। দুই থেকে আড়াই মাস যাবৎ এটি বন্ধ থাকায় আমাদের এজেন্সিগুলো লোক পাঠাতে পারছে না। এই বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের এজেন্সি মালিকদের কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ধারাবাহিকভাবে মাসওয়ারি সৌদি আরবে শ্রমিক যাওয়ার হার কম হলেও এটা কিন্তু সাময়িক। তা ছাড়া আমাদের হাতে অনেক ডিমান্ড আছে। ভিসা জমার লিমিটেশন থাকায় লোক কম যাচ্ছে। এটা এনজাজ ছাড়াও হজের কারণেও শ্রমিক কম যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। এনজাজ বন্ধ কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুনেছি হ্যাকড হয়েছে। এখন এটি খুলতে হলে অ্যাম্বেসির সহায়তা লাগবে।
আমরা এ বিষয়ে অ্যাম্বেসিকে অনুরোধ করেছি। শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান আরো বলেন, আমাদের হাতে যে পরিমাণ সৌদি আরবের ডিমান্ড আছে, ঢাকাস্থ সৌদি অ্যাম্বাসির সহযোগিতায় আগামীতে আরো বেশি বেশি লোক পাঠাতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। এর আগে একাধিক জনশক্তি ব্যবসায়ী বলেন, সৌদি আরবে শ্রমিক যাওয়ার হার কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই মুহূর্তে অনেক নারী কর্মীর ভিসার ছাড়পত্র ঝুলে আছে। নারী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপসের মাধ্যমে শতভাগ অনলাইন সিস্টেম চালু হলেও এজেন্সি মালিকরা রহস্যজনক কারণে তাদের কর্মীদের ফাইল ক্লিয়ার করাতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে গত বৃহস্পতিবার ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপসের দায়িত্বরত কর্মীদের সাথে রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধিদের সাথে তর্কবিতর্ক ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধির সাথে ফাইল ছাড় করানো নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে তা গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত অনুসন্ধান করেও জানা যায়নি।
এই প্রসঙ্গে ব্যুরোর দায়িত্বশীল একজন আনসার নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমি প্রবাসীর’ সাথে এজেন্সি প্রতিনিধির গণ্ডগোল হয়েছে এই বিষয়টি সত্য। তবে ওই সময় আমি মেইন গেটে দায়িত্ব পালন করছিলাম। তবে যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিষয়টি সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। গণ্ডগোলের বিষয়টি নিয়ে জনশক্তি ব্যুরোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
এ প্রসঙ্গে একজন রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি বলেন, ব্যুরো থেকে আমাদেরকে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপসের অনলাইনে ফাইল জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা তাদের কথামতো ফাইল জমা দিয়েছি। অনলাইন মানে হচ্ছে দিনের কাজ দিনে হয়ে যাবে। কিন্তু একটা ফাইল চার-পাঁচ দিনেও হচ্ছে না। দেরি হওয়ার কারণে আমাদের কর্মীদের ফ্লাইট মিস হচ্ছে। এতে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বিএমইটিতে গেলে তাদের কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এজেন্সির প্রতিনিধিরা বলছেন, আমি প্রবাসী অ্যাপসে ফাইল অনেক এজেন্সি মালিক এখনো জমা দিচ্ছেন না। যার কারণে কয়েক হাজার নারী শ্রমিকের বহির্গমন ছাড়পত্র আটকে আছে। এতে সৌদিতে কর্মী যাওয়ার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সূত্র : নয়া দিগন্ত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।