আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুই দশকেরও বেশি সময় পর, গত এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো সৌদি রাজপরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে ইরান সফর করেন সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসরাইলের সঙ্গে সম্ভাব্য বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দিতে উৎসাহিত করা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে চারটি ভিন্ন সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সৌদি আরব ও ইরানের দুটি করে সূত্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি তার পুত্র প্রিন্স খালিদকে বিশেষ এক বার্তা নিয়ে তেহরানে পাঠান, যা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, গত ১৭ এপ্রিল তেহরানে ইরানি প্রেসিডেন্ট ভবনে এক গোপন বৈঠকে অংশ নেন প্রিন্স খালিদ। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সেখানে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের দল দ্রুত একটি পরমাণু চুক্তি চায়, এবং তারা বেশি সময় আলোচনা চালিয়ে যাবে না।
উপসাগরীয় দুটি সূত্রের মতে, প্রিন্স খালিদ আরও বলেন, ইসরাইলি হামলার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোই হবে শ্রেয়। আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একজন জ্যেষ্ঠ বিদেশি কূটনীতিক জানান, সৌদি মন্ত্রীর যুক্তি ছিল— গাজা ও লেবাননের সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্য ইতোমধ্যে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে, আর নতুন কোনো সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
যদিও প্রিন্স খালিদের ইরান সফরের খবর আগেই প্রচারিত হয়েছে, তবে বাদশাহ সালমানের গোপন বার্তার বিষয়বস্তু এবারই প্রথম প্রকাশ পেল। জানা গেছে, সফরকালে তিনি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠকও করেন। চারটি সূত্র বলছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রিন্স খালিদ সতর্ক করে বলেন, পরমাণু ইস্যুতে ওয়াশিংটনের আগ্রহ দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
এই বার্তার ইরানি নেতৃত্বের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিশ্চিত নয়। তবে রয়টার্সকে দেওয়া তথ্যে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের প্রতিক্রিয়া ছিল— ইরান চায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমাতে, এবং সে জন্যই তারা একটি চুক্তিতে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু ইস্যুতে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। এ পর্যন্ত পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে, যার সর্বশেষটি অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ মে ইতালির রোমে। আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে এখনও মতপার্থক্য রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে, কিন্তু ইরান স্পষ্ট করেছে— চুক্তি হোক বা না হোক, তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।