স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতীয় টিমের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের লাভস্টোরিতে রয়েছে ‘মেইন ভিলেন’ পরিবার। যে কোনও সিনেমার স্ক্রিপ্টের থেকে কম নয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডোনা রায়ের প্রেমকাহিনি। লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ নয়। পাশের বাড়ির মেয়েকেই মন দিয়ে বসেছিলেন মহারাজ। আর সেখানেই বিপত্তি।
প্রেমের চেয়ে সুন্দর আর কিছু হয় না। আবার প্রেমের মতো ঝুঁকি আর কিছুতে নেই। মিয়াঁ-বিবি রাজি হলেও এতে হুমকি থাকে। চোখরাঙানি থাকে। কথা না শুনলে বেদম প্রহারও জোটে অনেক সময়। ঘরবন্দি, ফোন কেড়ে নেওয়া, পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে দাদ্দারা— আরও কত কত কী! প্রেমের জয় বোধহয় এখানেই। প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ঠেলে, অসংখ্য বিনিদ্র রজনী পেরিয়ে প্রেম ঠিক আলোয় এসে পা দেয়। প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে মিয়াঁ-বিবি হয়ে যান তাঁরা। কিন্তু ভুলে যান কি প্রেমের সেই যন্ত্রণাময় দিনগুলো? ভরা ফ্রেব্রুয়ারি মানে হীমেল বাতাসে প্রেমের গন্ধ। বসন্ত এসে গ্যাছে! এবার তুলে ধরবো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মারকাটারি প্রেমকাহিনি।
সব প্রেমকাহিনিতে একজন দাদা, কাকা, মামা, কিংবা খোদ হবু শ্বশুর থাকেন। যাঁরা না-থাকলে প্রেমটা ঠিক তরতাজা হয়ে ওঠে না। বলা যেতে পারে, ওই রকম ‘তৃতীয়পক্ষ’ না থাকলে জমজমাট হয় না, চর্চা হয় না। কোনও কোনও প্রেমকাহিনিতে আবার পুরো পরিবারই হয়ে ওঠে প্রেমিক-প্রেমিকার পথের কাঁটা। ভারতীয় টিমের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের লাভস্টোরিতে রয়েছে ‘মেইন ভিলেন’ পরিবার। যে কোনও সিনেমার স্ক্রিপ্টের থেকে কম নয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডোনা রায়ের প্রেমকাহিনি। লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ নয়। পাশের বাড়ির মেয়েকেই মন দিয়ে বসেছিলেন মহারাজ। আর সেখানেই বিপত্তি।
সৌরভ-ডোনার ছেলেবেলায় তাঁদের দুই পরিবারের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তাঁদের প্রেমের জেরে দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সৌরভ যখন স্কুলে পড়তেন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ডোনার পিছু নিতেন তিনি। কখনও সৌরভ গিয়ে হাজির হতেন ডোনার স্কুলের গেটে। না, এতে বিরক্ত হতেন না ডোনা। উল্টে পুরো বিষয়টা উপভোগ করতে ডোনা। কারণ, মনে মনে তিনিও যে সৌরভকে পছন্দ করতেন। ছেলেবেলায় সৌরভ তাঁদের বাড়ির পাশে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। প্রায়ই শাটলকক গিয়ে পড়ত ডোনার বাড়িতে। সেই ছুতোয় ডোনা শাটলকক এগিয়ে দেওয়ার জন্য সৌরভের সামনে আসতেন। এক পলকে একটু দেখা হতে হতেই, সৌরভ-ডোনার প্রেম ধীরে ধীরে গাঢ় হতে থাকে। লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁরা দেখা করতে থাকেন। এই কলকাতা সাক্ষী রয়েছে মহারাজের প্রেমকাহিনির।
পড়ন্ত বিকেলে কখনও ময়দানে একসঙ্গে বসে সূর্যাস্তও দেখেছেন সৌরভ-ডোনা। কখনও আবার স্কুল পালিয়ে একটু গল্পগুজবও করেছেন তাঁরা। পাড়ার দুর্গাপুজো আর সরস্বতী পুজো ছিল দু’জনের দেখা হওয়ার সংযোগস্থল। পুজামন্ডপে সৌরভ সেই ছেলেবেলা থেকেই বাজাতেন ঢাক। আর ডোনা ছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্ত। অপলক চেয়ে থাকা, কখনও চোখ নামিয়ে নেওয়া, কখনও মুখে কিছু না বলা — প্রেমের এই সব সিম্পটম তখন থেকেই হয়তো বুঝতে শুরু করেছেন দু’জনে। কৈশোরপ্রেম, ছেলেবেলার বন্ধুত্ব যুগল হতে সময় নেয়নি।
এরপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাড়ির কাউকে না জানিয়েই ১৯৯৬ সালের ১২ অগস্ট আইনি বিয়ে সেরে ফেলেন সৌরভ-ডোনা। সেই দিক থেকে বলতে গেলে পাশের বাড়ির মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে নেন মহারাজ। ততদিনে সৌরভের ফুল ফুটেছে ২২ গজে। লুকিয়ে বিয়ে করার পরই সৌরভ চলে যান শ্রীলঙ্কায়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল। আর ডোনা, আগের মতোই তাঁর বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু লুকিয়ে বিয়ে করার পরও কোনওভাবে তাঁদের বিয়ের খবর পেয়ে যান সৌরভের বাবা। ব্যস, কাহানি মে টুইস্ট। একেবারে কমল মিত্র-উত্তমকুমার সিচুয়েশন। রাশভারী চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় ছেলের বিয়ের খবর পেতেই ফোন করেন। বাড়ি থেকে দূরে থাকার ফলে বাবাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টাই করেননি সৌরভ। বলেন, বাড়ি ফিরে এই বিষয়ে কথা হবে। বোধহয় ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে গিয়েছিলেন মহারাজ।
প্রেম থেকে পরিণতির রাস্তাটুকু অনেক সময়ই কঠিন হয়। আবার ওই পথ পেরিয়ে গেলে বাকিটুকু সহজ বলে মনে হয়। সৌরভ-ডোনার প্রেমকাহিনির পরিণতিটা অবশ্য সুখেরই। মিয়াঁ-বিবি রাজি থাকায় অবশেষে সৌরভ ও ডোনার পরিবারের সকলে তাঁদের বিয়ে মেনে নেয়। এরপর ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সমস্ত নিয়ম মেনে ছাতনাতলায় বসেন সৌরভ-ডোনা। হইহই করে বিয়ে হয় দুই প্রতিবেশীর। এরপর ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর তাঁদের একমাত্র সন্তান সানার জন্ম হয়। ২৫টা বছর একসঙ্গে কাটিয়েও ফেলেছেন সৌরভ-ডোনা। কিন্তু বাঙালির সেরা প্রেমকাহিনির অন্যতম হয়ে থেকে গিয়েছে সৌরভ-ডোনা সমীকরণ।
রাস্তা থেকে গাছ সরাতে নেমে পরলেন মাশরাফি, জায়গা করে দিলেন অ্যাম্বুলেন্সকে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।