জুমবাংলা ডেস্ক : সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ ও তাপমাত্রা কমায় সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার রাজশাহী, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পাবনা জেলার স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
রাজশাহী
রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা বাড়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। বাদ যায়নি কিন্ডারগার্টেনও। এদিকে শীতের কারণে রাজশাহীর ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। আবহাওয়া অফিস বলছে, কমতে পারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
রাজশাহীতে গত সাত দিনের আবহাওয়ার গতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ১৯ থেকে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার রাজশাহীতে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।
এমন অবস্থায় তীব্র শীতের কারণে জীবন-জীবিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। তাদের জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা সড়কে নামতে হয়েছে কাজের সন্ধানে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, আকাশ পরিষ্কার আছে, সকাল ৯টার পরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমলে বেশি শীত হবে। অপরদিকে শীত থেকে রক্ষার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম্বল বিতরণ করেছে।
দিনাজপুর
জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
আবহাওয়া অফিস থেকে জানা যায়, সোমবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯০ শতাংশ।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, শীতের প্রভাব আরো দু-একদিন থাকতে পারে। তবে তাপমাত্রা কমলেও শীতের অনুভূতি তীব্র থাকবে।
দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম আমাদের বার্তাকে জানান, তাপমাত্রা ১০ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন সকল স্কুলের পাঠদান বন্ধ রাখলেও অন্যান্য অফিসিয়াল কার্যক্রম চালু আছে। এদিকে, দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কম হওয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলো এখনো বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। তবে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নীলফামারী
চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে নীলফামারী জেলার সরকারি প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সকালে জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। তীব্র শীতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে বিদ্যালয় ছুটি দেয়ার পর সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে তাপমাত্রা উঁকি দিচ্ছে সুর্যের আলো।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. হাফিজুর রহমান জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণার পর সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দেখা যায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে আমাদের ছুটি দেয়া হয়েছে। এদিকে নীলফামারী সৈয়দপুর বিমান বন্দরের আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী সকাল ৯টায় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
রংপুর
চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে রংপুর জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বুধবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।
শহীদুল ইসলাম বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাপমাত্রা কমে আসায় এবং শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনদিন জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অফিসিয়াল কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে।
রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ছয়টা ও নয়টায় রংপুরে ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল নয়টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রাম
গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। শৈত্য প্রবাহের কারণে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা বহাল থাকবে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরো দুএকদিন থাকতে পারে।
লালমনিরহাট
শৈত্য প্রবাহের কারণে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, লালমনিরহাটে তাপমাত্রা কমার কারণে সোম ও মঙ্গলবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টায় লালমনিরহাট জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, শৈত্যপ্রবাহ চলমান থাকায় লালমনিরহাট জেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বগুড়া
শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় বগুড়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে বগুড়া আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক শাহ আলম জানান।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী জানান, তীব্র শীতের কারণে জেলার মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চৌধুরী জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় জেলার প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জয়পুরহাট
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নওগাঁর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, সোমবার সকাল ৯টায় জয়পুরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় সোমবার থেকে দুদিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী জানান, পরিস্থিতির উন্নতি হলে বুধবার থেকে যথারীতি পাঠদান শুরু হবে।
পাবনা
তীব্র ঠান্ডায় পাবনার সব উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদান কার্যক্রম একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। গত রোববার মধ্যরাতে জেলা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা আসে।
বিজ্ঞপ্তি দুটিতে বলা হয়েছে, পাবনার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসার কারণে সোমবার একদিনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল বন্ধ রাখতে উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
গত কয়েকদিন ধরেই ঈশ্বরদী উপজেলাসহ পাবনার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত শুক্রবার জেলায় গড় তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও শনিবার তা কমে ১০.২ ডিগ্রিতে দাঁড়ায়। গত রোববার তা আরো কমে হয়েছিলো ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সোমবারের রেকর্ড করা তাপমাত্রার ব্যাপারে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টার রেকর্ডেও তাপমাত্রা একই রয়েছে।
সম্প্রতি যেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামবে সেসব এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।