বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ধারণার ওপর ভিত্তিকরে তৈরি প্রথম নকশার ৫৫ বছর পর প্রথম সফল পরীক্ষা চালিয়ে মহাকাশ থেকে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ পৃথিবীতে সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
১৯৬৮ সালে সৌরশক্তিচালিত স্যাটেলাইটের প্রথম নকশা বানিয়েছিলেন নাসার প্রকৌশলী পিটার গ্লেসার।
বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (ক্যালটেক)’-এর গবেষক দল ঘোষণা দেয়, তাদের মহাকাশে ভাসমান প্রোটোটাইপ ‘স্পেস সোলার পাওয়ার ডেমোনস্ট্রেটর (এসএসপিডি-১)’ সূর্যালোক সংগ্রহ করে একে বিদ্যুতে রূপান্তর করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। এর মাধ্যমে ক্যালটেকের ‘প্যাসাডেনা’ ক্যাম্পাসের ছাদে ইনস্টল করা বিভিন্ন ‘মাইক্রোওয়েভ রিসিভার’-এ আলোও জ্বলেছে।
“আমাদের জানামতে, কেউ কখনও মহাকাশ থেকে তারহীন শক্তি স্থানান্তরের বিষয়টি দেখাতে পারেনি, এমনকি বিভিন্ন খরুচে প্রকল্পেও।” — এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন বৈদ্যুতিক ও চিকিৎসা প্রকৌশল বিষয়ের অধ্যাপক এবং ক্যালটেকের ‘স্পেস সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট (এসএসপি)’র সহ-পরিচালক আলি হাজিমিরি।
“নিজেদের সমন্বয় করা সার্কিট ও নমনীয় হালকা ওজনের কাঠামো ব্যবহার করে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আর এটিই প্রথম এমন ঘটনা।”
‘মাইক্রোওয়েভ অ্যারে ফর পাওয়ার ট্রান্সফার লো অরবিট এক্সপেরিমেন্ট’ বা সংক্ষেপে ‘মেপল’ নামে পরিচিত এই পরীক্ষা এসএসপিডি-১ প্রোটোটাইপের মাধ্যমে পরিচালিত তিনটি গবেষণা প্রকল্পের একটি।
দলটি আরও জানায়, এই ট্রান্সমিশন সেটআপ এমনভাবে নকশা করা যাতে মহাকাশে প্রোটোটাইপ পাঠানোর সময় প্রয়োজনীয় জ্বালানীর পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। আর এই নকশাও যথেষ্ট নমনীয় হওয়া প্রয়োজন যাতে এর বিভিন্ন ট্রান্সমিটার সহজেই কোনো রকেটে ভাঁজ করে আঁটানো যায়।
দীর্ঘদিন ধরেই মহাকাশভিত্তিক সৌরশক্তি নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে আগ্রহ দেখা গেছে। বিদ্যমান রূপে এটি খরচসাপেক্ষ হলেও সীমাহীন নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এই প্রযুক্তিতে, যেখানে মহাকাশে থাকা বিভিন্ন সৌরপ্যানেল দিনের যে কোনো সময় সূর্যালোক সংগ্রহ করতে পারে।
জাপানভিত্তিক সংবাদপত্র নিক্কেই বলছে, বেতারতরঙ্গ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ পাঠানোর মানে, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এতে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না।
ক্যালটেকের ‘স্পেস সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট (এসএসএসপি) বাদে আরও বেশ কয়েকটি দল মহাকাশভিত্তিক সৌরশক্তি আহরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
ক্যালটেকের ঘোষণার কয়েকদিন আগেই জাপানের মহাকাশ সংস্থা ‘জাক্সা’ ২০২৫ সালের মধ্যে মহাকাশ থেকে সৌরশক্তি পাঠানোর লক্ষ্যে এক ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। প্রকল্পটির নেতৃত্বে আছেন জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক, যিনি ২০০৯ সাল থেকেই মহাকাশভিত্তিক সৌরশক্তি নিয়ে কাজ করছেন।
প্রায় এক দশক আগে ২০১৫ সালে এক দশমিক আট কিলোওয়াট বৈদ্যুতিক শক্তি স্থানান্তর করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল জাপান। ওই পরিমান বিদ্যুৎ একটি বৈদ্যুতিক কেটলি চালানোর জন্য যথেষ্ট এবং তারা সেটি তারবিহীন উপায়ে পাঠিয়েছিলেন ৫০ মিটারের বেশি দূরত্বে।
‘স্পেস সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। আর মেপল ছাড়াও মহাকাশের বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কী ধরনের বৈদ্যুতিক কোষ সবচেয়ে কার্যকর, সেটি মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে এসএসপিডি-১।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।