এআই ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড চুরি, সাফল্য ‘প্রায় শতভাগ’

পাসওয়ার্ড চুরি

বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : টাইপিংয়ের বদলে আঙ্গুলের ছাপ বা চেহারা স্ক্যানিং করা বায়োমেট্রিক পাসওয়ার্ডের ব্যবহার এমন সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি কমানোর বেলায় সহায়ক হতে পারে।

পাসওয়ার্ড চুরি

বিজ্ঞানীরা এআই চালিত নতুন এক হ্যাকিং পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন, যা কেবল কিবোর্ডে টাইপ করা শব্দ শুনেই বিভিন্ন পাসওয়ার্ড অনুমান করতে পারে। আর এতে নির্ভুলতার মাত্রা ৯০ শতাংশেরও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এআরএক্সআইভি (arXiv) নামের আর্কাইভে পোস্ট করা গবেষণাপত্র অনুসারে, এই শ্রেণির সাইবার আক্রমণে কিবোর্ডের বিভিন্ন বাটনের শব্দ শেখার ও চেনার জন্য এআই ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটি’র জশুয়া হ্যারিসন’সহ বেশ কয়েকজন গবেষকের মতে, অ্যাপল ম্যাকবুক প্রো ডিভাইসের ‘কিস্ট্রোক’ বা বাটন চাপার শব্দ শোনার কাজটি কোনো স্মার্টফোনের মাইক্রোফোন ব্যবহার করে করলে তা ৯৫ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে বিভিন্ন কি অনুমান করতে পারে।

জুম কলের মাধ্যমেও বিজ্ঞানীরা এআই ব্যবস্থাটির নির্ভুলতা পরীক্ষা করেছেন। আর বিভিন্ন কিস্ট্রোক রেকর্ডিংয়ের জন্য এতে ব্যবহৃত হয়েছে ল্যাপটপের মাইক্রোফোন।

এই প্রক্রিয়ায় এআই মডেলটি ৯৩ শতাংশ নির্ভুলতা দেখিয়েছে। এ ছাড়া, স্কাইপ চালানো আরেকটি পরীক্ষায় নির্ভুলতার মাত্রা ছিল ৯২ শতাংশ।

গবেষকরা বলছেন, নতুন এই সাইবার আক্রমণের উর্বরক্ষেত্র তৈরিতে পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে গত দশকে কিবোর্ডের কাছাকাছি দুরত্বে থাকা মাইক্রোফোন প্রযুক্তির বিকাশ।

ব্যবহারকারীদের কিবোর্ডে কি চাপার বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া শনাক্ত করার মাধ্যমে কাজ করে মডেলটি। এর মধ্যে রয়েছে শব্দ, এর তীব্রতা ও প্রতিটি কি স্ট্রোকের পেছনে খরচ করা সময়ের মতো বিষয়গুলো।

এই পদ্ধতি পরীক্ষা করতে একটি ম্যাকবুক প্রো ল্যাপটপ ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। আর এতে ৩৬টি ভিন্ন কি’র প্রতিটি ২৫ বার করে চেপে বিভিন্ন ‘প্যাটার্ন’ শনাক্ত করা হয়।

পাশাপাশি, পরীক্ষার জন্য ‘আইফোন ১৩ মিনি’ মোবাইল ফোনও ব্যবহার করেন তারা। আর কিস্ট্রোকের রেকর্ডিং ধারণের জন্য একে কিবোর্ড থেকে ১৭ সেন্টিমিটার বা প্রায় সাত ইঞ্চি দূরে রাখা হয়েছিল।

পরবর্তীতে তারা জুম অ্যাপেও ল্যাপটপ কি রেকর্ড করেন। আর এতে ব্যবহৃত হয়েছিল ম্যাকবুকের বিল্ট-ইন মাইক্রোফোন।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এআই, মাইক্রোফোন ও ভিডিও কলের সমন্বয়ে তৈরি নতুন এই পদ্ধতি ‘কিবোর্ডের ওপর যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠছে’।

“কাছাকাছি দুরত্বের ফোনে রেকর্ড করা এসব কিস্ট্রোক প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় পরীক্ষক ৯৫ শতাংশ নির্ভুলতা অর্জন করেছেন, যা কোনো ল্যাংগুয়েজ মডেল ব্যবহার না করে সর্বোচ্চ নির্ভুলতার নজির।” –গবেষণায় লেখেন বিজ্ঞানীরা।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সুবিধা সকল কিবোর্ডে একইভাবে মিলবে না।

তারা আরও যোগ করেন, কিস্ট্রোকের বৈশিষ্ট্য বুঝোতে এআই মডেলটিকে অবশ্যই প্রতিটি কিবোর্ডের জন্য আলাদাবাবে প্রশিক্ষণ দিতে হয় গবেষণা অনুসারে, লোকজন নিজেদের লেখার ধরন বদলে ফেলার মাধ্যমে এই ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে পারেন।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, টাচ টাইপিং ব্যবস্থায় কিস্ট্রোক শনাক্ত করার ক্ষেত্রে নির্ভুলতার মাত্রা কমে দাঁড়ায় ৪০-৬৪ শতাংশে। এর পাশপাশি, বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের সমন্বয়ে তৈরি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে এমন আক্রমণ ঠেকানোর সুযোগ আছে।

চ্যাটজিপিটি’র মতো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলে বিভিন্ন শব্দ পূরণের ‘সাজেশন’ পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাসওয়ার্ডের মধ্যে গোটা শব্দ ব্যবহার করলে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

এদিকে, পাসওয়ার্ড লেখার সময় ভুয়া কি স্ট্রোক তৈরি করলে তাতে চুরির ঝুঁকি কমে আসে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।

সিনেমা হলের পর্দাকেও হার মানাবে স্যামসাংয়ের এলইডি টিভি

গবেষকরা বলছেন, টাইপিংয়ের বদলে আঙ্গুলের ছাপ বা চেহারা স্ক্যানিং করা বায়োমেট্রিক পাসওয়ার্ডের ব্যবহার এমন সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি কমানোর বেলায় সহায়ক হতে পারে।