আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের তৈরি ব্লু ঘোস্ট মিশন-১ সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করেছে। রবিবার এটি চাঁদের উত্তর-পূর্ব দিকে মেয়ার ক্রিসিয়াম এলাকার কাছে মনস ল্যাটরেইল নামক স্থানে পৌঁছে যায়।
এটি দ্বিতীয়বারের মতো কোনো বেসরকারি মহাকাশযানের চাঁদে সফল অবতরণ। এর আগে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনভিত্তিক ইনটুইটিভ মেশিনসের তৈরি ওডিসিয়াস রোবট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মালাপের্ট চন্দ্রখাতে অবতরণ করেছিল। তবে ওডিসিয়াস কিছুটা কাত হয়ে নেমেছিল, আর ব্লু ঘোস্ট সম্পূর্ণ সোজাভাবে অবতরণ করেছে। ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের প্রধান নির্বাহী জেসন কিম জানিয়েছেন, ব্লু ঘোস্ট স্থিতিশীল ও নির্ভুলভাবে অবতরণ করেছে।
প্রথম ছবি ও প্রযুক্তিগত সফলতা
অবতরণের পর পাঠানো প্রথম ছবিতে চাঁদের পাথুরে ও অসমতল ভূখণ্ড দেখা গেছে, যেখানে ব্লু ঘোস্টকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেভিগেট করতে হয়েছে। চূড়ান্ত অবতরণের সময় এটি কয়েক হাজার মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ থেকে ধীরে ধীরে মাত্র দুই মাইল প্রতি ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়।
৯৫ বছর বয়সী অ্যাপোলো-১১ মহাকাশচারী বাজ অলড্রিন বাসা থেকে এই সাফল্য উদযাপন করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শুভেচ্ছা বার্তা পোস্ট করেন এবং একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে তাকে থামস আপ দেখাতে দেখা যায়।
নাসার গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ব্লু ঘোস্ট মিশনের ডাকনাম দেওয়া হয়েছে ‘ঘোস্ট রাইডারস ইন দ্য স্কাই’। এটি নাসার সঙ্গে শিল্পখাতের অংশীদারিত্বের অংশ, যার লক্ষ্য আর্টেমিস মিশনের ব্যয় কমানো। চাঁদে আবারও মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে নাসার এই মিশন পরিচালিত হচ্ছে।
সোনালি রঙের ব্লু ঘোস্ট মহাকাশযান আকারে একটি জলহস্তির সমান। এটি ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়। এই মিশন চলার পথে পৃথিবী ও চাঁদের বিভিন্ন চমকপ্রদ দৃশ্য ধারণ করেছে। ব্লু ঘোস্ট ১০টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বহন করছে, যার মধ্যে রয়েছে চাঁদের মাটি বিশ্লেষণের যন্ত্র ও তেজস্ক্রিয়তা সহনীয় একটি কম্পিউটার।
ব্লু ঘোস্ট চাঁদের পূর্ণ এক দিন (পৃথিবীর ১৪ দিন) পর্যন্ত কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আগামী ১৬ মার্চ এটি চাঁদ থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য ধারণ করবে।
আরো একটি ল্যান্ডার আসছে
এদিকে, ইনটুইটিভ মেশিনসের তৈরি অ্যাথেনা ল্যান্ডার উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এটি ব্লু ঘোস্টের চেয়ে লম্বা ও হালকা। গত বুধবার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হলে, এটি ৬ মার্চ চাঁদের বিশাল মনস মাউটন মালভূমিতে অবতরণ করবে।
নাসার এই অভিযানের জন্য নোকিয়া বেল ল্যাবস চাঁদের জন্য প্রথম সেলুলার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা মহাকাশচারীদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে তারা ভয়েস কল ছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
চাঁদে অবতরণ অত্যন্ত জটিল, কারণ সেখানে বায়ুমণ্ডল না থাকায় প্যারাশুট কাজ করে না। মহাকাশযানগুলোকে থ্রাস্টার ব্যবহার করে ধীরে অবতরণ করানো হয়, যাতে দুর্গম ভূখণ্ড এড়িয়ে যাওয়া যায়।
ইনটুইটিভ মেশিনসের প্রথম মিশনের আগে শুধু পাঁচটি জাতীয় মহাকাশ সংস্থা চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করেছিল—সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও জাপান।
বর্তমানে নাসা তাদের আর্টেমিস কর্মসূচি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে, যাতে মঙ্গল গ্রহের অনুসন্ধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়। তবে, বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলোর এই ধারাবাহিক সাফল্য ভবিষ্যতে চাঁদে মানব উপস্থিতি নিশ্চিত করার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সূত্র : এএফপি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।