ভোরের কোমল রোদ্দুরে টবে লাগানো টমেটো গাছটির পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু, কিংবা বিকেলের আড্ডায় গন্ধরাজের মাদকতা ছড়ানো সুবাস – এই অনুভূতিগুলোই তো শহুরে যান্ত্রিক জীবনে প্রাণ ফিরিয়ে আনে। কিন্তু হঠাৎই কি লক্ষ করছেন পাতায় দাগ, ফুল ফোটেনি, ফল ধরে না? প্রচলিত পদ্ধতিতে হাজার চেষ্টার পরও হতাশ হচ্ছেন? আজই জেনে নিন সেই সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিকে বাগানের রহস্য উন্মোচন করার গোপন কৌশল, যা প্রজন্মান্তর ধরে কৃষকরা লুকিয়ে রেখেছিলেন প্রকৃতির কোলে। ঢাকার ধানমন্ডির ছাদ বাগান করছেন শিল্পী মিতা রহমান, যিনি এই “গোপন” পদ্ধতি প্রয়োগে এবার পেয়েছেন এক ঝুড়ি করলা, যা তার আশাকেও ছাড়িয়ে গেছে! আসুন, আমরা উন্মোচন করি সেই সবুজ জাদুর খবর।
সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিক: প্রাচীন জ্ঞানের আধুনিক প্রয়োগ (Secret Gardening Technique: Ancient Wisdom, Modern Magic)
“সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিক” বলতে সাধারণত সেইসব সহজ, প্রাকৃতিক, কম খরচে কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর কৌশলগুলোকে বোঝায়, যা প্রথাগত বই-পুস্তকে খুব কমই আলোচিত হয়, কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্থানীয় কৃষক ও উদ্যানপ্রেমীরা ব্যবহার করে আসছেন। এগুলো প্রায়ই প্রকৃতির গভীর পর্যবেক্ষণ ও বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি কোন জাদু নয়, বরং প্রকৃতির সাথে সুর মেলানোর বিজ্ঞান।
- প্রকৃতির ছন্দকে বুঝে নেওয়া: প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দ আছে – ঋতুচক্র, চন্দ্রকলা, দিন-রাতের তাপমাত্রার তারতম্য। সফল গার্ডেনিং মানে এই ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। গবেষণা যেমন ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা এক্সটেনশন এ উল্লেখ করে, চন্দ্রকলার সাথে রোপণের সম্পর্ক নিয়ে ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস থাকলেও এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে (যেমন চাঁদের আলো বীজের অঙ্কুরোদগমে প্রভাব ফেলতে পারে)।
- স্থানীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার: এই কৌশলের মূলমন্ত্র হল স্থানীয়, সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক জিনিস দিয়ে সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া। যেমন:
- কম্পোস্ট চা (Compost Tea): গোবর বা পাতাপচা সারকে পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে বা কয়েক দিন ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা তরল সার, যা গাছের শিকড় ও পাতার জন্য দ্রুত শোষণযোগ্য পুষ্টি ও উপকারী অনুজীব সরবরাহ করে। এটি একটি শক্তিশালী সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিক।
- সাথী ফসল (Companion Planting): কোন গাছ পাশাপাশি লাগালে একে অপরের উপকার করে বা ক্ষতিকর পোকামাকড় দূরে রাখে। যেমন বাংলাদেশে টমেটোর পাশে গাঁদা ফুল (পোকা দূরে রাখে), শিমের পাশে ভুট্টা (ভুট্টা শিমের লতার জন্য খুঁটি হিসেবে কাজ করে)।
- গাছের ভাষা বোঝা: গাছ তার অবস্থা পাতার রং, আকৃতি, বৃদ্ধির ধরন দিয়ে জানান দেয়। হলুদ হয়ে যাওয়া পাতা, কুঁকড়ে যাওয়া ডগা – এগুলোই গাছের ডিস্ট্রেস সিগন্যাল। এই সংকেতগুলো সঠিকভাবে পড়তে পারলেই বাগানের রহস্য উন্মোচন সম্ভব।
বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ুতে সিক্রেট টেকনিকের প্রয়োগ (Applying Secret Techniques in Bangladeshi Soil & Climate)
আমাদের দেশের মাটি (বিশেষ করে শহুরে এলাকার) ও জলবায়ুর (আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা) সাথে এই গোপন কৌশলগুলোর খাপ খাওয়ানো জরুরি।
- লাল মাটির যাদু (For Clayey Soil): ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেটের লাল মাটি (এটেল মাটি) জল ধারণক্ষমতা বেশি কিন্তু বাতাস চলাচল কম। এতে গাছের শিকড় শ্বাস নিতে কষ্ট পায়। সিক্রেট সমাধান:
- রাইজোব্যাকটেরিয়া (Rhizobacteria): এই উপকারী মাটির ব্যাকটেরিয়া মাটির গঠন উন্নত করে, শিকড়ের বিকাশে সাহায্য করে এবং গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কলার খোসা, ডিমের খোসার গুঁড়া, সামান্য গুড় বা মোলাসেস পানি দিয়ে ফার্মেন্ট করে তৈরি তরলে এই ব্যাকটেরিয়া প্রচুর জন্মে। এই “জৈবিক স্যুপ” মাটিতে প্রয়োগ করুন। ইউএসডিএ-এর গবেষণা রাইজোব্যাকটেরিয়ার উপকারিতাকে সমর্থন করে।
- ডীপ ওয়াটারিং টেকনিক: একবারে বেশি পানি না দিয়ে, কম পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে, তারপর কিছুক্ষণ রেখে আবার ভিজান (Deep Watering)। এতে মাটির গভীরে পানি পৌঁছায়, শিকড় নিচের দিকে বাড়তে উৎসাহিত হয়, যা গাছকে খরায় টিকিয়ে রাখে।
- বালু মাটির চ্যালেঞ্জ (For Sandy Soil): রাজশাহী, খুলনা অঞ্চলের বালু মাটি দ্রুত জল ধরে রাখতে পারে না, পুষ্টিও কম ধরে। সিক্রেট সমাধান:
- বায়োচার (Biochar): ধানের তুষ, নারকেলের ছোবড়া বা কাঠের টুকরো অল্প অক্সিজেনে পুড়িয়ে তৈরি কার্বনসমৃদ্ধ বায়োচার মাটির সাথে মিশালে তা পানি ও পুষ্টি ধারণক্ষমতা বহুগুণ বাড়ায়। এটি একটি শক্তিশালী কার্বন সিঙ্কও বটে।
- মালচিং (Mulching): শুকনো পাতা, খড় বা কাগজের টুকরো দিয়ে মাটির উপরিভাগ ঢেকে দেওয়া। এতে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে, তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে এবং আগাছা জন্মাতে পারে না। ঢাকার ডেমরার ছাদ বাগানি ফারহানা আক্তার শাক-সবজির গোড়ায় পুরনো পত্রিকার স্তর ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন।
- আর্দ্রতার সাথে লড়াই (Combatting Humidity): বাংলাদেশের উচ্চ আর্দ্রতা ছত্রাকজনিত রোগ (ড্যাম্পিং অফ, পাউডারি মিলডিউ) বাড়ায়। সিক্রেট সমাধান:
- দুধের স্প্রে: এক অংশ দুধ দশ অংশ পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে তা পাতায় একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে এবং কিছু ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিশেষ করে কুমড়া জাতীয় গাছে পাউডারি মিলডিউ নিয়ন্ত্রণে এটি কার্যকর।
- নিম অয়েল স্প্রে: নিমের তেল (২-৩ মিলি প্রতি লিটার পানিতে) প্রাকৃতিক কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং উপকারী পোকা (মৌমাছি, লেডিবার্ড) মারেনা।
- সঠিক রোপণ দূরত্ব: গাছের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁক রাখলে বাতাস চলাচল ভালো হয়, পাতা দ্রুত শুকায়, রোগের প্রকোপ কমে।
হাতেকলমে সিক্রেট টেকনিক: বাড়িতেই তৈরি করুন জাদুকরী টনিক (DIY Secret Gardening Tonics)
এই সহজে তৈরি করা যায় এমন জৈব দ্রব্যগুলোই আপনার সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিকে বাগানের রহস্য উন্মোচন করার মূল হাতিয়ার।
- অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পোস্ট চা (Supercharged Compost Tea):
- উপকরণ: ভালো পচা গোবর/কেঁচো সার/পাতাপচা সার (১ বালতি), গুড় বা মোলাসেস (১ কাপ), পানি (১০ বালতি), বড় পাত্র, বায়ু চলাচলের জন্য পাম্প (ঐচ্ছিক, তবে কার্যকারিতা বাড়ায়)।
- পদ্ধতি: পাত্রে পানি নিন। সার ও গুড় মিশিয়ে দিন। ভালো করে নাড়ুন। পাত্রের মুখ খোলা রাখুন বা বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন (পাম্প লাগালে ভালো)। ২৪-৪৮ ঘন্টা রেখে দিন, দিনে কয়েকবার নাড়ুন। দ্রবণ গাঢ় বাদামী রং ধারণ করবে এবং মাটির গন্ধ আসবে। ছেঁকে নিন। পাতায় স্প্রে করতে ১:১০ অনুপাতে (১ অংশ চা : ১০ অংশ পানি), মাটিতে সরাসরি দিতে ১:৫ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি গাছে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় ও উপকারী অনুজীবের সংখ্যা বাড়ায়।
- ডিমের খোসা ও কলার খোসার ক্যালসিয়াম-পটাশ বুস্টার:
- উপকরণ: ডিমের খোসা (শুকনো, ধুয়ে), কলার খোসা (টুকরো করে কাটা), পানি, বোতল।
- পদ্ধতি: একটি বোতলে ডিমের খোসা ভাঙা ও কলার খোসার টুকরো ভরুন। পানি দিয়ে ভরে দিন। মুখ বন্ধ করে ৭-১০ দিন রোদে বা উষ্ণ স্থানে রাখুন। মাঝে মাঝে মুখ খুলে গ্যাস বের করে দিন। ফার্মেন্টেশনের গন্ধ আসবে। ছেঁকে নিয়ে পানি টবে বা গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করুন (শক্তিশালী, তাই অল্প পরিমাণে শুরু করুন, যেমন ১ কাপ প্রতি গাছে)। এটি ক্যালসিয়াম (ডিমের খোসা) ও পটাশিয়াম (কলার খোসা) এর প্রাকৃতিক উৎস, যা ফুল-ফল ধারণ ও গাছের কাণ্ড শক্ত করতে সাহায্য করে।
- গাঁদা ফুলের কীট-তাড়াক স্প্রে:
- উপকরণ: তাজা গাঁদা ফুলের পাপড়ি (১ কাপ), পানি (২ কাপ), স্প্রে বোতল।
- পদ্ধতি: পাপড়িগুলো পানি দিয়ে একটি পাত্রে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। ছেঁকে নিন। এই দ্রবণ সরাসরি স্প্রে বোতলে ভরে গাছের পাতায় (বিশেষ করে নিচের দিক) ও কাণ্ডে স্প্রে করুন। এফিড, সাদামাছি, এমনকি কিছু লার্ভার বিরুদ্ধে কার্যকর। গাঁদার গাছই টমেটো বা বেগুনের পাশে লাগালে আরও ভালো প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
সিক্রেট টেকনিকের সফলতা: বাংলাদেশি উদ্যানপ্রেমীদের গল্প (Success Stories: Bangladeshi Gardeners’ Secrets Revealed)
- সিলেটের চা-বাগানের কাছাকাছি লিজা বেগমের শাক-সবজির বাগান: পাহাড়ি ঢালু জমিতে লিজা ম্যাটারিং (কচুরিপানা শুকিয়ে মাটি ঢেকে দেওয়া) এবং স্থানীয় নিম ও গাঁদা দিয়ে তৈরি স্প্রে ব্যবহার করে রাসায়নিক ছাড়াই উৎপাদন বাড়িয়েছেন। তার মতে, “চা বাগানের দাদি-নানিদের কাছ থেকে শেখা এই টোটকাগুলোই আসল সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিক।”
- খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে রফিকুল ইসলামের লবণাক্ততা জয়: মাটিতে বায়োচার (ধান খড় পুড়িয়ে তৈরি) এবং গোবর সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করে মাটির লবণাক্ততা কমিয়ে তিনি এখন সফলভাবে লাউ, কুমড়া, এমনকি কিছুটা সংবেদনশীল সবজিও চাষ করছেন।
- ঢাকার মোহাম্মদপুরের ছাদে ফারজানা ইয়াসমিনের ফুলের রাজ্য: সীমিত জায়গায় ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং এবং বিভিন্ন ফুলের সাথী চাষ (যেমন: গোলাপের পাশে ল্যাভেন্ডার, টমেটোর পাশে বেসিল) পদ্ধতি প্রয়োগ করে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমিয়েছেন এবং ফুলের উৎপাদন ও গন্ধ বাড়িয়েছেন। তার কথায়, “এগুলোই তো প্রকৃতির দেওয়া সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিকে বাগানের রহস্য উন্মোচন করার চাবিকাঠি।”
সচেতনতা ও সতর্কতা: গোপন কৌশলেও বিজ্ঞান চাই (Precautions: Science Behind the Secrets)
এই পদ্ধতিগুলো প্রাকৃতিক ও সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু সতর্কতা জরুরি:
- ফার্মেন্টেশনে অতিরিক্ত নয়: যেকোনো ফার্মেন্টেড দ্রব্য (কম্পোস্ট চা, কলার খোসার দ্রবণ) খুব বেশি ঘন বা বেশি পরিমাণে দিলে গাছের ক্ষতি হতে পারে। সর্বদা পাতলা করে (পানির সাথে মিশিয়ে) ও পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করুন।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: DIY স্প্রে বা দ্রব্য তৈরির সময় পাত্র, চামচ ইত্যাদি পরিষ্কার রাখুন। নোংরা পাত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।
- পরীক্ষামূলক প্রয়োগ: নতুন কোন দ্রব্য বা পদ্ধতি পুরো বাগানে প্রয়োগের আগে এক বা দুটি গাছে পরীক্ষা করে দেখুন কয়েক দিন। গাছের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন।
- সমস্যার সঠিক রোগ নির্ণয়: পাতায় দাগ বা গাছ দুর্বল হলে আগে সঠিক কারণ খুঁজে বের করুন (পানির অভাব/আধিক্য, পুষ্টির ঘাটতি, পোকা, রোগ ইত্যাদি)। ভুল নির্ণয়ে ভুল প্রতিকার ক্ষতি বাড়াবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) এর ওয়েবসাইট বা স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া ভালো।
- ধৈর্য ধরুন: জৈব পদ্ধতিগুলোর ফলাফল দেখতে রাসায়নিক সারের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে, কিন্তু স্থায়ী ও টেকসই হয়।
জেনে রাখুন (FAQs):
১. এই “সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিক” কি সত্যিই কাজ করে? নাকি শুধু লোককাহিনী?
অনেক “সিক্রেট” টেকনিকই প্রকৃতির গভীর পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, যার পেছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। যেমন, সাথী চাষে কিছু গাছের গন্ধ বা রাসায়নিক নিঃসরণ (Allelopathy) অন্য গাছ বা পোকাকে প্রভাবিত করে। কম্পোস্ট চায়ে উপকারী অনুজীব মাটির স্বাস্থ্য ও গাছের পুষ্টি শোষণে সরাসরি ভূমিকা রাখে। তবে কিছু বিশ্বাস (যেমন নির্দিষ্ট চন্দ্র তিথিতে রোপণ) বৈজ্ঞানিকভাবে সর্বত্র স্বীকৃত নয়, কিন্তু স্থানীয় অভিজ্ঞতা এর কার্যকারিতা দেখাতে পারে। মূল কথা হল পরীক্ষা করে দেখা এবং স্থানীয় অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া।
২. বাংলাদেশের শহুরে ছাদ বাগানে এই টেকনিকগুলো কিভাবে প্রয়োগ করব?
শহুরে ছাদ বাগানে এই টেকনিকগুলো খুবই কার্যকর। সীমিত স্থানে সাথী চাষ, ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং, বড় টবে বায়োচার মেশানো, কম্পোস্ট চা বা ডিমের খোসার দ্রবণ ব্যবহার করা যায়। মালচিং করে পানি বাঁচানো এবং মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিম তেলের স্প্রে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের ভালো সমাধান। ছাদের ওজন ও পানিনিকাশির দিকটি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৩. কম্পোস্ট চা তৈরিতে কি গুড় বা মোলাসেস ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, গুড় বা মোলাসেস মূলত অনুজীবের জন্য খাদ্য (কার্বন উৎস) সরবরাহ করে। এর বিকল্প হিসেবে খুব সামান্য চিনি, গুঁড়, এমনকি পুরনো ফলের রস (যেমন আনারসের খোসা) ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গুড় বা মোলাসেসই সবচেয়ে সহজলভ্য ও কার্যকর। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত চিনি দিলে অপ্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মাতে পারে।
৪. ডিমের খোসা ও কলার খোসার দ্রবণ কি সব ধরনের গাছের জন্য ভালো?
হ্যাঁ, এটি প্রায় সব ধরনের শাকসবজি, ফল ও ফুলের গাছের জন্য উপকারী, কারণ ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম সব গাছেরই প্রয়োজনীয় ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট। তবে, কিছু অ্যাসিড-প্রিয় গাছ (যেমন: আজালিয়া, ব্লুবেরি) এর জন্য মাত্রাতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে খুব অল্প পরিমাণে বা প্রয়োগ না করাই ভালো। শুরুতে অল্প গাছে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
৫. এই জৈব পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ফলন কত দিনে বাড়বে?
ফলন বাড়ার সময় গাছের প্রকার, মাটির বর্তমান অবস্থা, জলবায়ু এবং পদ্ধতির ধারাবাহিকতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়ন একটি ধীর প্রক্রিয়া। প্রথম কয়েক সপ্তাহে গাছের সার্বিক স্বাস্থ্য ও সবুজায়নে উন্নতি দেখা যেতে পারে (বিশেষত কম্পোস্ট চা ব্যবহারে)। ফুল-ফলের পরিমাণ বাড়তে এক বা একাধিক মৌসুম লেগে যেতে পারে, কারণ মাটির জৈব পদার্থ ও অনুজীবের ভারসাম্য তৈরি হতে সময় লাগে। ধৈর্য্য ধরা এবং নিয়মিত প্রয়োগই সাফল্যের চাবিকাঠি।
৬. নিম তেল স্প্রে করার পর গাছে কি কোন ক্ষতি হয়? বিশেষ করে ফুল গাছে?
নির্দেশিত মাত্রায় (প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ মিলি) এবং সন্ধ্যার দিকে (তীব্র রোদে নয়) স্প্রে করলে সাধারণত গাছের ক্ষতি হয় না। তবে, খুব সূক্ষ্ম বা কোমল পাতার কিছু ফুল গাছ (যেমন: অর্কিড, কিছু গোলাপ জাত) এ সামান্য প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই প্রথমে গাছের একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। স্প্রে করার পর ভালোভাবে পানি দিয়ে গাছ ভিজিয়ে দিলে ঝুঁকি কমে। নিম তেল উপকারী পোকা (মৌমাছি) কে কিছুটা প্রভাবিত করতে পারে, তাই ফুল ফোটার সময় সরাসরি ফুলে স্প্রে না করাই ভালো।
এই তো গেলো সেই সব গোপন খবর, যা আপনার হাতের নাগালেই ছিলো প্রকৃতির আঁচল থেকে ঝরে পড়া! মনে রাখবেন, সিক্রেট গার্ডেনিং টেকনিকে বাগানের রহস্য উন্মোচন করা মানে কোন জাদুদণ্ড নয়, বরং প্রকৃতির ভাষা শোনা, তার ছন্দে পা মেলানো। গোবর, কলার খোসা, ডিমের খোসা, গাঁদা ফুল – এই সহজ উপাদানগুলোই হতে পারে আপনার বাগানের সোনার ফসলের চাবিকাঠি। এটি শুধু ফলনই বাড়ায় না, তৈরি করে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও স্বাস্থ্যকর সবুজ অভয়ারণ্য। আজই বেছে নিন একটি কৌশল – হয়তো কম্পোস্ট চা বানানো, কিংবা টমেটোর পাশে দুটি গাঁদা ফুলের চারা রোপণ – এবং নিজের চোখে দেখুন প্রকৃতির এই বিস্ময়কর জাদু। আপনার হাতের ছোঁয়াতেই ফুটে উঠুক সতেজ সবুজের অফুরন্ত সম্ভাবনা। শুরু করুন, আজই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।