ধর্ম ডেস্ক : ইসলামে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিলো না। কিন্তু ইদানিংকালে নানা বিষয়ে বিতর্ক দেখা দিচ্ছে। যেমন ১২৮৪ সালের আগে কখনো তারাবির নামাজের বিশ রাকাত নিয়ে কেউ বিতর্ক করেনি। এমনি একটি বিষয় সেহরি ও সাহরি।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً তোমরা সাহুর (সেহেরি) করো, কারণ সাহুরে (সেহেরিতে) বরকত রয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম)
হাদিসে ভোর রাতের খাবার বুঝাতে ‘সাহুর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষায় তা ‘সেহরি’ ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সেহেরি শব্দটি এখন বাংলা। এটাই যুগে যুগে বাংলা সাহিত্য, পত্র-পত্রিকা, গল্প-উপন্যাস, পুঁথি-কবিতা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সর্বস্তরের মানুষের নিকট সুপরিচিত। এখন আরবি বললে এটাকে সাহুর বলতে হবে, আর বাংলায় বললে সেহরি বলতে হবে। এর বাইরে আর কোনো শব্দ নেই।
আর বাংলা ব্যাকরণের দৃষ্টিতে বিদেশি কোন শব্দ যখন বাংলা ভাষায় ‘আত্তীকরণ’ হয় তখন সেটাকে পরিবর্তন করা ভাষা বিকৃতির শামিল। যেমন: ইংরেজিতে Table (টেবল) কিন্তু সেটা বাংলায় টেবিল। Apple (এ্যাপল) বাংলায় আপেল। এমন বহু বিদেশি শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে।
এখন কোন অতি পণ্ডিত ব্যক্তি এসে যদি বাংলায় কথা বলার সময় টেবিলকে ‘টেবল’ আর আপেলকে ‘এ্যাপল’ বলা শুরু করে তাহলে তা নি:সন্দেহে হাস্যকর ও ভাষা বিকৃতির শামিল বলে গণ্য হবে।
সে কারণে প্রচলিত ‘সেহরি’ শব্দকে ভুল আখ্যা দিয়ে ‘সাহরি; বলা অনুচিত বলে মনে করি। কারণ সেহরি শব্দটি বহুল প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ বাংলা। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে ভোররাতের খাওয়া বুঝাতে হাদিসে ‘সাহুর; শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে; সাহরি নয়।
সুতরাং কেউ হুবহু হাদিসের শব্দ ব্যবহার করতে চাইলে ‘সাহুর’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারে; সেহেরি বা সাহরি কোনটাই নয়।
সেহেরি মানে কি যাদু?
অনেকেই বলছেন, ‘সেহরি’ মানে না কি যাদু। কিন্তু এ কথা সঠিক নয়। বরং আরবিতে সাহরুন বা সিহরুন শব্দের অর্থ: যাদু। যেমন: আরবি অভিধানে লেখা হয়েছে, سحَرَ يَسحَر ، سَحْرًا وسِحْرًا ، فهو ساحِر ، والمفعول مَسْحور আর ‘আস সাহারু’ অর্থ: শেষ রাত-ফজরের পূর্ব মূহুর্ত।
السَّحَرُ :آخرُ الليل قبيل الفجر সুতরাং দেখা গেল, ‘সেহেরি’ শব্দটির অর্থ যাদু বলা অভিধান সঙ্গত নয়।
সাহরি বলা যাবে কি?
ভোর রাতের খাবার বুঝাতে ‘সাহরি’ শব্দটি শুদ্ধ নয়। কারণ হল, হাদিসে ‘সাহরি’ শব্দের অর্থ: আমার বক্ষ বা সিনা। যেমন: নিম্নোক্ত হাদিসটি, আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি প্রায়ই বলতেন, تُوُفِّيَ فِيْ بَيْتِيْ وَفِيْ يَوْمِيْ وَبَيْنَ سَحْرِيْ وَنَحْرِيْ আমার প্রতি আল্লাহর এটা নি’য়ামাত যে, আমার ঘরে, আমার পালার দিনে এবং আমার গণ্ড ও সিনার মাঝে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকাল হয়। (বুখারি ৪৪৪৯)
সর্বোপরি, এটা এমন কোন শব্দ নয় যে, পরিবর্তন করলে তা শরিয়ত পরিপন্থী কাজ হবে বা গুনাহ হবে। যেমন, কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম ইত্যাদি। এগুলো পরিবর্তন করা শরিয়ত সম্মত নয়।
মোটকথা, সর্বস্তরের বাংলাভাষী মানুষ যে শব্দটি উচ্চারণ করে ও বুঝে এবং বাংলা ভাষা সাহিত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সে শব্দটি অবিকৃত রাখাই ভালো মনে করি। সুতরাং ‘সাহরি’ নয় বরং ‘সেহেরি’ বলাই অধিক উপযুক্ত। আল্লাহ সর্বাধিক ভালো জানেন। মূল প্রবন্ধ: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।