আরএম সেলিম শাহী : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিনে দুর্বৃত্তের হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে পড়া শেরপুর জেলা কারাগার দীর্ঘ দেড় মাসেও সচল হয়নি। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের দায়সারা ভ‚মিকার কারণেই এখনও তা সচল করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। অন্যদিকে হামলার দিনে পালিয়ে যাওয়া ৫ শতাধিক হাজতি ও কয়েদি আসামির মধ্যে এখনও দুই-তৃতীয়াংশ বাইরে থাকায় বাড়ছে যেমন নানা অপরাধ, তেমনি কারাগার সচল না থাকায় পুলিশী কার্যক্রম সীমিত থাকার পাশাপাশি ভিন্ন জেলার কারাগারে যাওয়ার আশঙ্কায় আদালতেও বিভিন্ন মামলায় অনেক আসামি হাজির হচ্ছেন না।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরপরই ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার জনতা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে জড়ো হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে কারাগার ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল কারারক্ষী। ওই অবস্থায় প্রায় ৮/১০ হাজার মানুষ লাঠিসোটা, রামদা, দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওইসময় তারা কারাগারের প্রধান ফটকটি ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ৫১৮ জন বন্দীকে বের করে আনে। পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দীদের মধ্যে ১০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ৭০/৮০ জন বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। আর অন্যরা বিচারাধীন ও তদন্তাধীন বিভিন্ন মামলার আসামি।
হামলাকারীরা কারাগারের ৬১টি অস্ত্রের মধ্যে ৯টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দীদের মজুত করা খাদ্যসামগ্রী, কারাগারের বিভিন্ন মালামালসহ টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যান। সেই সঙ্গে কারাগারের মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তাদের সহায়তায় কয়েকটি অস্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়। দুর্বৃত্তরা কারাগারের প্রধান ফটক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাগারের সুপার ও জেলারের অফিস কক্ষ ও বাসভবনের সকল আসবাবপত্র, রান্নাঘর, ক্যান্টিন পুড়িয়ে দেয়। ভাংচুর করে আসামিদের ওয়ার্ড, কনডেম সেল ও কারা হাসপাতালে। ফলে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় জেলা কারাগার। এদিকে ঘটনার কয়েকদিন পর কারাগারের জেলার বাদী হয়ে ১০/১২ হাজার অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে তা নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু হয়। কিন্তু সেই ঘটনার ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও ওই মামলার বিষয়েও কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে জেলা কারাগারের লুণ্ঠিত অস্ত্রসহ মালামাল ফেরত বা অবস্থান জানানোর জন্য স্থানীয় ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে মাইকিং করার পর লুণ্ঠিত ৯টি অস্ত্রসহ বেশ কিছু মালামাল ফেরত পাওয়া গেলেও রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষের কার্যকর তৎপরতার অভাবে খোদ কারাগার সচলকরণে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা।
ঘটনার বিষয়ে জেলা কারাগারের সুপার মো. হুমায়ুন কবীর খান বলেন, ঘটনার পরপরই কারা অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। সেইসাথে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কারাগার দ্রুত সচলকরণে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা খুব শীঘ্রই মেরামত-সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে লুট হওয়া কিছু গুলি পাওয়া না গেলেও ৯টি অস্ত্রই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর পলাতক হাজতি-কয়েদিদের মধ্যে ইতোমধ্যে আটকসহ ১২৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৯৯ জন জামিন পেলেও ২৬ জনকে পার্শ্ববর্তী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে কারাগার সচলকরণে কাজ শুরু করার বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার মাহবুবুর রহমান জানান, কারাগারের মেরামত ও সংস্কার কাজের টেন্ডার আহবান করতেই নানা প্রক্রিয়ার কারণে সময় নিতে হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগুলো প্রায় সম্পন্ন হলেও আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ধ্বংসস্তুপ থেকে কারাগারকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে সংস্কার কাজ শেষ করে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেলা কারাগার সচল করা সম্ভব হবে। এর মধ্য দিয়ে কারাগারকেন্দ্রিক নানা সমস্যারও অবসান ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।