ডা. এম. শমশের আলী : হার্টের অসুস্থতার প্রধান লক্ষণ বুকব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ও বুক ধড়ফড়। কাজেই শ্বাসকষ্ট হলে হার্টের অসুস্থতার কথা সর্বাগ্রে মনে করতে হবে। বিশেষ করে ৫০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের বেলায় এ বয়সের শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের কারণ হার্টের সমস্যা। মানবদেহের বুক ও পেটকে দেহের মধ্যে একটি অঙ্গও বলা যেতে পারে। এ দুটি অঙ্গকে একটি পর্দা দিয়ে ভাগ করা আছে যার নাম ডায়াফ্রাম। ডায়াফ্রাম একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত ওঠা-নামা করতে পারে, আপনার কোনোরূপ ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এই ডায়াফ্রাম নিজে নিজেই ওঠা-নামা করে, আপনার যা অজান্তেই ঘটে যার মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়া পরিচালিত হয়। আবার আপনি ইচ্ছে করেও তাকে বন্ধ রাখা বা প্রয়োজনীয় পরিমাণে ওঠা-নামা করাতে পারবেন। যেমন পেটে চাপ প্রয়োগ করা, হাচি-কাঁশি দেওয়া, বমি করা, শ্বাস নেওয়ার সময় পেট ওঠা-নামা করে কারণ এ সময় বাতাস ঢোকানোর জন্য ফুসফুসের বেশি জায়গার প্রয়োজন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য সব সময় পেটকে ওঠা-নামার প্রয়োজন হয়, তবে যাদের পেট খুব বেশি নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারায়, বিশেষ করে মেদভুঁড়ি, পেটে পানি জমা হওয়া, বাচ্চা থাকা অবস্থায় তাদের পরিশ্রম বা কাজ করতে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়। বুকের মধ্যে দুটি প্রধান অঙ্গ থাকে ফুসফুস ও হার্ট এবং (হার্টের সঙ্গে সংযুক্ত বড় কয়েকটা রক্তনালি) হার্ট চলার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ফুসফুসের চলার জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়, তবে ফুসফুসে বাইরে থেকে দুই ধরনের বস্তু প্রবেশ করে থাকে বাতাস (অক্সিজেন দেওয়ার জন্য) এবং রক্ত (অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য)। ফুসফুসে এই দুই ধরনের বস্তু প্রবেশ করে এ দুই ধরনের বস্তুর মধ্যে অনেক সময় জায়গার প্রতিযোগিতা হতে দেখা যায়।
হার্টে যদিও চারটি প্রকোষ্ঠ আছে কিন্তু মোট মাংসপেশির ৮০ ভাগ লেফট ভেন্টিকেলে যার মাধ্যমে পাম্প হয়ে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়। তাই কোনো কারণে হার্ট (লেফট ভেন্টিকল) রক্ত পরিমাণমত পাম্প করতে না পারার ফলে ফুসফুসের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে বাতাস গ্রহণে জায়গা কমে যায়, এতে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় কারণ ফুসফুস বেশি বাতাস প্রবেশ করাতে পারছে না শরীরে ঠিকমতো অক্সিজেন ও রসদের অভাবে শারীরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়ে অনেক সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, এ অবস্থাকে (LVF) বা (HF) হার্ট ফেইলুর বলা হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় হার্ট ফেইলুর হলে ডায়াফ্রাম ও বুকের চারপাশের মাংসসমূহ অধিক কাজ করে অক্সিজেন ও রসদ সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করে ব্যক্তিকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে তবে সমস্যার আরও অবনতি হলে কম পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বছরে অন্তত একবার হলেও রক্তের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করা উচিত। প্রয়োজনে কিডনি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন হবে। হার্ট ফেইলুর জটিল অবস্থায় শ্বাসকষ্ট অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ব্যক্তি বেশি পরিমাণে পরিশ্রম করলে, মানে ভারী কাজ করলে সাময়িকভাবে একই ধরনের হার্ট ফেইলুরের লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট হয় এবং বিশ্রাম গ্রহণ করলে ফুসফুসে রক্ত প্রবেশের পরিমাণ কম হতে থাকে কারণ পরিশ্রমকালীন মাংসপেশি নড়াচড়া করার ফলে সর্বশরীর থেকে বেশি পরিমাণে রক্ত হার্ট (Right atrial I Right ventrical)) হয়ে ফুসফুসের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে ফুসফুসে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্রামে ধীরে ধীরে অল্প সময়ের মধ্যে ফুসফুসে রক্ত প্রবেশের পরিমাণ কমতে থাকায় ব্যক্তির উপসর্গগুলো দূরীভূত হয়ে যায়, তবে আবারও ভারী কাজ করলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এটাই স্বাভাবিক। খুব দ্রুত নিরাময় হয় বলে সাধারণ মানুষ এটাকে গ্যাসের সমস্যা অথবা খাওয়া-দাওয়ার তারতম্য বা অন্য কোনো ব্যাখ্যা স্থির করে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ না করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করে। অথচ হার্টের অসুস্থতার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণে অনেক অনাকাক্সিক্ষত জটিলতা সহজেই এড়ানো সম্ভব।
লেখক : পরিচালক ও চিফ কনসালটেন্ট শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।