লাইফস্টাইল ডেস্ক : আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো সালাত আর সিজদা হলো এ আমলের শ্রেষ্ঠ কর্ম। এটা ব্যতীত এক রাকাতে সালাতের অন্য কোনো রুকনই দুবার পালন করা হয় না। অর্থাৎ এক রাকাতে দুবার সিজদা করতে হয়। সিজদাতেই জমিন দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে, যা সালাতের অন্য সব কর্মের তুলনায় বেশি; কারণ বান্দা সাতটি অঙ্গ দিয়ে সিজদা করে। সালাত সম্পাদনের স্থানগুলোরও নামকরণ করা হয়েছে এ শব্দ থেকে। আর তাই ওই স্থানকে মসজিদ বলা হয়। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘সিজদা হলো সালাতের রহস্য, এর শ্রেষ্ঠ রুকন ও রাকাতের সমাপ্তি। আর এর আগের রুকনগুলো এর জন্য প্রারম্ভিকাস্বরূপ।’
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে সিজদার কথা বহুবার উল্লেখ হয়েছে; কখনো তা সম্পাদনের আদেশ দ্বারা ‘তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর এবং তাঁর ইবাদত কর। (সুরা নাজম-৬২)। আবার যারা সিজদা করে না, তাদের নিন্দা করে বলেছেন, তাদের কী হলো যে তারা ইমান আনে না এবং যখন তাদের কাছে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদা করে না। (ইনশিকাক-২০-২১)। আবার কখনো পালনকারীদের প্রশংসা করার কথা উল্লেখ করেছেন যা হচ্ছে : আল্লাহ বলেন, এরাই তারা, নবীদের মধ্যে আল্লাহ যাদের অনুগ্রহ করেছেন, আদমের বংশ থেকে এবং যাদের আমি নুহের সঙ্গে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর ইবরাহিম ও ইসরাইলের বংশোদ্ভূত, আর যাদের আমি হেদায়াত দিয়েছিলাম এবং মনোনীত করেছিলাম। ‘তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াত তেলাওয়াত করা হলে তারা লুটিয়ে পড়ত সিজদায় এবং কান্নায়।’ (সুরা মারইয়াম-৫৮)।
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) কিয়ামুল্লাইলে দীর্ঘ সিজদায় লুটিয়ে আল্লাহর প্রতি নিজের মুখাপেক্ষিতা ও দুর্বলতা তুলে ধরতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তিনি এত দীর্ঘ সিজদা করতেন যে তাঁর মাথা ওঠানোর আগে তোমাদের কেউ পঞ্চাশটি আয়াত পড়তে পারে’। (সহিহ বুখারি)। তিনি সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অসিলা গ্রহণ করতেন এবং বলতেন : ‘হে আল্লাহ! আপনারই জন্য সিজদা করছি, আপনার প্রতি ইমান আনছি। আমার চেহারা সিজদাবনত সে সত্তার জন্য যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, এর আকৃতি দান করেছেন, এর মধ্যে কান ও চোখ ফুটিয়েছেন, কতই না মহান বরকতময় আল্লাহ যিনি সর্বোত্তম স্রষ্টা।’ (সহিহ মুসলিম)।
সাহাবাদের ইবাদতের অন্তর্গত ছিল আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদা করা। ফলে তাঁদের চেহারায় নির্মলতা এবং বিনয়ের প্রতিফলন দেখা যেত। যেহেতু সিজদা হলো আল্লাহর প্রতি বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশের সর্বোচ্চ স্তর, সেহেতু তা আল্লাহর অধিক নৈকট্যদানকারী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি সিজদা করুন এবং কাছেবর্তী হন।’ (সুরা আল আলাক-১৯)। এখানে সিজদার সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোয়ার মাধ্যমে চাইতে আদেশ করা হয়েছে, কারণ বান্দা তখন সাড়া প্রদানকারী আল্লাহর অতি কাছাকাছি অবস্থান করে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা সিজদাবস্থায় তার রবের অতি কাছেবর্তী হয়; কাজেই তোমরা তখন বেশি বেশি দোয়া কর। (সহিহ মুসলিম)।
সিজদা হচ্ছে রবের দরবারে মিনতি করা, বিনম্রতা প্রকাশ এবং তাঁর মহত্ত্বের সামনে নিজেকে অবনমন করা। এটা উচ্চ মর্যাদা লাভ ও গুনাহ মোচনের মাধ্যম। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের উচিত আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদা করা। কেননা তুমি/তোমরা আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করলে বিনিময়ে আল্লাহ সেজদাকারীর একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন ও একটি গুনাহ মোচন করবেন।’ (সহিহ মুসলিম)।
হাশরের ময়দানে যখন মানুষের ওপর সাধ্যাতীত বিপদ নেমে আসবে তখন তারা এমন ব্যক্তির অনুসন্ধান করবে যিনি রবের কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবেন; যেন তাদের কষ্ট দূরীভূত হয়। অবশেষে যখন তারা নবী (সা.)-এর কাছে আসবে; যেন তিনি রবের কাছে বান্দাদের মাঝে ফয়সালা করার জন্য সুপারিশ করেন। নবী (সা.) বলেন, ‘তারপর আমি আমার রবের কাছে যাব ও অনুমতি চাইব, ফলে আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। অতঃপর আমি আমার প্রতিপালককে যখন দেখতে পাব, তখনই আমি তাঁর সামনে সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ তাঁর মর্জি অনুসারে যতক্ষণ আমাকে সেভাবে রাখার রেখে দেবেন। তারপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা ওঠাও, যা চাওয়ার চাওÑ দেওয়া হবে, বলÑ শোনা হবে এবং সুপারিশ করÑ গ্রহণ করা হবে। তখন আমার প্রতিপালকের শিখিয়ে দেওয়া প্রশংসারাজি দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব। তারপর আমি শাফায়াত করব।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
আর এটি (সিজদা) এমন একটি আলামত যার মাধ্যমে নবী (সা.) কিয়ামতের দিন তাঁর উম্মতকে চিনবে। নবী (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের প্রত্যেককেই আমি কেয়ামতের দিন চিনতে পারব; কেননা কেয়ামতের দিন সিজদার কারণে আমার উম্মত উজ্জ্বল চেহারাবিশিষ্ট এবং অজুর কারণে উজ্জ্বল হাত-পাবিশিষ্ট হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
এ সিজদাই পরকালে মুমিন ও মুনাফেকদের মাঝে পার্থক্যকারী আলামত হিসেবে প্রকাশ পাবে। ফলে কেয়ামতের মাঠে শুধু তারাই আল্লাহকে সিজদা করতে সক্ষম হবে, যারা দুনিয়াতে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সিজদা করেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ নজরুল ইসলাম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।