জুমবাংলা ডেস্ক : রোজার শুরুতে হইচই ফেলে দিয়েছেল তরমুজ। ঢাকা শহরে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়। তখনও তরমুজ পুরোপুরি পরিপক্ক হয়নি। বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ক তরমুজ বিক্রি করে দেন কৃষকরা। ১৫ দিন পার হতেই চিত্র ভিন্ন। গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টিতে তরমুজ নষ্টের ভয়ে কৃষকরা। শিলা বৃষ্টির ভয়ে তরমুজ কেটে ফেলেছেন তারা। তবে বর্তমান বাজারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে দাবি কৃষকদের।
মুন্সীগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর তীরে বসে তরমুজের পাইকারি হাটের আড়ত। এই আড়তে গত কয়েকদিনে তরমুজের সরবরাহ বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেছে। এতে হতাশ চাষি ও আড়তদাররা। এমন পরিস্থিতিতে এই হাটে আসা চাষিদের অনেকেই ট্রাক ও ট্রলারে তরমুজ ফেলে রাখছেন।
এই হাটের ১৩টি আড়ত ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, হাটের আড়তগুলোতে এখন তরমুজ রাখার তিল পরিমান ফাঁকা জায়গা নেই। গাদাগাদি করে মজুদ করতে হচ্ছে তরমুজ। অনেকে চাষি ট্রাক কিংবা ট্রলারে তরমুজ রেখে বিক্রির চেষ্টা করছেন।
আড়তদাররা জানিয়েছেন, বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই হাটে তরমুজ আসে। সাধারণত প্রতিদিন আসে প্রায় এক লাখ পিস। গত তিন দিন ধরে এর সংখ্যা বেড়েছে। এ সময় গড়ে প্রায় দেড় লাখ পিস তরমুজ আসছে। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও দেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, দোহার ও গাজীপুর থেকে পাইকাররা তরমজু কিনতে আসেন এখানে।
তরমুজ নিয়ে আসা একাধিক কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪-৫ দিন আগে সামান্য শিলা বৃষ্টি হয়েছে। শিলা বৃষ্টি হলে তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রতিদিনই কম বেশি ঝোড়ো বৃষ্টি হচ্ছে। তাই শিলা বৃষ্টির ভয়ে তরমুজ কেটে বিক্রির চেষ্টা করছেন কৃষকরা। এতে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দাম অনেক কমে গেছে।
মুক্তারপুর হাটে তরমুজ বিক্রি করতে এসেছেন পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালীর এলাকার কৃষক আরিফ হোসেন। গত দুই দিন ধরে ঘাটে ট্রলার ভিড়িয়ে বসে আছেন তিনি। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এখনও তরমুজ বিক্রি করেননি। তিনি বলেন, ‘চার দিন আগে আমাদের এলাকায় শিলা বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে তরমুজও এখন পরিপক্ক। শিলা বৃষ্টির কারণে তরমুজ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। এমন হলে পথে বসতে হবে।
তাই কেটে বাজারে নিয়ে এসেছি। এখানে এসে ঘাটে ট্রলার ভিড়িয়ে বসে আছি। বেচাঁবিক্রি তেমন নাই। আগে যে তরমুজ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন তা ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে তরমুজ বিক্রি করলে আমাদের প্রচুর লোকসান হবে।’
একই এলাকার চাষি মিজান হাওলাদার বলেন, ‘শিলা বৃষ্টির কারণে জমি হতে তরমুজ সব তুলে ফেলছি। এখন আড়তে বিক্রি করতে পারছি না। পরিবহন খরচও অনেক বেশি। এগুলো এলাকায় ফিরিয়ে নিলে ডাবল খরচ হবে। যে তরমুজ উৎপাদন করতে আমাদের ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়েছে এখন তা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’
এই হাটের মাহিন এন্টার প্রাইজের আড়তদার আলমগীর কবির। তিনি বলেন, ‘গত শনিবার থেকে তরমুজের দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। শিলা বৃষ্টির কারণে তারা তরমুজ জমি হতে তুলে নিয়ে এসেছে। আড়তে প্রচুর তরমুজের আমদানি হয়েছে কিন্তু কাস্টমার কম। যার ফলে পাইকার আসছে না।’
মুক্তারপুর হাটের তরমুজের আড়তগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি তরমুজ সরবরাহ হচ্ছে প্রতিনিত। অন্যদিকে দাম কম হওয়ায় বাজারে পাইকার নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বাবা-মাকে যে অবস্থা দেখে সুহানার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল
বাজারের তরমুজ আড়ত সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক বলেন, ‘তরমুজের অবস্থা খুবই খারাপ। একটি ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের তরমুজ আড়তে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ৪ দিন আগেও যা ৫০০ টাকায় বিক্রি হতো। শিলা বৃষ্টির কারণে কৃষক সব তরমুজ কেটে একসঙ্গে আড়তে নিয়ে আসছে। যার কারণে আমরা আড়তে তরমুজের জায়গা দিতে পারছি না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।