আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে আগেই প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছে সিঙ্গাপুর। এবার কার্বন নিরপেক্ষতা ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সক্ষমতা অর্জন করতে চায় দেশটি। একই সঙ্গে এশিয়ার নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রে পরিণত হতে চায়। এতে সফল হলে কঠিন কার্বন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আসিয়ান সদস্যদের জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে দেশটি। খবর নিক্কেই এশিয়া।
সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওং গত অক্টোবরে ঘোষণা দেন, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনতে চায় তারা। সিঙ্গাপুরে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত। কারণ দেশটির বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। সিঙ্গাপুর যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো একই সময়ে কার্বন নিরেপক্ষ হতে চায়, তাহলে বিদ্যুৎ খাতের ডিকার্বনাইজিংয়ে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে সবচেয়ে বেশি।
ডিকার্বনাইজিং লক্ষ্য অর্জনে মোট সরবরাহের ৭০ শতাংশ হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়ার পাশাপাশি সিসিইউএস প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করছে সিঙ্গাপুর। যদিও এটি যথেষ্ট হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
সিঙ্গাপুর আয়তনে নিউইয়র্ক সিটির চেয়েও ছোট। ফলে দেশটির হাতে বিকল্পগুলোও সীমিত। ভবন ও জলাশয়ে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন করতে পারলেও মেগা সৌর প্যানেল স্থাপন, জল বা বায়ু বিদ্যুৎ সুবিধার জন্য খুব বেশি জায়গা নেই দেশটিতে। এছাড়া অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশটিকে ৪ গিগাওয়াট স্বল্প কার্বন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে, যা অন্তত চারটি পারমাণবিক চুল্লির উৎপাদন সক্ষমতার সমান।
২০২২ সালে জুনে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে সিঙ্গাপুর। লাওসের একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বহনের পাওয়ার লাইন দিয়ে এ বিদ্যুৎ আনা হয়। কিন্তু দুই ট্রানজিট দেশ থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া রাষ্ট্রচালিত ইউটিলিটিগুলোয় হুইলিং চার্জ প্রদানের বিষয়ে আলোচনার জন্য আসিয়ানের প্রথম বহুজাতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন প্রকল্পটি প্রস্তুত হতে নয় বছর সময় লেগে যায়। এব বাধা এড়াতে সিঙ্গাপুর এখন ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সমুদ্রের তলদেশে তার নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। দীর্ঘতম লাইনটি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত। বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে ১৯৯৭ সালে আসিয়ান পাওয়ার গ্রিড (এপিজি) উদ্যোগ চালু করে আসিয়ান জোট। সেখানে জোটভুক্ত দেশগুলো নিজেদের জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গ্রিডগুলোকে আন্তঃসীমান্ত ট্রান্সমিশন ও জ্বালানির উৎসগুলোর বিকাশের সুবিধার্থে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আসিয়ান এ উদ্যোগের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনুসরণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আসিয়ানের সে উদ্যোগ মসৃণভাবে এগোয়নি। জাপানের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকসের সিনিয়র রিসার্চ ডিরেক্টর ইচিরো কুতানি বলেন, ‘এপিজির লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক একীকরণের প্রচার করা, কিন্তু রাষ্ট্রচালিত ইউটিলিটিগুলো তাদের নিজস্ব কাজ করতেই পছন্দ করে। ইইউর ইউরোপিয়ান কমিশন আছে, যার নীতি প্রয়োগ করা মতো ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আসিয়ানের এমন একটি সংস্থা নেই।’
সিঙ্গাপুর আসিয়ানের বাইরে থেকেও জ্বালানি সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। এসব পরিকল্পনার একটি হলো উত্তর অস্ট্রেলিয়ার একটি স্থানীয় স্টার্টআপের তৈরি মেগা সাইট থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণ। এজন্য সমুদ্রের তলদেশে প্রায় চার হাজার কিলোমিটারের বেশি তার স্থাপন করতে চায় তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।