লাইফস্টাইল ডেস্ক : শিশুরা তাদের প্রথম কয়েক বছরে বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তবে, তাদের ঘুমের রুটিন তৈরি করা অনেক বাবা-মায়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এমনকি, নিখুঁত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা শিশুদের স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি শুধু কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়; এর সঠিক পদ্ধতি জানাও খুব জরুরি। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি করতে হবে এবং এর উপকারী দিকগুলো।
Table of Contents
শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি: সঠিক পদ্ধতি জানুন
শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি এক ধরনের শিল্প যা সঠিক পদ্ধতি ও নিয়ম মেনে করতে হয়। শিশুর ঘুম প্রয়োজন তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য। শিশুর বয়স অনুযায়ী ঘুমের সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে; যেমন নবজাতকের জন্য প্রয়োজন হয় 14-17 ঘণ্টা ঘুম, আর দুই বছর বয়সী শিশুর জন্য এই হার কমে 11-14 ঘণ্টা হয়ে যায়। তাই, আমাদের প্রথমে জানতে হবে ঘুমের একটি সঠিক রুটিন কীভাবে তৈরি করা যায়।
১. শিশুদের বয়সের উপর ভিত্তি করে ঘুমের সময় নির্ধারণ
প্রথম ধাপ হলো, শিশুর বয়সের সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ঘুম নির্ধারণ করা। মনোবিদ ও ডাক্তারের মতে, নবজাতকদের ঘুম প্রয়োজন হয় 14-17 ঘণ্টা, ১-২ বছর বয়সীদের 11-14 ঘণ্টা এবং ৩-৫ বছর বয়সীদের 10-13 ঘণ্টা। এ সময়ের অভ্যন্তরীণ ঘুমের চক্র তৈরি করতে হবে।
২. নিয়মিত শিডিউল তৈরি করুন
শিশুর জন্য একটি সুশৃঙ্খল শিডিউল তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক দিন একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। শিশুকে রাতের বেলা একই সময়ে বিছানায় শোতে শিখিয়ে দিন; এতে তার শরীর নিজেই এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
- প্রতি রাতে একই সময়ে শিশুকে বিছানায় পাঠান।
- প্রতিদিন সকালে একই সময়ে শিশুকে জাগালেও সংসারিক কাজগুলো করুন।
- দিন এবং রাতের মধ্যে পৃথকীকরণ করতে পরিষ্কারভাবে দেখা গেল কীভাবে কার্যকলাপ হচ্ছে।
৩. ঘুমানোর পরিবেশ সৃষ্টি করুন
শিশুর ঘুমের পরিবেশ যত বেশি সংবেদনশীল হবে, তত বেশি শিশুর ঘুম ভালো হবে। ঘর শান্ত, অন্ধকার, শান্ত এবং সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে। এ ছাড়া, ঘুমানোর আগে ভিন্ন ধরণের কথোপকথন ও গল্প বলা শিশুকে শীতল করতে সাহায্য করবে। কিছু পরামের মধ্যে বিবেচনা করতে হবে:
- ঘরটি শান্ত এবং অন্ধকার যেন থাকে।
- শিশুকে ভালোভাবে শুইয়ে দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বিছানা থাকুক।
- ঘুমানোর আগে স্ক্রিনের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৪. নিদ্রা রীতি করণ
নৈমিত্তিক ঘুম থেকে আগে শিশুর জন্য একটি নির্দিষ্ট রীতি গড়ে তুলুন। শিশু যেন চিনতে পারে একটি বিশেষ আবহাওয়ার সৃষ্টি করা হচ্ছে যেন সে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে পারে। এতে নিম্নলিখিত স্টেপগুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:
- একটি শান্ত গল্প পড়া যেতে পারে;
- একটি হালকা গান পরিবেশন করা যেতে পারে;
- শিশুকে স্নান করানো যেতে পারে।
৫. খাদ্য এবং পানীয়ের উপর খেয়াল রাখা
শিশুর ঘুমানোর আগে কি দেওয়া হচ্ছে তা খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। বিশেষ করে ক্যাফেইন জাতীয় খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। এমনকি, ঝাল খাবারের কারণে রাত্রে ছটফট করে উঠতে পারে।
- সবসময় চেষ্টা করুন শিশু ঘুমানোর আগে সুষম আহারের ব্যবস্থা করতে।
- বেডটাইমের 1-2 ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
৬. লক্ষণগুলো চিহ্নিত করুন
শিশুর ঘুমের সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য কিছু লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন:
- শিশুর ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া।
- ঘুমানোর সময় কান্নাকাটি করা।
- দীর্ঘ সময় ঘুমানোর পরও পূর্বাভাসের মতো ছটফট করা।
শিশুর স্বাস্থ্য ও বিকাশে ঘুমের প্রভাব
শিশুর ঘুমের প্রয়োজনীয়তার প্রভাব শুধুমাত্র তাদের স্বাস্থ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মানসিক বিকাশেও ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ভালো ঘুম শারীরিক বৃদ্ধি, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শিশু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে, যা প্রতিদিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
শারীরিক স্বাস্থ্য
শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্য মৌলিকভাবে ঘুমের উপর নির্ভর করে। সঠিক ঘুম শিশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুর শরীরের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্যেও ঘুমের প্রভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত ঘুম শিশুদের আরো আত্মবিশ্বাসী, উদ্যমী এবং মেজাজে থাকায় সহায়তা করে। মানসিক চাপ ও অস্থিরতার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে।
গবেষণার ফলাফল
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো শিশুদের তুলনায় কম ঘুমানো শিশু বেশি অস্থির এবং তাদের মনোযোগের অভাব দেখা যায়। (সূত্র: Centers for Disease Control and Prevention)
বিশেষ কিছু টিপস
শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি করতে কিছু অতিরিক্ত টিপস মনে রাখতে পারেন:
- শিশুদের জন্য রজনীগন্ধার ভালো একটি প্রভাব সৃষ্টি করে, এটি ঘুমিয়ে পড়ার জন্য সহযোগিতা করে।
- শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে বা গান গাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন; এতে তাদের ঘুমানোর পরিবেশ প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হবে।
- ঘুমের পূর্বে প্রযুক্তি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা, সুযোগভাবে তাদের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।
শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক পদ্ধতি জানলেই আমরা সফল হতে পারবো।
জেনে রাখুন-
FAQ 1: শিশুর ঘুমের সঠিক সময় কত হওয়া উচিত?
শিশুর বয়স অনুযায়ী ঘুমের সময় নির্ধারণ করা উচিত। নবজাতকের জন্য এটি 14-17 ঘণ্টা এবং ১-২ বছর বয়সীদের জন্য 11-14 ঘণ্টা।
FAQ 2: শিশুদের জন্য ঘুমের রুটিন তৈরি করতে কি করা দরকার?
শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি করতে নিয়মিত শিডিউল, উপযুক্ত পরিবেশ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
FAQ 3: ঘুমানোর সময় শিশু কি খাবে?
ঘুমানোর আগে খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, ক্যাফেইন এবং ঝাল খাবার পরিহার করা উচিত।
FAQ 4: ঘুমের অভাবে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
ঘুমের অভাবে শিশুদের মানসিক চাপ ও অস্থিরতার অনুভূতি বাড়ে, যা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়।
FAQ 5: রাতে ঘুমানোর আগে শিশুদের কি করার পরামর্শ দেবেন?
রাতে ঘুমানোর আগে পরিচিত রীতি অনুসরণ করা, গল্প পড়া বা গান গাওয়া উপকারী হতে পারে।
FAQ 6: ঘুমের সমস্যা চিহ্নিত করার উপায় কি?
শিশুর ঘুমের সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য ঘুম ভাঙা, কান্নাকাটি করা বা ছটফট করার লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
শিশুর ঘুমের রুটিন তৈরি করা একটি সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব; শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশ করার জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি তাদের মন ও দেহের জন্য অপরিহার্য। অভিভাবকরা শিশুদের ঘুমের আগ্রহ বাড়াতে এবং একটি সুস্থ ও সুষ্ঠু ঘুমের অভ্যাস তৈরিতে এগিয়ে আসতে পারেন।
তাদের জন্য উপযুক্ত রুটিন গড়ে তুলতে এখনই পদক্ষেপ নিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।