জুমবাংলা ডেস্ক : শীতকালের স্থায়িত্ব বা ব্যাপ্তি অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কিছুটা কম হতে পারে। শীত মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় তাপমাত্রাও কিছুটা বেশি থাকতে পারে। দেশের সার্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এমন আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
কয়েক বছর ধরে শীতকালের বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে এর স্থায়িত্বকালে। এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শীতকালের মূল পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে শীতের ব্যাপ্তিতে। এটি কমে গেছে। অন্যদিকে গরমের সময়টা বেড়ে গেছে। গরমকালে আগে যে তাপপ্রবাহ দেখতাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
একইভাবে শীতের সময়ই যেহেতু কমে গেছে, তাই শৈত্যপ্রবাহের সময়ও কমে গেছে।’ ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে জলীয় বাষ্প ও মেঘ তৈরি হওয়ায় কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। এতে এবার সারা দেশে শীত আসতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। একই সঙ্গে এ বছর আবহাওয়ার বিশেষ ধরন এল নিনো সক্রিয় থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকছে।
গত ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তী দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এসে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমে রূপ নেয়। এর প্রভাবে নভেম্বরের শেষদিকে ও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রায় পুরোটা জুড়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি ছিল। তবে গত দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় আকাশের মেঘ ও বাতাসের জলীয় বাষ্প কেটে যাচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। এতে দু-এক দিনের মধ্যে দেশে শীত পরোপুরি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এ বছর শীতের বিলম্বের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গতকাল মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাগরে বেশ কম সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটা লঘুচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ মিগজাউম নভেম্বরের শেষ দিকে উৎপত্তি হয়ে ডিসেম্বরের প্রায় প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলল। এতে তাপমাত্রা বেশি ছিল। তবে এর (ঘূর্ণিঝড়) প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে। এখন সারা দেশেই মেঘ কেটে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা কমে আসবে। শীতও শুরু হবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আজ থেকে ভোরের দিকে সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের শীত বাংলা ঋতুর শীত ও বাস্তবতা
বাংলা ষড়ঋতু অনুযায়ী পৌষ-মাঘ (ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) দুই মাসকে শীতকাল ধরা হয়। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস সময়কে শীতকাল বা শুষ্ক মৌসুম ধরে থাকে। সাধারণত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের অনুভূতি ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়।
এবারও উত্তরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এর তেমন ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত ২৭ নভেম্বর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই তাপমাত্রা নির্দেশ করে ওই অঞ্চলে শীত শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু বঙ্গোপসাগরে একাধিক লঘুচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এবার সারা দেশে সামগ্রিকভাবে শীত শুরু হতে কিছুটা দেরি দেখা যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই এবার শীতের স্থায়িত্ব কম হচ্ছে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আকাশের মেঘ কেটে গেলে সারা দেশেই শীত শুরু হবে।
মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার শীতের সময়কাল স্বাভাবিকভাবেই কম হবে। কিন্তু অন্যান্যবারের মতো শীতের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো থাকবে। এবারও ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পর মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জানুয়ারি মাসেও একাধিক শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।’
ডিসেম্বর মাসে দেশের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬.৪ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩.৫ ডিগ্রি। কিছু অঞ্চল ছাড়া দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলেই দিনের তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৪ ডিগ্রির আশপাশে ছিল। এর মানে দিনের তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি কম।
অন্যদিকে রাতের তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে। ঢাকায় গত বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯.৫ ডিগ্রি। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে, ১৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ রাতের তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি থাকছে।
এবারের শীতে এল নিনোর উত্তাপ
চলতি বছর আবহাওয়ার একটি বিশেষ ধরন এল নিনো সক্রিয় থাকায় শীত মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। কিন্তু সেটা ঠিক কতটা বা কত ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এল নিনোর কারণে বিশ্বের আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ থাকে। এর অর্থ এই নয় যে এবার তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকবে বা শীতের অনুভূতি অনেক কম হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত (নভেম্বর) মাসে সারা দেশের গড় তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। চলতি ডিসেম্বর ও আগামী জানুয়ারি মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। এবার শীতেও তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকবে। এর মূল কারণ অবশ্যই এল নিনো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।