লাইফস্টাইল ডেস্ক : শৈশবে যদি কেউ বাবা-মায়ের কাছ থেকে অবহেলা, কঠোর সমালোচনা বা নেতিবাচক মন্তব্য পেয়ে বড় হয়, তাহলে তার ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অভিজ্ঞতা মানুষের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, নিজের প্রতি সন্দেহ তৈরি করে এবং সম্পর্ক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. লিসা ফায়ারস্টোন বলেন, “আমরা কীভাবে আঘাত পেয়েছি, তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, কিন্তু আমরা কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠবো, তা আমাদের হাতে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শৈশবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বারবার নেতিবাচক কথাবার্তা শুনেছে, তারা পরবর্তী জীবনে কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস গড়ে তোলে। এখানে এমন আটটি সাধারণ স্বভাব উল্লেখ করা হলো—
১) নিজেকে নিয়ে সবসময় সন্দিহান থাকা
যারা ছোটবেলায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রায়ই “তুমি পারবে না” বা “তুমি যথেষ্ট ভালো নও” ধরনের কথা শুনেছে, তারা বড় হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দিহান থাকে। তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অতিরিক্ত চিন্তা করে এবং অন্যদের কাছ থেকে বারবার নিশ্চয়তা খোঁজে।
২) অহেতুক ক্ষমা চাওয়া
বড় হয়ে ওঠার সময় যদি কেউ অনুভব করে যে সে সবসময় ভুল করছে বা অন্যদের বিরক্ত করছে, তাহলে সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও অকারণে ‘সরি’ বলা শুরু করে। এমনকি নিজের কোনো দোষ না থাকলেও তারা ক্ষমা চেয়ে নেয়, যেন কোনো রকম দ্বন্দ্ব এড়ানো যায়।
৩) প্রশংসা গ্রহণে অস্বস্তি অনুভব করা
যারা ছোটবেলায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে সমালোচনা বেশি শুনেছে, তারা প্রশংসা পেতে অভ্যস্ত নয়। ফলে বড় হয়ে যখন কেউ তাদের ভালো কিছু বলে, তখন তারা সেটিকে অবিশ্বাস করে বা লজ্জা পায়। এমনকি তারা নিজের সাফল্যকে ছোট করে দেখার প্রবণতায় ভোগে।
৪) অন্যের আবেগের দায়িত্ব নেওয়া
যদি কেউ ছোটবেলায় বাবা-মায়ের মেজাজ অনুযায়ী নিজের আচরণ ঠিক করতে বাধ্য হয়, তাহলে সে বড় হয়ে অন্যদের আবেগের দায়িত্ব নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করে। তারা অন্যদের খুশি রাখতে নিজের সুখ-দুঃখ ত্যাগ করতেও রাজি থাকে।
৫) নিজের প্রতি কঠোর হওয়া
যারা শৈশবে অবিরাম সমালোচনার শিকার হয়েছে, তাদের মনে এক ধরনের কঠোর ‘আত্ম-সমালোচক’ কণ্ঠস্বর গড়ে ওঠে। তারা মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করে, নিজেদের ভুল নিয়ে বেশি কঠোর হয় এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
৬) অন্যের সাহায্য গ্রহণে অস্বস্তি বোধ করা
শৈশবে যদি কেউ বুঝতে শেখে যে সাহায্য চাওয়া মানেই দুর্বলতা, তাহলে বড় হয়ে সে নিজেই সবকিছু সামলানোর চেষ্টা করে। তারা সাহায্য চাইতে দ্বিধা করে এবং মনে করে, কেউ যদি তাদের সহায়তা করে, তাহলে তার পেছনে কোনো স্বার্থ লুকিয়ে আছে।
৭) বেশি ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা
যারা ছোটবেলায় প্রতিটি কাজের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে, তারা বড় হয়েও সব কিছু অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করার অভ্যাস তৈরি করে। তারা নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও অন্যদের সামনে সেটিকে যৌক্তিক করার চেষ্টা করে, যেন কেউ তাদের সমালোচনা না করে।
৮) নিজের মূল্য কেবল সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল মনে করা
যারা শৈশবে কেবল ভালো ফলাফল বা অর্জনের মাধ্যমে বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে, তারা বড় হয়ে ভাবে যে নিজের মূল্য কেবল তাদের সফলতার ওপর নির্ভরশীল। তারা সবসময় নিজেকে প্রমাণ করার চাপে ভোগে, এবং সাফল্য অর্জনের পরও পরিপূর্ণতা অনুভব করতে পারে না।
এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে এই প্রথম ব্রোঞ্জ জিতলেন বাংলাদেশের মেয়েরা
সমাধানের পথ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব মানসিক অভ্যাস পরিবর্তন সম্ভব, তবে প্রথমেই স্বীকার করতে হবে যে শৈশবের অভিজ্ঞতা আমাদের বর্তমান আচরণকে প্রভাবিত করছে। এরপর ধীরে ধীরে নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা কমানো, অন্যদের প্রতি যেমন সদয় হওয়া হয়, তেমনই নিজের প্রতিও সদয় হওয়া, এবং প্রয়োজন হলে পেশাদার কাউন্সেলিং নেওয়া উচিত।
মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে নিজেকে বুঝতে শেখা, নিজের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং নিজের প্রতি সদয় হওয়া জরুরি। কারণ, প্রকৃতপক্ষে আমাদের মূল্য কখনোই আমাদের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে না—আমরা জন্মগতভাবেই মূল্যবান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।