স্পোর্টস ডেস্ক : নাদ্রে বার্গারের দারুণ বোলিংয়ের পর টোনি ডি জোর্জির শতকে অনায়াস জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে একপেশে লড়াইয়ে ভারতের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৮ উইকেটে। তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা।
জোহান্সবার্গে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১১৬ রানে গুটিয়ে ৮ উইকেটে ম্যাচ জেতা ভারত গেবেখায় মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) অলআউট হয় ২১১ রানে। স্বাগতিকরা লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ৪৫ বল হাতে রেখে।
এদিন পেসারদের জন্য সহায়তা ছিল উইকেটে। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য খুব কঠিন ছিল না মোটেও। ভারতের মাত্র দুইজন ছুঁতে পারেন পঞ্চাশ রান। সাই সুদার্শানের ৮৩ বলে ৬২ ও লোকেশ রাহুলের ৬৪ বলে ৫৬ ছাড়া আর কেউ ২০ রানও করতে পারেননি।
সিম-সুইং-বাউন্সের মিশেলে দারুণ বোলিং প্রদর্শনী মেলে ধরেন বার্গার। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে ৩০ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। ৬০ বলের ৪৬টিই ‘ডট’ খেলান ২৮ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার।
আরেক বাঁহাতি পেসার ৩৩ বছর বয়সী বিউরান হেনড্রিকসও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। অন্যদের চোটে সিরিজের মাঝপথে সুযোগ পান তিনি। প্রায় আড়াই বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে ৩৪ রানে তার শিকার ২ উইকেট।
ব্যাটিংয়ে প্রোটিয়াদের নায়ক ২৬ বছর বয়সী ওপেনার ডি জোর্জি। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডেতে প্রথম শতকে ১২২ বলে অপরাজিত ১১৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা তিনিই। তার ইনিংসটি সাজানো ৯ চার ও ৬ ছক্কায়। আরেক ওপেনার রিজা হেনড্রিকস ৮১ বলে ৭ চারে করেন ৫২ রান।
সেন্ট জর্জেস পার্কে ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ১৩০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সুর বেঁধে দেন এই দুইজন। যদিও তাদের জুটি ভাঙতে পারত ৫ রানে। হেনড্রিকসের খানিকটা কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার সাঞ্জু স্যামসন। পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয় স্লিপে তুলনামূলক সহজ ক্যাচ ফেলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। দুই দফা বেঁচে গিয়ে হেনড্রিকস ফিফটি করেন ৭১ বলে। তার আগেই ডি জোর্জি পঞ্চাশ স্পর্শ করেন, ৫৫ বলে।
হেনড্রিকসকে ফিরিয়ে বড় জুটি ভাঙেন আর্শদিপ সিং। ডি জোর্জি এরপর ৭৬ রানের আরেকটি বড় জুটি গড়েন রাসি ফন ডার ডাসেনের সঙ্গে। ৯৯ থেকে তিলাক ভার্মার বলে দুই রান নেওয়ার পথে শতকে পা রাখেন তিনি ১০৯ বলে।
জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে ৫১ বলে ৩৬ রান করে আউট হন ফন ডাসেন। ওয়ানডে অভিষেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে তৃতীয় বলে উইকেটটি পান ব্যাটসম্যান রিঙ্কু সিং।
ডি জোর্জি মাঠ ছাড়েন দলের জয় সঙ্গী করে। সুদার্শানকে ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দেন তিনি। মুকেশ কুমার বল মুঠোবন্দী করে চলে যান বাউন্ডারির বাইরে!
শেষের মতো শুরুটাও ভালো হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। ম্যাচের প্রথম বলে চার মেরে দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে যান রুতুরাজ। তাকে এলবিডব্লিউ করে প্রথম শিকার ধরেন বার্গার।
দ্বিতীয় উইকেটে তিলাককে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন সুদার্শান। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তিলাককে শর্ট বলে ফিরিয়ে এই জুটিও ভাঙেন বার্গার। এরপর ইনিংসের সেরা ৬৮ রানের জুটি ভারত পায় সুদার্শান ও রাহুলের ব্যাটে। অভিষেকের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও সুদার্শান স্পর্শ করেন পঞ্চাশ, ৬৫ বলে। এরপর আর ইনিংস বেশিদূর টেনে নিতে পারেননি তিনি। ৭ চার ও এক ছক্কায় গড়া তার ৬২ রানের ইনিংস।
স্যামসন ফেরেন ২৩ বলে ১২ রান করে। রাহুল ছিলেন বলে তখনও ভালো কিছুর আশায় ছিল ভারত। ৩৫ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৬৩ রান। পরের ওভারে বার্গারের বলে রাহুলের বিদায়ের পরই পথ হারিয়ে বসে সফরকারীরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত পথচলায় ওয়ানডে অভিষেকে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন রিঙ্কু। তবে বেশিক্ষণ টেকেননি তিনি। ১৪ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় থামেন ১৭ রানে। ১৮৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে দুইশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে ভারত। আর্শদিপের ১৭ বলে ১৮ রানের সুবাদে কোনোমতে ২১১ পর্যন্ত যেতে পারে তারা। সেই রান যথেষ্ট হলো না জোর্জির দারুণ ব্যাটিংয়ের সামনে। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) পার্লে তৃতীয় ম্যাচে হবে সিরিজের ফয়সালা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৬.২ ওভারে ২১১ (রুতুরাজ ৪, সুদার্শান ৬২, তিলাক ১০, রাহুল ৫৬, স্যামসন ১২, রিঙ্কু ১৭, আকসার ৭, কুলদিপ ১, আর্শদিপ ১৮, আভেশ ৯, মুকেশ ৪*; বার্গার ১০-০-৩০-৩, বিউরান হেনড্রিকস ৯.২-১-৩৪-২, মুল্ডার ৪-০-১৯-০, মহারাজ ১০-০-৫১-২, মার্করাম ৪-০-২৮-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪২.৩ ওভারে ২১৫/২ (রিজা হেনড্রিকস ৫২, ডি জোর্জি ১১৯*, ফন ডাসেন ৩৬, মার্করাম ২*; মুকেশ ৮-২-৪৬-০, আর্শদিপ ৮-০-২৮-১, আভেশ ৮-০-৪৩-০, আকসার ৬-০-২২-০, কুলদিপ ৮-০-৪৮-০, তিলাক ৩-০-১৮-০, রিঙ্কু ১-০-২-১, সুদার্শান ০.৩-০-৮-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: টোনি ডি জোর্জি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।