ধর্ম ডেস্ক : শুক্রবার সপ্তাহের বিশেষ দিন। প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের জীবনের মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন—শুক্রবার। একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জুমার দিন এবং তা আল্লাহতায়ালার কাছে অধিক সম্মানিত।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বিভিন্ন ফজিলত ও আমলের বর্ণনা রয়েছে। জুমার দিনের বিশেষ ১১টি আমলের কথা তুলে ধরা হলো—
১. মেসওয়াক করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে মেসওয়াক করতেন। তবে জুমার দিনে বিশেষভাবে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য জুমার দিন গোসল ও মেসওয়াক করা কর্তব্য এবং সে সামর্থ্য অনুযায়ী সুগন্ধিও ব্যবহার করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৪৫)
২. গোসল করা; ৩. উত্তম পোশাক পরিধান করা; ৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা; ৫. জুমার নামাজ আদায় করা
এই ৪টি আমলের বর্ণনা একটি হাদিসে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে; এরপর জুমার নামাজে এসে অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না গিয়ে নির্ধারিত জায়গায় নামাজ আদায় করবে। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ থাকবে; আল্লাহতায়ালা তার দুই জুমার মাঝের গুনাহ (সগিরা) ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৭; বুখারি, হাদিস: ৮৮০)
৬. আজানের পর বেচাকেনা বন্ধ রাখা
আল্লাহতায়ালা কোরআনে এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ১০)
৭. আগে আগে মসজিদে যাওয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আসা মুসল্লিদের নাম লেখেন। যে সবার আগে মসজিদে আসেন; সে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করার সাওয়াব লাভ করবেন। এভাবে এরপরে আসা ব্যক্তি গাভী কোরবানি করার এবং এরও পরে আসা ব্যক্তি মুরগি দানকারীর মতো সাওয়াব লাভ করবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৯২৯)
৮. মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিন খুতবার সময় তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলাও অনর্থক।” (বুখারি, হাদিস : ৮৯২; মুসলিম, হাদিস : ২০০৫)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘জুমার দিন যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না এবং কথাও বলবে না।’ (মিশকাত, হাদিস : ৩/৪৩২)
৯. সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে সব ধরনের ফেতনা থেকে পুরো সপ্তাহ নিরাপদ রাখবেন। যদি দাজ্জালও বের হয়, তবু আল্লাহ তাকে নিরাপদ রাখবেন।’ (আহাদিসুল মুখতারা, হাদিস : ৪২৯)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে জুমার দিন সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে, দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩)
১০. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ো। কারণ প্রতি শুক্রবারে আমার কাছে আমার উম্মতের দরুদ পেশ করা হয়। যে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়বে, কিয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে।’ (বাইহাকি, সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৬২০৮)
১১. দোয়া করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহতায়ালার কাছে যে দোয়া করবে; আল্লাহ তা কবুল করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।