জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার অপরাধ জগতে যেসব নাম একসময় আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সুব্রত বাইন বা ফতেহ আলী তাদের অন্যতম। নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে, খুন-চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বহু অপরাধে তাঁর নাম উঠে এসেছে বারবার। আজও তাঁর অপরাধজগতের ছায়া ঢাকার রাস্তায় দেখা যায়।
Table of Contents
সুব্রত বাইন: অপরাধ জগতে উত্তরণের সূচনা
সুব্রত বাইন, যার পুরো নাম ত্রিমাতি সুব্রত বাইন, ১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার জোবারপাড় গ্রামে। এরপর পরিবারসহ ঢাকার মগবাজারে বসবাস শুরু করেন। শেরেবাংলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবনেই রাজনীতির সূত্রে তাঁর অপরাধ জগতে প্রবেশ ঘটে।
সুব্রতের প্রথম চাঞ্চল্যকর অপরাধ ছিল ১৯৯৩ সালের মধুবাজারে এক সবজি বিক্রেতাকে খুন। এরপর মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগ এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ব্যবসা ইত্যাদির মাধ্যমে দ্রুত ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। তাঁর নাম উঠে আসে বহু খুন ও সহিংস ঘটনায়।
সুব্রত বাইনের অপরাধ নেটওয়ার্ক ও রাজনৈতিক সংযোগ
নব্বইয়ের দশকে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করায় সুব্রতের পরিচিতি আরও বেড়ে যায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাজ করার সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। এর ফলস্বরূপ, তিনি রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অনেক অপরাধ সংঘটন করেন। এমনকি তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি তাঁকে ‘তারকা সন্ত্রাসী’র মর্যাদা দেয়।
২০০১ সালে ইন্টারপোল তাঁর নামে নোটিশ জারি করে। এরপর কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে সেখানেও অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। কলকাতা পুলিশ ২০০৮ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে পালিয়ে নেপালে গিয়েও ধরা পড়েন। ২০১২ সালে কলকাতায় আবার গ্রেপ্তার হন তিনি।
সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে গুলশান ও হাতিরঝিল এলাকায় খুন ও অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে অস্ত্র এনে ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহার করছেন তিনি ও তাঁর বাহিনী।
অভিযান ও গ্রেপ্তার: একটি দীর্ঘ ইতিহাস
সুব্রত বাইন বহুবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রতিবার জামিনে মুক্ত হয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ও শরিফসহ গ্রেপ্তার হন সুব্রত।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে হাতিরঝিলে ওয়ার্ড যুবদল নেতা আরিফ সরদার গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় সুব্রতের অনুসারীদের নাম উঠে আসে। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, সীমান্তপথে আনা অস্ত্র ব্যবহার করে খুনসহ নানা অপরাধ করছেন তাঁরা।
মগবাজারে নিয়ন্ত্রণ কায়েম এবং সংঘর্ষ
মগবাজারে যুবলীগ নেতা লিয়াকতের সঙ্গে এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা সুব্রতর অপরাধ জগতের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই এলাকায় তিনি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন এবং ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালান।
বর্তমান অবস্থা ও আইন প্রয়োগকারীদের নজরদারি
সুব্রত বাইন বর্তমানে পুলিশের হটলিস্টে রয়েছেন। হাতিরঝিল, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁর বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত চলছে। আইএসপিআরের তথ্যমতে, বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের পরও তাঁর অপরাধ জগত থেকে বিচ্যুতি হয়নি।
সুব্রত বাইন নামটি ঢাকার অপরাধ ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়। তাঁর অপরাধ জীবন, রাজনৈতিক সংযোগ এবং আন্তর্জাতিক পালানোর ইতিহাস প্রমাণ করে, অপরাধ জগতে একবার জড়িয়ে গেলে মুক্ত হওয়া কতটা কঠিন।
সুব্রত বাইন নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQs)
সুব্রত বাইন কে?
সুব্রত বাইন একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী যিনি নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় খুন, চাঁদাবাজি ও জমি দখলসহ নানা অপরাধে যুক্ত ছিলেন।
সুব্রত বাইন কবে থেকে অপরাধে জড়ান?
তাঁর অপরাধ জগতে প্রবেশ কলেজ জীবন থেকেই, যখন তিনি সিদ্ধেশ্বরী কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন।
তাঁর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে?
খুন, অস্ত্র ব্যবসা, জমি দখল, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং আন্তর্জাতিক পলাতক থাকা—এইসব অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সুব্রত বাইন কি এখনো সক্রিয়?
হ্যাঁ, বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে খুন ও অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে নজরদারিতে রেখেছে।
তাঁর রাজনৈতিক যোগাযোগ কেমন?
তিনি বিএনপির হয়ে কাজ করেছেন এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।