মোঃ সোহাগ হাওলাদার : ঢাকা ১৯ এর সাবেক এমপি দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুকে নিয়ে দিনভর জল্পনা কল্পনায় ঢাকা ১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়া নিয়ে সাভার-আশুলিয়ায় চলছে জোর গুঞ্জন। আর এই গুঞ্জনে কেন্দ্রে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু। গত দু’দিন ধরে তার প্রার্থীতা চূড়ান্ত হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বাঁধভাঙা উল্লাস। দিনরাত চলছে আনন্দ মিছিল, স্লোগান ও মিষ্টি বিতরণ। তবে এই উল্লাসের মধ্যেই জন্ম নিয়েছে নতুন বিতর্ক।
প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার খবরে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে যে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে, সেখানে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে সমর্থকদের সাথে জামিনে আসা যুবলীগ নেতা ও চাঁদাবাজি মামলার অভিযুক্ত আসামি প্রকাশ্যে উপস্থিত ছিলেন এ মিষ্টি বিতরণে । বিশেষ করে আশুলিয়ার বলিবদ্র তালপট্টি এলাকার একজন স্থানীয় নেতার নিজস্ব অফিসে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে সদ্য জামিনে আসা যুবলীগ নেতা ও চাঁদাবাজ, অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি প্রথম সারির সমর্থকদের সাথে হাসিমুখে ছবি তুলেছেন, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকারা চিহ্নিত চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত মাসুম রানা স্বপন। সে নিজেকে সাবেক যুবদল নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তার নামে রয়েছে একাধিক মামলা ও অভিযোগ ।গত বছরের অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে আশুলিয়া থানায় একটি দায়ের করা মামলায় জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল ও মোঃ স্বপন। এছাড়া রয়েছে যুবলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ মাহমুদ খান। সে সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছেন। এর আগে আশুলিয়া থানা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
স্থানীয় নেতা কর্মীরা বলছেন, যখন বিএনপি দুর্নীতি ও সুশাসনের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত হওয়ার গুঞ্জনে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে আনা দলের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারে। দলের একটি অংশ এই ঘটনায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, দল যদি শেষ পর্যন্ত ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুকে প্রার্থী করে, তবে তাকে এই ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিবর্গের প্রভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং স্বচ্ছ রাজনীতি চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।
ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু’র ঘনিষ্ঠ জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল দাবি করেছেন, মিষ্টি বিতরণ বা আনন্দ মিছিলের আয়োজন তৃণমূল কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছে। প্রার্থী নিজে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে এমন কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানাননি। তবে চাঁদাবাজি মামলার অভিযুক্তদের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বা তার পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ একজন নেতা মন্তব্য করেছেন, “প্রার্থী চূড়ান্ত হোক বা না হোক, যুবলীগ নেতা , চাঁদাবাজ বা এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের মিষ্টি বিতরণের মতো শুভ উদ্যোগে স্থান দেওয়া দলের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত। দলের হাইকমান্ডের এই বিষয়ে দ্রুত নজর দেওয়া উচিত।”
এব্যাপারে জানতে আশুলিয়া থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এর পরিচয় দেওয়া জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল দাবী করেন, এখানে অনেকে এসেছে, কে কে এসেছেন আমার নজরে ছিলো না। এসময় তিনি বলেন, আপনি আসেন অফিসে। বসে চাঁ খাই তারপর কথা বলি। এভাবে কথা বললে হবে না।
তবে তাদের এমন আয়োজনের ব্যাপারে জানতে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুর সাথে কথা মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
উল্লেখ্য, ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় সক্রিয়। তার সম্ভাব্য প্রার্থীতা নিয়ে গুঞ্জন ওঠায় সাভার-আশুলিয়ায় বিএনপির রাজনীতিতে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হলেও, বিতর্কিতদের উপস্থিতি সেই উদ্দীপনাকে ম্লান করে দিয়েছে। এই গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত সত্য হয় কিনা, এবং বিতর্কিতদের বিষয়ে দল কী পদক্ষেপ নেয়, তার দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।