সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যমুনাবাদ এলাকায় যমুনার শাখা নদীর ওপর আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেটি দেবে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শিবালয় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস সূত্রে জানা যায়,
বৃহত্তর ঢাকা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ (জিডিপি-৩) এর আওতায় শিবালয় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের তত্বাবধানে কাজটির দায়িত্ব পান রাজধানী ঢাকার মিরপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফরমিলা আকতার। যমুনাবাদ হাই স্কুল মি: রবি হাউজ- ভায়া হামিদ মৃধার বাড়ি পর্যন্ত আরসিসি ইনভার্টার গার্ডার ব্রীজটির নিমাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার ষাট টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর কাজটি শুরু হয়ে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারী কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ব্রীজের কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্রীজের নির্মাণ কাজ করায় নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ব্রীজের মাঝখানে গার্ডার দেবে গিয়ে অনেক নিচু হয়ে গেছে। নকশা অনুযায়ী ব্রীজটি এমনিতেই অনেক নিচু। ঢালাইয়ের কাজ শেষে ব্রীজটির গার্ডার দেবে গিয়ে আরো নিচু হয়ে গেছে। বর্ষায় আরেকটু পানি বাড়লেই ব্রীজের নীচে কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা আটকে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বর্ষাকালে পানির গতিরোধ হয়ে আশপাশের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়বে। আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই ব্রীজটি এলাকাবাসীর জন্য মঙ্গলজনক না হয়ে উল্টো গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনাবাদ এলাকায় যমুনার শাখা নদীর উপর নির্মাণাধীন এই ব্রীজটির মূল অংশের ঢালাইকাজ শেষ হয়েছে। ব্রীজের দুইপাশে গাইড ওয়ালের কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। ব্রীজের মূল অংশের একপাশের গার্ডার দেবে গিয়ে নিচু হয়ে গেছে। এসময় তথ্য, ছবি ও ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করতে গেলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি সুপারভাইজার লিটন তালুকদার বলেন, ভিডিও না করে চলেন চা নাস্তা খেয়ে যান। ব্রীজের কাজ ঠিকই আছে। ব্রীজের কোথাও দেবে যায়নি। যেভাবে ড্রয়িং আছে সেভাবেই কাজ হচ্ছে। আপনাদের নাম্বার দিয়ে যান, আমাদের ইঞ্জিনিয়ার আপনাদের সাথে পরে কথা বলবে।
মো: রাসেল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, আমি ডিস্ট্রিক্ট ট্রাকের ড্রাইভার। বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করি। বিভিন্ন এলাকার ব্রীজও দেখি। কিন্ত আমাদের এই ব্রীজের মত নিম্নমানের ব্রীজ আর কোথাও দেখিনি। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ব্রীজের মাঝখানে দেবে গেছে। এতেই তো বুঝা যায় এই ব্রীজের মান কেমন। সরকার জনগণের কথা ভেবে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কিছু লোকের কারণে সাধারণ মানুষ সুফল পায়না। যারা এই অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের সকলের শাস্তি চাই।
মো: ইদ্রিস আলী নামের আরেকজন বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্রীজের কাজ হতে দেখে ভিডিও করে আমি ফেসবুকে পোস্টও করেছিলাম। মৌখিকভাবেও প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্ত কে শোনে কার কথা। আমাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছেমত কাজ করে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে লোকজন আসলেও তারা কিছুই বলেনা।
হামেদ আলী মৃধা বলেন, এই ব্রীজ এলাকার মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে বানানো হচ্ছেনা। ইঞ্জিনিয়াররা নিজেদের ইচ্ছেমত বানাচ্ছে। বর্ষার পানি আরেকটু বাড়লেই ব্রীজের নিচে কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা আটকে থাকবে। এতে ব্রীজের নিচ দিয়ে নৌকা নিয়ে চলাচল করা যাবেনা। এতে আমরা যারা এলাকাবাসী আছি আমাদের ভোগান্তি বাড়বে।
শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিক বলেন, ভালোভাবে কাজ করানোর জন্য আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। এর আগে নিম্নমানের বালু-খোয়া এনেছিল, সেগুলো রিটার্ন করিয়ে ভালো মানের বালু-খোয়া আনিয়েছি। ব্রীজের মাঝখানে কিছুটা ঝুলে গেছে। এটা আপনিও দেখতেছেন, আমিও দেখতেছি। ঠিকাদার ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে বিষয়টা অবগত করেছি। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তো সবসময়ই এখানে আসেন। তিনিও এটা দেখেছেন।
এ নিয়ে ঠিকাদার দাইয়্যান শাহজাহানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলি তপন কুমার মুঠোফোনে বলেন, ঢালাইয়ের সময় সব ঠিকঠাকই ছিল। সাটারিংয়ের কারণে ব্রীজ সামান্য নিচু হয়েছে। এটকুতে কোন সমস্যা হবেনা। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার স্যার এটা নিয়ে অবগত আছেন। এখন স্যাররা যেভাবে বলবে সেটাই করবো।
বিষয়টি নিয়ে শিবালয় উপজেলা প্রকৌশলি মোবারক হোসেন বলেন, ব্রীজ নিচু হওয়া বা দেবে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। আমি সেখানে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।