পরাগ মাঝি : উচ্চ মাত্রায় চর্বি আর কম শর্করার খাবারের সমন্বয়কে বলা হয় কিটো ডায়েট। এর মাধ্যমে শরীরের ওজন অন্তত ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু শরীরের ওজন কমানোই নয়, এই ডায়েট মারাত্মক ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও ভূমিকা রাখে।
কিটো ডায়েটের মাধ্যমে আসলে আমাদের শরীরকে একটি ফাঁদে ফেলা হয়। আমরা খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে যে শর্করা গ্রহণ করি তা শরীরের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে কিটো ডায়েট তথা কম শর্করা এবং বেশি চর্বিযুক্ত খাবারের মাধ্যমে শরীরকে ধীরে ধীরে শর্করার পরিবর্তে চর্বির ওপর নির্ভরশীল করা হয়। এক সময় দেখা যায়-পর্যাপ্ত শর্করা না পেয়ে জমে থাকা চর্বি গুলোই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে আমাদের শরীর। ফলে শরীর থেকে বাড়তি চর্বি ঝরে যেতে শুরু করে।
গবেষকেরা বলছেন, কিটোতে থাকা খাদ্য উপাদানগুলো আমাদের শরীরে থাকা শর্করানির্ভর ক্যানসার কোষগুলোকেও অনাহারের মধ্যে ফেলে দেয়। প্রয়োজনীয় খাদ্য না পেয়ে ওই কোষগুলো এক সময় মরে যেতে শুরু করে।
সম্প্রতি সেল মেটাবলিজম জার্নালে এ সম্পর্কিত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাটি চালাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা অগ্ন্যাশয় এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত কিছু ইঁদুরকে বেছে নিয়েছিলেন। পরে এগুলোকে কিটো ডায়েট করানো হয়। একপর্যায়ে দেখা যায়-এই পদ্ধতিটি ইঁদুরগুলোর শরীরের বিষাক্ত লিপিড উপজাতগুলোকে আলাদা করে ফেলে এবং ফেরোপটোসিস নামক একটি প্রক্রিয়ায় ক্যানসার কোষগুলোকে হত্যা করে।
তবে এই প্রক্রিয়াটি শরীরে থাকা টিউমারের বৃদ্ধি থামিয়ে দিতে সক্ষম হলেও ক্যাচেক্সিয়া নামে মারাত্মক ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ক্যানসারের রোগীরা। ক্যাচেক্সিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগীদের ক্ষুধা হ্রাস পায় এবং তাদের ওজন মাত্রাতিরিক্তভাবে কমে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁরা ক্লান্তিতে ভোগেন এবং তাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো-এই রোগের কার্যকর কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। প্রতিবছর পৃথিবীতে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যুতে অবদান রাখে এ ধরনের ক্ষয়রোগ।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির অধ্যাপক টোবিয়াস জানোভিটজ বলেন, ‘ক্যাচেক্সিয়া এমন একটি রোগ যা নিরাময়যোগ্য নয়।’
তিনি জানান, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ক্যাচেক্সিয়ায় আক্রান্তের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। রোগীরা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েন যে-তাঁরা আর ক্যানসার প্রতিরোধী চিকিৎসায় আর সাড়া দিতে পারেন না। দৈনন্দিন কাজগুলো করাও তাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এ অবস্থায় ক্যানসারের বিরুদ্ধে কিটো ডায়েটের লড়াইয়ে এর মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোকে কীভাবে ঠেকানো যায়-তা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা প্রাথমিক সফলতাও পেয়েছেন। তারা দেখেছেন-ক্যানসার আক্রান্ত ইঁদুরকে কিটো ডায়েটের সঙ্গে কর্টিকোস্টেরয়েড নামক একটি সাধারণ ওষুধ যোগ করে দিলে তার ক্যাচেক্সিয়া হয় না। ফলে টিউমারের বৃদ্ধি থেমে যাওয়া ওই ইঁদুরের জীবনকালও বেড়ে যায়।
এ ছাড়া ক্যানসার নেই স্বাস্থ্যবান এমন ইঁদুরকে কিটো ডায়েট করে দেখা গেছে, তারা এই প্রক্রিয়ার ক্যাচেক্সিয়ায় আক্রান্ত হয়নি। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের শরীরের ওজন কমেছে।
অন্যদিকে ক্যানসার আক্রান্ত ইঁদুরকে কিটো ডায়েট করিয়ে দেখা গেছে, তাদের শরীরে কর্টিকস্টেরনজাতীয় হরমোনের উৎপাদন থেমে গেছে। ফলে ক্যাচেক্সিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাদের শরীর অন্তহীনভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষয় থামাতেই কিটোর সঙ্গে কর্টিকস্টেরয়েড নামক ওষুধটি যোগ করেছিলেন গবেষকেরা। এতে তাঁরা দেখেছেন, ইঁদুরটির শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি থেমে গেছে এবং এটি ক্যাচেক্সিয়ায়ও আক্রান্ত হচ্ছে না।
এ অবস্থায় গবেষক দলটি ক্যানসার রোগীর চিকিৎসায় কিটোর সঙ্গে কর্টিকোস্টেরয়েডের ডোজ প্রদানের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন।
জানোভিটজ মনে করেন, যদি তারা সফলভাবে এটি করতে পারেন তবে ক্যানসারের চিকিৎসায় একটি বিপ্লব আসন্ন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।