আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, যেখানে ভূমিকম্প, খরা এবং দাবানল প্রতিনয়ত মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন ঘটিয়েছে, সেটি এখন এক মহা বিপর্যয়ের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখোমুখি। এক নতুন গবেষণা অনুসারে, ক্যালিফোর্নিয়াতে ঘনিয়ে আসছে মহাপ্রলয়, যার উৎপত্তি ঘটবে আকাশ থেকে।
এটি সম্ভবত হাওয়াইয়ের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রকান্ড ঝড়ের রূপ নেবে। তবে, এর সঠিক সময় এখনও জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ইতিমধ্যেই বিষুবরেখার চারপাশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় বিস্তীর্ণ বায়ুমন্ডল জুড়ে এর লক্ষণ শুরু হয়ে গেছে, যা শত শত মাইল চওড়া এবং ১,২০০ মাইলেরও বেশি লম্বা জলীয় বাষ্পের একটি ঘণ মেঘকে পশ্চিম উপক‚লের দিকে নিয়ে ধেয়ে নিয়ে যাবে।
বলা হচ্ছে যে, এই মেঘ প্রচণ্ড ঝরো বাতাসের সাথে এত বেশি পানি বহন করবে যে, একে তরলে রূপান্তরিত করলে তা মিসিসিপি নদীর মেক্সিকো উপসাগরে প্রবাহের পরিমাণের প্রায় ২৬ গুণ বেশি হবে। বায়ূমন্ডলের এই টর্পেডো যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছাবে, তখন এটি এর পর্বতগুলিতে আছড়ে পড়বে এবং উপরের দিকে যাবে। এটি তার বাষ্পজালকে ঠান্ডা করবে এবং কয়েক সপ্তাহব্যাপি বৃষ্টি ও তুষার ঝড় শুরু হবে।
গত কয়েক শতাব্দীতে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন উপকূলকে প্লাবিত করেছে এবং সাম্প্রতিক দশকগুলিতে শক্তিশালী ঝড় বিপর্যয় ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়েছে। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটি ক্রমেই আরও ভয়ঙ্কার রূপ ধারণ করবে। প্রবল বৃষ্টিপাত ও মহাবন্যা শহর ও জনপতদকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। লস অ্যাঞ্জেলেসের আশেপাশের পাহাড়গুলিতে ঘন্টায় প্রায় দুই ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের সম্ভানা রয়েছে। সিয়েরা নেভাদায় ভারী বৃষ্টি এবং তুষারপাত বিশ্বের অন্যতম উৎপাদনশীল কৃষি অঞ্চল সেন্ট্রাল ভ্যালির বাঁধের সহন ক্ষমতার পরীক্ষা নেবে।
যখন এসব ঘটতে থাকবে, তখন আর্দ্রতা-বোঝাই বাতাসের আরেকটি বহর প্রশান্ত মহাসাগরে উপর তৈর হবে এবং ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে আঘাত হানবে। এরপর আরেকটি এবং তারপর আরেকটি। এক মাস পর ক্যালিফর্নিয়া জুড়ে গড়ে প্রায় ১৬ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হবে। পার্বত্য অঞ্চলের বড় অংশ অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনপদগুলি পুনর্বাসনের অযোগ্য ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তি ও হলিউড থেকে শুরু করে করে কৃষি এবং তেল পর্যন্ত রাজ্যের প্রধান শিল্পগুলির কোনওটিই অক্ষত থাকবে না।
জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে গ্রহকে উত্তপ্ত করার কারণে প্রতি বছর সমগ্র ক্যালিফোর্নিয়ায় এই তীব্রতায় মাসব্যাপী মহাপ্রলয় ঘটার সম্ভাবনা ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত কম্পিউটার মডেলিংয়ের উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ঝড়ের একটি নতুন সমীক্ষা বলছে যে, আগামী কয়েক দশকে যদি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা আরও ১.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে এধরনের বিশাল ঝড়ের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। এবং একই সাথে বিরল কিন্তু এর চেয়েও শক্তিশালী ও অনেক বেশি প্রবল বর্ষণ সহ মহাপ্রলয়ের ঝুঁকিও বাড়বে।
নতুন গবেষণাটির ভূতাত্ত্বিক প্রমাণগুলি বলছে যে, পশ্চিম গত সহস্রাব্দে বেশ কয়েকবার প্রলয়ঙ্করী বন্যার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মানব সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যুগে এই হুমকিটি কীভাবে বিকশিত হচ্ছে তা এখনও সবচেয়ে উন্নত চেহারা প্রদান করে। মোডেস্টোর কাছে নিউ ডন পেড্রো জলাশয়ের পরিচালক টার্লক ইরিগেশন ডিস্ট্রিক্টের প্রধান হাইড্রোলজিস্ট মনিয়ার বলেন, ‘যদিও পরবর্তী ঝড়টি আরও বড়; কঠিন হতে পারে। এমনকি সর্বোত্তম তথ্য এবং প‚র্বাভাস দিয়েও মনিয়ার প্রলয় আটকাতে পারবেন না। ২১ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই ঝড় একটি নিয়মিত বিপর্যয়ে রূপ নেবে, যদি দেশগুলি উচ্চহারে গ্রীনহাউস-গ্যাস নির্গমনের পথে চলতে থাকে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।