সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন রোকেয়া বেগম (৪০) নামের এক রোগী। তিনি বর্তমানে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডী ৩২ নম্বরে অবস্থিত ‘লং লাইফ হাসপাতালে’ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোকেয়া বেগমের ছেলে রিয়াদ হোসেন জানান, তার মায়ের দু’পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছে না। তিনি দাঁড়াতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৫ জুলাই ইউনাইটেড হাসপাতালে রোকেয়া বেগমের স্পাইন ( মেরুদণ্ড) অপারেশন করা হয়। অপারেশন করেন ঢাকার ‘লং লাইফ হাসপাতালের’ চিকিৎসক ফয়সাল আমিন। অপারেশনের কয়েকদিন পর ইনফেকশন হলে ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক আবু রায়হান রাজা রোকেয়া বেগমকে ‘লং লাইফ হাসপাতালে’ পাঠিয়ে দেন। সেখানে রোগীর পরিস্থিতি বিবেচনা করে চিকিৎসক দ্বিতীয় অপারেশন করেন।
চিকিৎসক ফয়সাল আমিন বলেন, অপারেশন করার সময় একটি ড্রেন ব্যবহার করা হয়েছিল। ড্রেনটি এক-দু’দিন পর খুলে দেওয়া হয়। তবে হাসপাতাল থেকে কে বা কারা পুনঃরায় ড্রেন ইন্ট্রুডিউজ করে। এ বিষয়ে তারা আমার সঙ্গে কোন পরামর্শ করেনি। দ্বিতীয়বার ড্রেন ব্যবহার করায় ইনফেকশন হয়েছে বলে চিকিৎসক ফয়সাল আমিন নিশ্চিত করেন।
ভুল চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক আবু রায়হান রাজা প্রথমে এই প্রতিবেদককে জানান, রোগীর আত্মীয় স্বজনের অসচেতনতার কারণে ইনফেকশন হয়েছে। হাসপাতালে আমরা দুটি বেড দিয়ে এক বেডে রোগী অন্য বেডে রোগীর সক্সগীকে থাকতে বলেছি। কিন্তু যখনই রোগীর রুমে গিয়েছি, আমরা দেখেছি কেউ না কেউ রোগীর গলা ধরে শুয়ে আছে।
তবে ডাক্তার ফয়সাল আমিনের বরাত দিয়ে দ্বিতীয়বার ড্রেন ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীকে আমরা রিলিজ দিয়েছিলাম। বাসায় নেওয়ার পর ইনফেকশন হয়। রোগীকে ড্রেসিং করানোর জন্য হাসপাতালে আনা হলে এনেস্থেসিস্ট নাসিম ‘বেবি নিডল’ এর চেয়েও ছোট একটি ড্রেন ইন্ট্রুডিউজ করেন। রাজার দাবি, নিজের ভুল ধামাচাপা দিতে ডাক্তার ফয়সাল আমিন এই অভিযোগ করেছেন। রাজার দাবি অনুযায়ী ডাক্তার ফয়সাল আমিনের ভুলে রোগীর ইনফেকশন হয়েছে।
রোকেয়া বেগমের ছেলে রিয়াদ হোসেন জানান, তার মাকে ড্রেসিং করাতে নেওয়া হলে ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক রাজা, এনেস্থেসিস্ট নাসিম ও ওটি বয় বিকাশ ড্রেন ব্যবহার করেন। এ সময় তারা একটি পুরাতন ব্লেড ব্যবহার করেন বলেও দাবি করেন রিয়াদ হোসেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণের জন্য আবাসিক মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। রোগীর সার্বিক ফলোআপের দায়িত্বও মূলত তার। এছাড়া একজন সার্জন বা আবাসিক মেডিকেল অফিসার রোগীর ফলোআপ বা ড্রেন ব্যবহার করতে পারেন। এনেস্থেসিস্ট কখনো ড্রেন ব্যবহারের কাজ করতে পারেন না। ওটি বয় তো নয়ই। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এনেস্থেসিস্ট নাসিম ড্রেন ইন্ট্রুডিউজ করেছেন।
রিয়াদ হোসেন জানান, হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা শিকদার পাড়ায় তাদের বাড়ী। তার বাবা মৃত মো. শাহজাহান। মানিকগঞ্জ শহীদ রফিক সড়কে অবস্থিত একটি কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকানে মাসিক ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে সে। তবুও রিয়াদ তার মাকে ঢাকার একটি ভালো হাসপাতাল থেকে অপারেশন করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক তাকে আশ্বাস দেন, ঢাকা থেকে ডাক্তার এনে তার মাকে অপারেশন করানো হবে। অপারেশনের দু’একদিন পর তার মা হেঁটে বাড়ি যেতে পারবে। এতে তার খরচও অনেক কম লাগবে।
রিয়াদ বলেন, ৯৪ হাজার টাকা চুক্তিতে তার মাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তাদের খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। এদিকে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে হাসপাতালে যায় সে। তখন হাসপাতালের পরিচালক তাকে লং লাইফ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাতে বলেন। ওই হাসপাতালের সব খরচ তিনি পরিশোধ করবেন জানিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেন ও এম্বুলেন্স ভাড়া করে লং লাইফ হাসাপাতালে পাঠিয়ে দেন। ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় অপারেশন করানোর পর বিল করা হয় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে সে টাকা দিতে রাজি হচ্ছেন না রাজা।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. মকসেদুল মোমিন বলেন, রোগীর ড্রেন ব্যবহার বা যেকোন ফলোআপের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল। এক্ষেত্রে তারা যদি নিয়মের ব্যত্বয় ঘটায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।