ইয়াসিন রহমান : বাজারে সব ধরনের পণ্যের বাড়তি দামে এক প্রকার কোণঠাসা ভোক্তা। এর মধ্যেই বাড়তি মুনাফা করতে চালের বাজারে মিলারদের চোখ পড়েছে। কারসাজি করে বাড়িয়েছে দাম। পরিস্থিতি এমন গত ৭ দিনে গরিবের মোটা, মাঝারি ও সরু চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে হু হু করে বাড়ছে দাম। আর খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়ায় ক্রেতার পকেট কাটা যাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে- ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন খেটে খাওয়া মানুষের এক কেজি মোটা চাল কিনতে ৫৬-৫৭ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর মাঝারি ও সরু চালের দামও লাগামছাড়া। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
শনিবার নওগাঁ ও দিনাজপুর মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিলপর্যায়ে প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ২১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ২২০০ টাকা ছিল। আর প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকা। যা আগে ২৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চারদিকে নাজুক অবস্থা। এ অবস্থায় চালের দামটা সহনীয় রাখা যেত কিনা- এমন প্রশ্নে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। চাল কাটার মৌসুম এলেই মিলাররা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবারও সেটাই হয়েছে। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজারে চাল কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।
রাজধানীর কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল ২৩৫০-২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ৭ দিন আগে ২২০০ টাকা ছিল। পাশাপাশি বিআর-২৮ জাতের চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ টাকা, যা ৭ দিন আগে ২৩০০ টাকা। আর মিনিকেট চালের বস্তা ৩১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যা আগে ৩০০০ টাকা ছিল।
তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায় থেকে চালের সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, দিচ্ছে তার কম পরিমাণ। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এখনই যদি নজরদারি না করা হয়, তাহলে অন্যান্য পণ্যের মতো চালের বাড়তি দামে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।
অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, আমন ফসল কাটার মৌসুমকে সামনে রেখে ধানের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে মোটা চাল তৈরিত ব্যাঘাত হচ্ছে। সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। কিন্তু মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের দাম ততটা বাড়েনি। এছাড়া সরকার চাল কিনে নানা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সাধারণ মানুষকে সহায়তা করছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দীদার হোসেন শনিবার বলে, মিলাররা চাল নিয়ে আবারও কারসাজি করছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রির জন্য পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। ফলে পাইকারি পর্যায় থেকে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, ৭ দিনের ব্যবধানে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়ে সরু চাল ৬৫-৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল, যেটা গরিব মানুষ বেশি কেনে সেই চাল বিক্রি করছি ৫৬-৫৭ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৫৪ টাকা ছিল।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, চালের দাম কেন বেড়েছে তা তদারকি করে বের করা হবে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তিন স্তরে তদারকি করা হবে। অনিয়ম পেলেই সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।