ছাত্রদল নেতার সহযোগিতায় চুরিকৃত স্বর্ণ-রুপা বিক্রি করলো চোর!

Pankaj

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মালুচি বাজারের বর্ণা জুয়েলারি দোকানের শাটার ভেঙ্গে ৫ রত্তি স্বর্ণ ও ৭৯ হাজার পাঁচশত টাকা মূল্যের ৫৩ ভরি রুপার অলংকার এবং নগদ পঞ্চান্ন হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরপর চুরিকৃত সেসব অলংকার সাবেক এক ছাত্রদল নেতার সহযোগিতায় আরেক জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

Pankaj
সাবেক ছাত্রদল নেতা পঙ্কজ: ছবি: সংগৃহীত

বর্ণা জুয়েলারির মালিক সুকুমার সরকার জানায়, চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তার দোকানের শাটার এবং দোকানে থাকা লকারের তালা ভেঙ্গে স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং নগদ চুরি করে নিয়ে যায় স্থানীয় বিপ্লব হালদার ওরফে বৈদ্ধ হালদার। দোকানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বিপ্লব হালদারের চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শিবালয় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বর্ণা জুয়েলারির মালিক সুকুমার সরকার।

মামলার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মালুচি বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপ্লব হালদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বিপ্লবের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুরিকৃত অলংকার উদ্ধার ও চোরাই অলংকারের ক্রেতা আবজাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মামলা হওয়ার পর শিবালয় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপ্লব হালদারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত বিপ্লব পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চোরাইকৃত অলংকার একই উপজেলার রুপসা বাজারের মোঃ আবজাল হোসেনের জুয়েলারি দোকানে বিক্রির কথা স্বীকার করে। পরে বিপ্লবকে সঙ্গে নিয়ে রুপসা বাজারের মোঃ আবজাল হোসেনের দোকানে অভিযান চালিয়ে আবজালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় আবজালের কাছ থেকে ৩৭ ভরি রুপা ও ৫ রত্তি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। তবে বাকি অলংকার ও নগদ টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

Shibaloy

স্থানীয়রা জানায়, পুলিশ আবজালকে গ্রেফতারের সময় সে উপস্থিত সকলের সামনে বার বার বলছিল, চোরাই অলংকার সন্দেহ হওয়ায় আবজাল প্রথমে সেগুলো কিনতে রাজি হয়নি। এরপর স্থানীয় ছাত্রদল নেতা পঙ্কজ সরকার জয় অলংকারগুলো ক্রয় করতে আবজালকে উৎসাহ দেয় এবং এগুলো কিনলে কোন সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করে। এরপর ৪৪ হাজার টাকায় ৩৭ ভরি রুপা ও ৫ রত্তি স্বর্ণ কিনে নেয় আবজাল।

আবজাল হোসেনের জুয়েলারি দোকানের পাশের বেডিং ব্যবসায়ী মো. আরশাদ আলী বলেন, “শুনেছি আবজাল চোরাই রুপা কিনেছিল। পরে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চোরাই রুপাসহ তাকে থানায় নিয়ে গেছে। তবে সে কার কাছ থেকে এগুলো কিনেছে তার নামও জানিনা, তাকে চিনিও না। পুলিশ তাকে নিয়ে আসার পর দেখলাম। শুনেছি পঙ্কজ আবজালকে এসব অলংকার কিনতে বলেছে, তাই আবজাল এগুলো কিনেছে।”

রুপসা বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, “পুরো ঘটনা আমি জানিনা। আমি শুরুতে ছিলাম না। পরে এসে দেখলাম পুলিশ এসেছে। এরপর জানতে পারলাম রুপা নিয়ে গেঞ্জাম চলতেছে। আবজাল কার থেকে কিনছে সেটা আমি বলতে পারবো না। শুনেছি পঙ্কজ কাকে যেন নিয়ে এসেছিল, তার কাছ থেকেই কিনেছে। আসলে আবজাল ভাইতো এরকম মানুষ না। সে একজন ভালো মানুষ। তার মত ভালো একটা ছেলে এমন বিপদে পড়ার বিষয়টা দু:খজনক।”

রুপসা বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, “চুরির ঘটনায় পুলিশ প্রথমে একজনকে ধরেছে। ধরার পর ওই লোক পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে যে রুপসা বাজারের আবজালের কাছে বিক্রি করেছে। পরে শিবালয় থানার ওসি স্যার সহ অনেক পুলিশ এসেছিল। ওসি স্যার আবজালকে জিজ্ঞাসা করেছে, আপনি ৩৭ ভরি রুপা কিভাবে কিনলেন? এরপর আবজাল উত্তর দিয়েছে, উনি (বিপ্লব হালদার) তো অপরিচিত, উনাকে আমি চিনিনা। পরে ওসি স্যার আবার জিজ্ঞাসা করে তাহলে এতগুলো রুপা ও স্বর্ণ কত টাকায় কিভাবে কিনলেন? পরে আবজাল সত্য কথা স্বীকার করে বলে ৪৪ হাজার টাকায় কিনেছি। এত কম টাকায় কিভাবে কিনলেন জানতে চাইলে আবজাল ওসি স্যারকে জানায়, আমাকে পঙ্কজ কিনতে বলেছে। এজন্য আমি কিনেছি।”

বর্ণা জুয়েলারির মালিক সুকুমার সরকার বলেন, “গত ১ তারিখ রাতে আমার স্বর্ণের দোকানে চুরি হয়েছে। পরদিন ভোরে দোকানে গিয়ে দেখি আমার দোকানের আলমারি, ড্রয়ার ও সিসি ক্যামেরা ভাঙ্গা। মালামাল নাই। পরে বাজার কমিটিকে জানিয়ে থানায় মামলা করেছি। পরে পুলিশ তদন্ত করে দেখলো ঘটনা সত্য। এরপর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মাধ্যমে জানতে পারলাম চুরি করে মাল রুপসা বাজারে এক দোকানে নিয়ে বিক্রি করেছে। বৈদ্ধ হালদারকে কেউ সহযোগিতা করেছে কি’না সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি। পুলিশ শুধু বলেছে তদন্তের স্বার্থে আপাতত এগুলো গোপন রাখতে হবে।”

বিষয়টি নিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা পঙ্কজ সরকার জয়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।

এসব বিষয়ে জানতে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর এম আল মামুনের মুঠোফোনে কল করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।